‘Liar Shuvendu’, Kajol under attack: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের ঝড় উঠল। একদিকে অনুব্রত মণ্ডল এবং বীরভূম থানার আইসির কথোপকথনের অডিও ফাঁস, আর তারই সূত্র ধরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তোপ — অন্যদিকে পাল্টা আক্রমণে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের বিস্ফোরক মন্তব্য, “শুভেন্দুর ১০০ কথায় ৯৯টাই মিথ্যে!” এই এক লাইনেই ফের রাজ্যের রাজনীতির পারদ চড়িয়ে দিলেন তৃণমূলের দাপুটে এই নেতা। অনুব্রতের অডিও ভাইরাল হওয়ার পরে শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তোলেন এবং সরাসরি কাজল শেখের নাম উচ্চারণ করেন, তাতে কাজলের তরফ থেকেও প্রতিক্রিয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। মঙ্গলবার রামপুরহাটে তৃণমূল বিধায়ক ও জেলা সভাপতি আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন কাজল শেখ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি স্পষ্ট জানান, “আমি কিছু বলছি না, কারণ তদন্ত চলছে। রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি দেখছে। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর মুখে এই বিষয়ে কোনও সত্যতা নেই। উনি একজন মিথ্যাবাদী।” শুধু তাই নয়, কাজল শেখ আরও বলেন, “কোর্টে গিয়ে প্রমাণ করুন। মিডিয়ার সামনে বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। সত্যি থাকলে আদালতে দিন, দেখব কে মিথ্যে বলছে।” এই প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ অনুব্রতের অডিও ভাইরাল হওয়ার পরে বিজেপি শিবিরে যেমন উল্লাস, তেমনি তৃণমূল শিবিরে চাপা উত্তেজনা। সেই উত্তেজনার মাঝেই কাজলের মুখে এই স্পষ্ট আক্রমণ যেন ফের লড়াইয়ে আগুন ঢালল। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীও পাল্টা চুপ নন। তিনি বারবার দাবি করেছেন, “এই অডিও ক্লিপ রাজ্য প্রশাসনের ভেতরের সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছে।
অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে পুলিশের এই কথোপকথন প্রমাণ করে, তৃণমূল প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোটে প্রভাব ফেলেছে।” তবে এসবের মাঝেও প্রশ্ন উঠছে, এই অডিও ক্লিপ কি সত্যিই প্রমাণযোগ্য? প্রযুক্তিগতভাবে কি এটি যাচাই করা হয়েছে? এ বিষয়ে এখনো সরকারিভাবে কোনও তদন্তের ফলাফল সামনে আসেনি। আইনজীবী ও সাংবিধানিক বিশ্লেষক অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত বলছেন, “কোনও অডিও ক্লিপ আদালতে গ্রাহ্য হবে কি না, তা নির্ভর করে সেই ক্লিপের ফরেনসিক রিপোর্টের উপর। ক্লিপটি যদি টেম্পার্ড না হয়, তবে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হতে পারে।” বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডল বরাবরই প্রভাবশালী চরিত্র। তাঁর বিরুদ্ধে বহুবার অভিযোগ উঠেছে, তবে তৃণমূলের স্থানীয় স্তরে তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে তাঁর নাম জড়িয়ে কোনও নতুন বিতর্ক মানেই তৃণমূলের ওপর চাপ। এবারের ঘটনায় সেই চাপ সামলাতে দল কী কৌশল নেবে, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি জানিয়েছেন, “কাজল শেখের এই বক্তব্য শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, এটি তৃণমূলের কৌশলগত রণনীতি। শুভেন্দুকে ব্যাকফুটে ফেলতে তৃণমূল এখন আক্রমণেই জোর দিচ্ছে।” এই বিতর্ক সাধারণ মানুষের মনেও প্রভাব ফেলছে। রামপুরহাটের স্থানীয় শিক্ষক সুধাংশু পাত্র বলেন, “আমরা তো সত্যটা জানতে চাই। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, শাস্তি হোক।

কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা শুধু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।” সাধারণ মানুষের এই মনোভাবই প্রমাণ করে, রাজনীতি যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, সত্যের দাবি কিন্তু দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই অডিও-কাণ্ডের তদন্ত কোন পথে এগোয় এবং আদৌ কোনও নিরপেক্ষ তথ্য প্রকাশ্যে আসে কি না। তবে এতটুকু স্পষ্ট – বীরভূম এখন শুধু অনুব্রতের জন্য নয়, শুভেন্দু বনাম কাজল শেখের নতুন রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্যও নজরে। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধরণের বিতর্ক রাজনৈতিক ফায়দা তোলার দিক থেকে কোনও দলই হাতছাড়া করতে চাইবে না। এখন দেখার বিষয়, তৃণমূল কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং শুভেন্দু পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়। এদিকে সিএসডিএল-এর রাজনৈতিক ট্র্যাকিং রিপোর্ট অনুযায়ী, বীরভূম জেলায় তৃণমূলের জনপ্রিয়তা এখনো বেশ শক্তিশালী থাকলেও, অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে কিছুটা ফাটল ধরেছে নিচুতলার সংগঠনে। এই পরিস্থিতিতে কাজল শেখ যে ভাবে নিজেকে আগ্রাসী মুখ হিসেবে তুলে ধরছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে তিনি নিজেকে ‘নতুন অনুব্রত’ হিসেবেই প্রস্তুত করছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, রাজনীতির ভাষা আবারও বদলাচ্ছে — অভিযোগের উত্তর আর কৌশলে নয়, সরাসরি আক্রমণেই দিতে চাইছে তৃণমূল। আর সেই সুরেই ‘মিথ্যেবাদী’ তকমা তুলে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন কাজল শেখ।