Monday, July 7, 2025
Google search engine
Homeশিল্পাঞ্চলপথ নিরাপত্তা সপ্তাহে মধ্যমগ্রাম ট্রাফিকের বিশেষ উদ্যোগ

পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে মধ্যমগ্রাম ট্রাফিকের বিশেষ উদ্যোগ

Madhyamgram Traffic’s special initiative during Road Safety Week : মধ্যমগ্রাম শহরে এবারের ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ যেন হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র প্রচারের দায়সারা অনুষ্ঠান নয়, বরং মানুষের মনে আলোড়ন তোলা এক সামাজিক আন্দোলন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় নামছেন ট্রাফিক পুলিশ, স্কুল পড়ুয়ারা, স্থানীয় ক্লাব, এনজিও, এমনকি রিকশাওয়ালা, অটোচালক ও দোকানদাররাও — সবাই একত্রে হাত মিলিয়েছেন পথ নিরাপত্তার প্রচারে। রাজ্য সরকার ঘোষিত ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ উপলক্ষে মধ্যমগ্রাম ট্রাফিক গার্ড যে যেভাবে পারছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে, আর তার ফলে শহরের রাস্তাঘাটে যেমন শৃঙ্খলা ফিরছে, তেমনই বদলাচ্ছে সাধারণ মানুষের মানসিকতাও।সপ্তাহভর এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য একটাই — “জীবন বাঁচাতে নিরাপদে চলুন”। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা, কুইজ, অঙ্কন প্রতিযোগিতা, নাটিকা ও সচেতনতা শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের মুখে যখন শোনা যাচ্ছে, “হেলমেট না পরে বাইক চালানো মানেই মৃত্যুকে ডাকা”, তখন তা শুধু একটা বাক্য নয় — বরং এক জাগরণ। মধ্যমগ্রাম স্টেশন রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, টাকি রোড কিংবা নতুনবাজার মোড় — প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা হাতে প্ল্যাকার্ড, কেউ লাউডস্পিকারে প্রচার করছেন সিটবেল্ট ও হেলমেটের গুরুত্ব, আবার কেউ নিজে দাঁড়িয়ে পথচারীদের রাস্তা পার করে দিচ্ছেন নিয়ম মেনে।

এই বিষয়ে মধ্যমগ্রাম ট্রাফিক গার্ডের ওসি সুজিত সরকার বলেন, “শুধু জরিমানা করলেই কাজ হয় না, মানুষের মনে যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে সবকিছু বৃথা। আমরা চাই সবাই নিজে থেকেই সচেতন হোক। এবার আমরা লোকজনকে বোঝাতে ‘স্মার্ট ক্যাম্পেনিং’-এর রাস্তায় হেঁটেছি — যেমন, পথনাটিকা, লাইভ ডেমো, ইমার্জেন্সি সিমুলেশন, এমনকি দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা কিছু ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলারও সুযোগ দিয়েছি।” ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় ক্লাব ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যারা সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যেতে চায় সরল ভাষায়, বাস্তব উদাহরণ দিয়ে।শুধু প্রচার নয়, এই সপ্তাহে বাস্তবিক পরিবর্তনও দেখা গেছে। মধ্যমগ্রামের বাজার এলাকায় যেখানে অটো ও রিকশা যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকত, সেখানে এখন নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড় করানোর নিয়ম চালু হয়েছে। হেলমেট না পরে বাইক চালালে শুধু জরিমানা নয়, দেওয়া হচ্ছে একঘণ্টার ট্রাফিক সেমিনারে অংশ নেওয়ার নির্দেশ। এভাবেই মানুষকে শুধু শাস্তি দিয়ে নয়, বোঝানোর মাধ্যমেও বদলানো হচ্ছে।স্থানীয় এক অটোচালক গণেশ মণ্ডল জানালেন, “আগে তো ভাবতাম, মাথায় হেলমেট চাপিয়ে কী লাভ! কিন্তু ওইদিন এক পুলিশদাদা বলল, ছোট দুর্ঘটনাতেও মাথায় আঘাত লাগলে মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে। তখন বুঝলাম, হেলমেটটা নিজের জন্যই।” এমনই অসংখ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে এই এক সপ্তাহে এসেছে নতুন উপলব্ধি। স্কুলছাত্রী দীপা পাল বলল, “আমরা এখন বাবাকে বাধ্য করি হেলমেট পরে বাইক চালাতে। কারণ স্কুলে এসে জানলাম, শুধু চালক নয়, পেছনে বসা মানুষকেও হেলমেট পরা জরুরি।”এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মধ্যমগ্রামের ‘আকাশতারা যুব সংঘ’ নামের এক স্থানীয় ক্লাবও অভিনব কাজ করেছে। তারা পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে এবং রাস্তায় পোস্টার টানিয়ে ‘মৃত্যু নয়, জীবন বেছে নিন’ বার্তা ছড়িয়েছে। এমনকি তারা দুর্ঘটনার পরে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে করতে হয়, তা নিয়ে ওয়ার্কশপও করেছে।এই পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ যে শুধুমাত্র এক সপ্তাহের গণ্ডিতে আটকে থাকবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ট্রাফিক বিভাগের তরফ থেকে জানা গেছে, আগামী দিনে এই ধরনের ক্যাম্পেইন প্রতি মাসেই একদিন করে চালানো হবে এবং স্কুল স্তরে রোড সেফটি ক্লাব গঠন করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, CCTV পর্যবেক্ষণ আরও জোরদার করা হবে এবং ই-চালান ব্যবস্থা চালু করে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আরও কড়া করা হবে।

Screenshot 2025 07 07 175451

বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর প্রায় ৫৫০০ পথ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে, যার বড় অংশই ঘটে অসচেতনতা ও ট্রাফিক নিয়ম না মানার কারণে। মধ্যমগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের এই উদ্যোগ যদি অন্য থানা বা শহরগুলো অনুকরণ করে, তাহলে গোটা রাজ্যেই রাস্তাঘাটে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা অনেকটাই কমতে পারে।এই প্রসঙ্গে রাজ্য পথ নিরাপত্তা কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “শুধু আইন দিয়ে নয়, মানুষের সঙ্গে কথা বলেই পথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। মধ্যমগ্রামের এই উদাহরণ আমাদের আশাবাদী করে তোলে।”অন্যদিকে, IRCTC থেকে সম্প্রতি এক বিশেষ ধর্মীয় ভ্রমণপথ ঘোষণা করা হয়েছে যা দেশের মধ্যে রামভক্তদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। ২৫ জুলাই ২০২৫-এ শুরু হতে চলা ‘শ্রী রামায়ণ যাত্রা’ নামের এই তীর্থপথে ১৭ দিনের মধ্যে ৩০টিরও বেশি রামতীর্থস্থান পরিদর্শনের সুযোগ মিলবে যাত্রীদের। সফদরজং রেল স্টেশন থেকে শুরু হয়ে ফের সেখানেই শেষ হবে এই যাত্রা। ভারত গৌরব ডিলাক্স এসি ট্যুরিস্ট ট্রেনে থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা—দুটি রেস্তোরাঁ, আধুনিক রান্নাঘর, সেন্সরভিত্তিক ওয়াশরুম, ফুট ম্যাসাজার, সিসিটিভি সুরক্ষা, শাওয়ার কিউবিকেল সহ পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। যাত্রাপথে অযোধ্যা, নন্দীগ্রাম, সীতামারহি, জনকপুর (নেপাল), বারাণসী, প্রয়াগরাজ, নাসিক, রামেশ্বরম-সহ বহু পবিত্র স্থান ভ্রমণ করবেন যাত্রীরা। ধর্মীয় ভক্তি ও আধ্যাত্মিক অনুরাগীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক অনন্য উদ্যোগ, যা ভারতীয় সংস্কৃতি ও রামায়ণ চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটাতে সাহায্য করবে।এই দুই ভিন্ন উদ্যোগ — একদিকে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে সচেতনতা এবং অন্যদিকে ধর্মীয় যাত্রাপথের পরিকল্পনা — উভয়ই আমাদের সমাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে স্পর্শ করেছে: জীবন রক্ষা ও আত্মার খোঁজ। মধ্যমগ্রামের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ আমাদের শেখায়, ট্রাফিক আইন মানা মানেই শুধুই নিয়ম নয় — সেটা হল নিজের ও প্রিয়জনদের প্রতি দায়িত্ব। অন্যদিকে, IRCTC-এর শ্রী রামায়ণ যাত্রা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসা এখনও গভীরভাবে জীবন্ত।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments