Low pressure is forming miking begins in coastal areas:সুন্দরবনের আকাশ কালো করে মেঘের ছায়া নামছে, সমুদ্রের গর্জন বাড়ছে, বাতাসের বেগ বেড়েছে। আর ঠিক তখনই শুরু হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, রামগঙ্গা, বকখালি-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চল জুড়ে প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, বাড়ানো হয়েছে সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা, আর মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য বারবার সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, বঙ্গোপসাগরে ফের একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আলিপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিতে পারে, আর তা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে উপকূলবর্তী এলাকায়। আর এই আশঙ্কাতেই তৎপর হয়েছে প্রশাসন।
নামখানা ব্লক অফিসের আধিকারিক প্রদীপ মণ্ডল বললেন, “সকাল থেকে আমাদের অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মানুষকে সতর্ক করার জন্য টহলদারি চলছে। মাইকিং-এর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ঘোষণা করা হচ্ছে যেন কেউ সমুদ্রে মাছ ধরতে না যান। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় ক্লাব ও গ্রামপ্রধানদেরও সঙ্গে নিয়েই সতর্কতার প্রচার চালানো হচ্ছে।” সাগর থানার ওসি বিকাশ মণ্ডল জানিয়েছেন, “নিম্নচাপের সতর্কতায় আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বিশেষ করে পুণ্যার্থী, পর্যটক ও স্থানীয় মানুষদের উপকূলের কাছে না যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।”
বকখালির হোটেল ব্যবসায়ী অজয় দাসের কথায়, “এই সময়টায় পর্যটকরা সাধারণত কম আসেন, তবে যারা এসেছেন, তাঁদেরকেও বলা হচ্ছে যেন সমুদ্রে বেশি দূর না নামেন। নিরাপত্তার জন্য সৈকতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
সাধারণ মানুষও এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা কৃষ্ণা হালদার বললেন, “প্রতিবার এই সময়ে এমন ঝড়-বৃষ্টি হয়, কিন্তু এবার মাইকিং শুনে আরও বেশি ভয় করছে। মাছ ধরা বন্ধ, বাজারে সবজির দাম বাড়ছে, আমাদের ঘরে যা আছে তাই নিয়ে টানাটানি পড়ছে।”
অন্যদিকে, সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা বেশ কষ্টে আছেন। নামখানার মৎস্যজীবী সমিতির সম্পাদক তাপস জানা বললেন, “মাছ ধরতে না পারলে আমাদের সংসার চলে না। প্রশাসন থেকে বারবার বলছে না যেতে, তাই যেতে পারছি না। কিন্তু উপার্জন বন্ধ হলে তো সংসারও বন্ধ। এই সময় সরকারের থেকে সাহায্য পাওয়া খুব দরকার।”
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী কয়েক দিনে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলা গুলিতে ৭০-৮০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সমুদ্রের ঢেউ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উঁচু হতে পারে। তাই মৎস্যজীবীদের আগামী ৩ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে। এমনকি গঙ্গাসাগর, বকখালি, মন্দারমণি-সহ সমস্ত সৈকত এলাকায় প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি খারাপ হলে প্রয়োজনে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুল-কলেজগুলিকে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির হিসেবে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এছাড়াও, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জলের সরবরাহ, খাদ্যদ্রব্য মজুতের বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সমন্বয় করে চলেছে।
স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও কিছু মানুষ আবার পরিস্থিতি নিয়ে অভ্যস্ত। গঙ্গাসাগরের বাসিন্দা শ্যামল রায় বললেন, “প্রতিবছর এমন হয়। আমরা জানি কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়। তবে প্রশাসনের সতর্কতা মানা উচিত, তাই আমরা খুব বেশি দূরে যাচ্ছি না।”
এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগ আরও ঘন ঘন হতে পারে। তাই শুধু এখন নয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য শক্তিশালী বাঁধ, পর্যাপ্ত ত্রাণ ব্যবস্থা এবং বিকল্প জীবিকা উন্নয়নের দিকেও নজর দিতে হবে।
উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন প্রশাসনের সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য ও পুনর্বাসন প্রকল্পের দাবিও জানিয়েছেন, যাতে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর জীবনে কিছুটা স্বস্তি আসে।