Mahakuma ruler took brother near Durbarpalleer : ঘাটালের দুর্বারপল্লী, যেখানে সমাজের প্রান্তে ঠেলে দেওয়া মহিলারা তাদের প্রতিদিনের সংগ্রামে লড়াই করেন, সেখানে এবারের ভাইফোঁটা ছিল অন্যরকম। মহকুমা শাসক এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা তাদের ফোঁটা নিতে উপস্থিত হন, যা ওই মহিলাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে ওঠে। রবিবার, এই বিশেষ ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন এবং রেডক্রস সোসাইটির উদ্যোগে। সমাজ থেকে বঞ্চিত এই মহিলারা একে একে তাদের ভাইদের কপালে ফোঁটা দেন, যা শুধু এক উৎসব নয়, বরং এক বিরল সংযোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। একান্তই পারিবারিক আনন্দের সুর যেন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দুর্বারপল্লীতে।
মহকুমা শাসক এই অনুষ্ঠানে যোগদান করে বলেন, “সমাজ থেকে বঞ্চিত এই পল্লীর মহিলাদের কাছে আসতে পেরে খুবই গর্বিত আমরা। আমরা প্রায় চার বছর ধরে এই শুভদিনে তাঁদের কাছে দৌড়ে আসি। ফোঁটা নিয়ে আরও দশটা মানুষের মতো ওঁদের সমাজের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়ার কাজ করি।” তাঁর এই বক্তব্যে পল্লীর মহিলাদের মধ্যে যেন এক নতুন আশা জাগে। এ দিন তারা অনুভব করে যে সমাজ তাদের পুরোপুরি বর্জন করেনি, বরং তাদের স্থান করে দিতে পারে তাদেরই অধিকার অর্জনের লড়াইয়ের পথ সুগম করেছে।
দুর্বারপল্লীর বাসিন্দা শীলা দাস (পরিবর্তিত নাম), এই অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বলেন, “প্রতিদিন আমরা শুনি কিভাবে আমাদের দিকে অন্য দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু আজ মহকুমা শাসক আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন, আমাদের ভাই মনে করে ফোঁটা নিয়েছেন, যা আমাদের জীবনের জন্য একটা বিরাট পাওয়া।” এই ধরণের সামাজিক সংযোগ এদের মধ্যে যেন এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জোগায়। এ এক সংযোগের গল্প, যেখানে সমাজের প্রান্তে থাকা এই নারীরা নিজেদেরকে স্বীকৃত মনে করেন এবং তাদের দুঃখ-যন্ত্রণা ভাগ করে নেন তাদের ভাইদের সঙ্গে।
এছাড়াও, মহকুমা শাসক তাদের উপহারও তুলে দেন। উপহার গ্রহণ করে মহিলারা তাদের মনের কথা বলতে থাকেন। এক গৃহহীন বৃদ্ধা জানালেন, “আমাদের জীবনে এই দিনগুলো সত্যি অমূল্য। পরিবার ছেড়ে আসা আমরা আজ আমাদের ভাইদের কাছে পেয়েছি, এ যেন এক পুনর্জন্মের মতো।”
খড়গপুরের মোহনপুরে একই রকমভাবে পরিবারের বাইরে থাকা বৃদ্ধরা এই ভাইফোঁটার আনন্দে সিক্ত হয়েছেন। এখানে পরিবার-পরিজনহীন বৃদ্ধরা বোনেদের থেকে ফোঁটা গ্রহণ করেন। সবার চোখে জল, অন্তরঙ্গ এক মিলনের সাক্ষী থাকে এই বিশেষ দিনটি। মহকুমা প্রশাসন এবং রেডক্রস সোসাইটির এই উদ্যোগ সমাজের মূলধারার মানুষদেরকে ভাবিয়ে তোলে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে সমাজের বঞ্চিত অংশের মানুষগুলিও এই ধরণীর সন্তান, তাদেরও সম্মানের অধিকার আছে।
দুর্বারপল্লীর এই মহিলাদের জন্য এই অনুষ্ঠান ছিল ভিন্ন, তাদের সামাজিক স্থান পুনর্নির্ধারণের এক পদক্ষেপ। প্রতিবছর এই ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সমাজের মূলস্রোতের মানুষরা সমাজের এই বিশেষ অংশকে স্বীকৃতি দেন, যা শুধু তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না, বরং সমাজে তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে তোলে। এই উৎসবের মাধ্যমেই মহিলারা জানাতে চান তাদের বঞ্চনা, তাদের কষ্ট। তাদের এই যন্ত্রণার কাহিনি যেন সামগ্রিকভাবে সমাজের সামনে তুলে ধরা হয়।
আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এই ধরণের উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠবে। দূরবর্তী দুর্বারপল্লীর নারীদের জীবনের কঠিন গল্পগুলো যেন সমাজের কাছে অনুপ্রেরণা হয়। মহকুমা শাসকের মতো অন্যান্য নেতারাও যদি এই উদ্যোগের অংশ হন তবে সমাজের চেহারা বদলে যাবে। শুধু ভাইফোঁটার দিনেই নয়, বছরের অন্যদিনগুলোতেও তাদের কাছে পৌঁছে গিয়ে সমাজের ভালবাসা ও সহানুভূতির মেলবন্ধন ঘটালে সমাজ সত্যিই এক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যাবে।
এই বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক অবস্থান ও আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্বারপল্লীর মহিলারা এক নতুন দিশা খুঁজে পান। এই উদ্যোগ হয়তো সাময়িক, তবে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। একদিকে সমাজের মূলধারার মানুষ এই মহিলাদের কাছে পৌঁছে গিয়ে তাদের গ্রহণ করে, অন্যদিকে দুর্বারপল্লীর মহিলারা নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করেন। এই মিলনের প্রতীকী মুহূর্তগুলিই সমাজের মূল সমস্যাগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করে।
এই ভাবে ঘাটালের দুর্বারপল্লীর ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে সামাজিক সংহতির মাধ্যমেই বঞ্চনার শিকড়গুলোকে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব। ভবিষ্যতে, এই ধরণের উদ্যোগ সমাজের এক গভীর সংস্কার প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটাতে পারে, যা সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য এক ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।