Live Ministers Meeting Blackout!:-ঘটা করে আয়োজন, ফুলে সাজানো মঞ্চ, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন… আর ঠিক তখনই হঠাৎ চারিদিকে অন্ধকার। বিদ্যুৎমন্ত্রী উপস্থিত, সাংবাদিকরা ক্যামেরা তাক করে দাঁড়িয়ে, দর্শকরা হাততালির জন্য প্রস্তুত, আর ঠিক সেই মুহূর্তে সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কারণ, বন্ধ হয়ে গেল বিদ্যুৎ! চমকে উঠলেন সবাই, কারণ এমন ঘটনা ঘটে গেল যেখানে সেটি একেবারে অসম্ভব ছিল—উত্তরপ্রদেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী একে শর্মার সভাতেই বিদ্যুৎ চলে গেল! মোরাদাবাদের সেই অনুষ্ঠানে, যেখানে একটি নতুন ৫ডি থিয়েটারের উদ্বোধন চলছিল, সেখানে মন্ত্রী যখন ফিতে কাটতে যাচ্ছিলেন, তখনই আচমকা ব্ল্যাকআউট। কয়েক সেকেন্ড নয়, পুরো ১০ মিনিট ধরে বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ। আর এতেই শুরু হয় বিভ্রাট, চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা সভামঞ্চে।এই অপ্রত্যাশিত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতায় একদিকে যেমন বিপাকে পড়েন মন্ত্রী, অন্যদিকে মুখ রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয় আয়োজকদেরও। অনুষ্ঠানস্থলে তখন প্রচুর দর্শক ও অতিথি। অনেকে তো ভাবেন হয়তো টেকনিক্যাল ডেমো বা থিয়েটারের কোনও বিশেষ অংশ শুরু হচ্ছে, কিন্তু একটু পরেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে ছড়িয়ে পড়ে হইচই। পেছনে থাকা জেনারেটর তখনো চালু হয়নি, কর্মীরা দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করছেন, কেউ টর্চ জ্বালাচ্ছেন, কেউ মোবাইলের আলো দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। আর সেই সময়েই দেখা যায়, অন্ধকারের মধ্যেই বিদ্যুৎমন্ত্রী এ কে শর্মা একরকম রাগ সামলে দাঁড়িয়ে আছেন মঞ্চে—তাঁর মুখে ছিল বিস্ময়, ক্ষোভ আর অপ্রস্তুতির মিশ্র অভিব্যক্তি।

ঘটনার পর পরই তৎপরতার সঙ্গে কাজে নামেন বিদ্যুৎ দপ্তরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইশা দুহান। তিনি দ্রুত বিকল্প বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন, অনুষ্ঠান কিছুটা পরে হলেও আবার শুরু হয়। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী যেখানে নিজে উপস্থিত, সেখানে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া নিছক একটি দুর্ঘটনা নয়—এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অব্যবস্থার প্রকাশ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।মন্ত্রী নিজেও ছিলেন ক্ষুব্ধ। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি এই ঘটনা একেবারেই মেনে নিতে পারছি না। যেখানে বিদ্যুৎ দপ্তর নিজের উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিতে এসেছে, সেখানেই বিদ্যুৎ না থাকা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। মানুষের কাছে আমরা কী বার্তা দিচ্ছি?”ঘটনার পরপরই মন্ত্রী নির্দেশ দেন তদন্তের। রাতে দপ্তরের তরফে পাঁচজন আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতি ও নজরদারির অভাবের অভিযোগ আনা হয়েছে। যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁরা মূলত ওই অঞ্চলের ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওভারলোডিং বা অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে কেন আগে থেকে এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে প্রশাসনের মাথায়।
ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে সোমবার সকালে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয় বিদ্যুৎ ভবনে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী নিজে, সচিব, এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকরা। সেখানে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়—“জনগণের টাকায় চলা কোনও পরিষেবায় এই ধরনের গাফিলতি চলবে না।”স্থানীয়রা অবশ্য এই ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে নিচু গলায় বলতে শুরু করেছেন, “আমরা তো রোজ এই অন্ধকারেই থাকি, মন্ত্রী একবার সেটা নিজের চোখে দেখলেন।” কেউ কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “যেখানে বিদ্যুৎমন্ত্রী থাকেন, সেখানেই যদি আলো না থাকে, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হতে পারে!”রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনাকে ঘিরে জলঘোলা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এই ঘটনাকে শাসকের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরেছে। এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “এটাই আসল উন্নয়ন! আজ মন্ত্রী থাকাতে খবর হয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎহীন দিন কাটাচ্ছেন, সেটা কেউ দেখে না।”তবে এই ঘটনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিল বিদ্যুৎ পরিষেবার ভবিষ্যৎ নিয়ে। যেমন:

- এমন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে জেনারেটর সংযোগ প্রস্তুত রাখা হয়নি কেন?
- ওভারলোডিংয়ের আশঙ্কা থাকলে তা নিয়ে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন?
- ব্ল্যাকআউটের সময় কর্মীরা কেন এতটা দিশেহারা হয়ে পড়লেন?
- এই প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যতের তদন্ত ও রিপোর্ট, কিন্তু আপাতত যা স্পষ্ট তা হল, এই ঘটনা বিদ্যুৎ দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এবং একধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে প্রশাসনের মধ্যে।
- তবে মন্ত্রী একে শর্মা আশ্বস্ত করেছেন, “এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কোনওভাবেই এমন দুর্বলতা মেনে নেওয়া যাবে না। প্রতিটি এলাকায় পাওয়ার ব্যাকআপ, ওভারলোড রেগুলেশন ও প্রযুক্তি ভিত্তিক নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।”
- তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে—“তদন্ত আর সাসপেনশন দিয়ে কি সত্যিই পরিবর্তন আসবে? না কি শুধু অনুষ্ঠান শেষ হলেই আলো ফেরত, আর পরদিনই আবার আগের মতোই অন্ধকার?”