Life in Purulia is miserable due to the sweltering heat:পুরুলিয়া জেলায় এবছরের বৈশাখ যেন একেবারেই অন্যরকম হয়ে উঠেছে—না আছে তেমন ঝলসানো রোদের দাপট, না আছে বর্ষার মতো হু হু করে নামা বৃষ্টি, কিন্তু আছে একরাশ গুমট ভ্যাপসা গরম, যা গোটা জেলার মানুষকে কার্যত নাকাল করে তুলেছে। সকালবেলায় একটু রোদ, দুপুরে ঘেমো মেঘে আকাশ ঢেকে যাচ্ছে, আবার হঠাৎ করে রোদের ঝলক, সঙ্গে বন্ধ হাওয়া, সব মিলিয়ে বাতাসে এমন এক ঘন অস্বস্তি ছড়িয়েছে যে ঘরে-বাইরে কোথাও যেন শান্তি নেই। বিশেষ করে দুপুরের দিকে তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে, তখন বাইরে বেরোতে হচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউই সাহস পাচ্ছেন না। শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলো—পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুর, বাগমুন্ডি, ঝালদা—সবখানেই মানুষ যেন একটু ছায়ার খোঁজে ঘুরছে। এক দোকানদার বললেন, “বিকেল পাঁচটার আগে দোকানের সামনে কেউ দাঁড়াতে চাইছে না, রোদের তাপ নেই বললেও, এই ঘাম ধরা গরমে শরীর একেবারে কাহিল হয়ে যাচ্ছে।” হাসপাতালগুলিতে দেখা দিচ্ছে ডিহাইড্রেশন, ঘাম বসা, ঘনঘন মাথা ঘোরা-সহ নানা গরমের রোগের উপসর্গ। পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, “এই ধরনের আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় শিশু, বয়স্ক আর যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে—তাদের শরীর খুব দ্রুত জলশূন্য হয়ে পড়ে, তাই বেশি করে জল, লেবু জল, ইলেক্ট্রোলাইট খাওয়া জরুরি।” শুধু শহরের কথা বললে ভুল হবে, গ্রামের মানুষও সমস্যায় পড়ছেন। কিষাণরা বলছেন, “এই সময়টাতে আমরা ভরসা করি
কালবৈশাখীর উপর, একটু বৃষ্টি হলে জমিতে নেমে কাজ করা যেত, কিন্তু এই গুমট আবহাওয়ায় কষ্টের শেষ নেই।” কিছুদিন আগেও এক পশলা কালবৈশাখী এসে সাময়িক স্বস্তি দিলেও, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার রোদের খেলা শুরু হতেই মানুষের কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে। কেউ কেউ রাস্তার ধারে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন, কেউ বা গামছা মাথায় জড়িয়ে রোদ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন, আবার ছোট ছোট দোকানে ঠান্ডা জল বা লেবু জল বিক্রি হচ্ছে হাত গরমে। পরিবেশবিদদের মতে, এই ভ্যাপসা গরম শুধু তাপমাত্রার জন্য নয়, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার ফলেই এমন অসহনীয় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। শহরের আকাশে কালো মেঘ জমলেও বৃষ্টি নামছে না, বজ্রপাতের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে দূর থেকে, কিন্তু আশানুরূপ স্বস্তি মেলে না। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টি হতে পারে, তবে সেটা ঘন ঘন নয়, বরং বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন অংশে কালবৈশাখীর প্রবেশ ঘটতে পারে। ফলে এখনই বড় স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পুরুলিয়ার এক স্কুলশিক্ষক বললেন, “শিক্ষার্থীদের অবস্থা খুব খারাপ, স্কুলে বসে মন দিতে পারছে না, সবাই শুধু জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে যদি একটা হাওয়ার দমক আসে।” গরমের প্রভাব পড়েছে পশু-পাখির জীবনেও—গবাদি পশুরা ঘেমে হাঁসফাঁস করছে, জলাশয় শুকিয়ে যেতে বসেছে, ফলে পাখিদের দেখা যাচ্ছে জলসন্ধানে ঘোরাফেরা করতে। পুরুলিয়ার পশু চিকিৎসালয়ের এক কর্মী বলেন, “এই সময়ে গরু-বাছুরদেরও অনেক যত্ন নিতে হচ্ছে, জল যেন পর্যাপ্ত থাকে তা দেখছি, নাহলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।” সব মিলিয়ে, পুরুলিয়া যেন এখন এক অস্থির প্রতীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে—এক পশলা বৃষ্টির প্রতীক্ষা। আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণ সাধারণ মানুষ থেকে কৃষক, ছাত্র থেকে ব্যবসায়ী—সবার জীবনেই অনিশ্চয়তা এনে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা হচ্ছে, যেমন জলবাহিত রোগ রোধে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) বিতরণ, তাপপ্রবাহে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় তা নিয়ে প্রচার, কিন্তু সব কিছুর কেন্দ্রে রয়েছে একটাই চাওয়া—”আকাশটা যদি একটু ফেটে জল নামে, তাহলে বাঁচা যায়!” এক বৃদ্ধা পথচারি বলে উঠলেন, “বছরের এই সময়টায় এমন গরম কদিনই বা থাকত, কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে গরমটাই সারাবছর লেগে থাকবে!” পরিবেশবিদরা বারবার বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমন অস্বাভাবিক আবহাওয়া, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে থাকা মানুষ এই বড় বড় কথা বোঝেন না, তারা শুধু বুঝতে পারছেন, দিনের পর দিন গরমে হাঁসফাঁস করে জীবন বাঁচানোটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখন সবাই একসুরে বলছেন, “এক পশলা বৃষ্টি হোক, এই গুমটটা কাটুক, প্রাণটা বাঁচুক।