Low pressure area expected in North Bay of Bengal, warning issued in Bengal:বর্ষার মরশুমে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের প্রকোপ নতুন কিছু নয়। বঙ্গোপসাগর বরাবরই এই ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তনের কেন্দ্রস্থল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর তীব্রতা ও প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে। প্রায়ই দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে এবং তা সরাসরি আছড়ে পড়ছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও আন্দামান উপকূলে। এতে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি, বিশেষত কৃষি ও মৎস্যজীবী সমাজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারে আবারও উত্তর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা ইতিমধ্যেই বাংলার জনজীবনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও উত্তর উড়িষ্যা উপকূলে একটি নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহবিদরা জানিয়েছেন, মায়ানমার ও উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে উড়িষ্যার দিকে সরে যাবে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাগরে নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।এই নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র হবে উত্তাল, তাই উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের জন্য ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই সময় সমুদ্রে গেলে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রবল।রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। কলকাতা সহ হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াও বইবে বলে পূর্বাভাস। অপরদিকে, উত্তরবঙ্গের আটটি জেলাতেও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬৩ থেকে ৯৮ শতাংশ। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে।
আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা প্রকাশের পরেই রাজ্য সরকার প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বিশেষত মৎস্যজীবীদের সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং এবং সরকারি নির্দেশিকা প্রচার করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনগুলিকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি উপকূলীয় জেলায় পর্যাপ্ত উদ্ধারকর্মী এবং ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো যায়।উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে না যেতে পারায় তাদের দৈনন্দিন জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক মৎস্যজীবী জানালেন, “আমরা প্রায় সপ্তাহে দু’তিন দিন সমুদ্রে না গেলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু এই সময় ঝুঁকি নিলে প্রাণের ভয় আছে। তাই সরকারের ত্রাণ সহযোগিতা খুব দরকার।”অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের কৃষকরা আবার অন্য এক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জমির ধান ও শাকসবজি নষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে। কলকাতার সাধারণ মানুষও জলাবদ্ধতার আতঙ্কে দিন গুনছে। গত কয়েক বছরে টানা বৃষ্টিতে শহরের একাধিক এলাকায় জল জমে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল।