London’s busiest Heathrow airport closed due to fire : লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসাবে পরিচিত, আজ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের জেরে পুরো বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে। শুক্রবার ভোরবেলা ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে হিথরো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। লন্ডন শহরের দক্ষিণ এবং মধ্য অংশের বিশাল এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। স্কটিশ অ্যান্ড সাদার্ন ইলেকট্রিসিটি নেটওয়ার্ক (SSE) থেকে জানানো হয়েছে, তাদের একটি সাবস্টেশনে আগুন লেগে যাওয়ার কারণেই এই বিপত্তি ঘটে।
এই অগ্নিকাণ্ড এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন এবং ৭০ জন দমকলকর্মী পাঠানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। প্রায় ১৫০ জনকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে ততক্ষণে বড়সড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ডুবে গিয়েছে লন্ডনের ৫ হাজারেরও বেশি বাড়ি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে হিথরো বিমানবন্দরে। বিদ্যুতের অভাবে বিমানবন্দরের সমস্ত প্রযুক্তিগত এবং পরিচালন ব্যবস্থাও থমকে যায়।
অস্থায়ী সিদ্ধান্ত হিসাবে শুক্রবার সারাদিনের জন্য হিথরো বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সমস্ত উড়ান বাতিল করা হয়, যার সংখ্যা প্রায় ১৩৫১টি। বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ভারত থেকে লন্ডনগামী সমস্ত ফ্লাইট শুক্রবারের জন্য বাতিল করেছে। এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে বহু যাত্রী এই বিমানবন্দরের উপর নির্ভরশীল। ফলে যাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ।
বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। বিমানবন্দরে আটকে থাকা যাত্রীদের অভিযোগ, কোনো আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক যাত্রী জানান, “সকাল ৭টায় ফ্লাইট ছিল, কিন্তু বিমানবন্দরে এসে জানতে পারি সমস্ত ফ্লাইট বাতিল। কেউই সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। পুরো ব্যাপারটা বিশৃঙ্খল।”
বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, এত বড় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কীভাবে একটি সাবস্টেশনের উপর এতটাই নির্ভরশীল থাকতে পারে যে, একটি অগ্নিকাণ্ডই পুরো ব্যবস্থাকে অচল করে দিল? এই ঘটনা হিথরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে দিয়েছে।
ব্রিটেনের পরিবহন সচিব হেইদি আলেকজান্ডার জানান, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জরুরি পরিষেবা বিভাগের কর্মীরা দিনরাত এক করে কাজ করছেন।” তবে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
লন্ডনের স্থানীয় বাসিন্দারাও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বহু মানুষ অফিসের কাজ বন্ধ রেখে বাড়িতে অপেক্ষা করছেন বিদ্যুৎ ফেরার আশায়। দক্ষিণ লন্ডনের একটি এলাকায় বাস করেন এমন একজন ব্যক্তি জানান, “গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে আছে। আমাদের ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট নেই, মোবাইল চার্জ ফুরিয়ে এসেছে। বিদ্যুৎ কবে ফিরবে কেউ জানে না।”
বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম হিথরো। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন। এমন পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু লন্ডন নয়, গোটা বিশ্বের বিমান পরিবহণ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়েছে। ফ্লাইট বাতিল এবং ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে অন্যান্য বিমানবন্দরেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ বিদ্যুৎ সংস্থার অব্যবস্থাপনার জন্য দোষারোপ করছেন, আবার কেউ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির দাবি তুলছেন। টুইটারে একজন লিখেছেন, “হিথরো বিমানবন্দর এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে? এটা লজ্জাজনক!”
বিদ্যুৎ সরবরাহ ফেরানোর জন্য SSE-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দমকলবাহিনীর অনুমতি পেলেই তারা মেরামতির কাজ শুরু করবে। তবে সেই কাজ শেষ হতে ঠিক কতক্ষণ সময় লাগবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
এই ঘটনাটি হিথরো বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে, তার জন্য বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং আরও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে আরও বড় কোনো বিপর্যয় এড়াতে হিথরো বিমানবন্দর কতটা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে? যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।