Sunday, April 13, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যদৌড় হোক বাঁচার পক্ষে

দৌড় হোক বাঁচার পক্ষে

Let’s run for survival:রাণীগঞ্জ শহরের বাতাস যেন একটু বদলে গিয়েছে, কারণ এখানে এবার কেবল ঘাম, ক্লান্তি বা দৌড় প্রতিযোগিতা নয়—বরং শুরু হতে চলেছে এক প্রাণবন্ত বার্তা, এক সামাজিক উদ্যোগ, এক মানবিক আহ্বান যার নাম “দৌড় হোক বাঁচার পক্ষে”। ২০২৫ সালের ১৩ই এপ্রিল, ভোর ৬টা বাজতেই রাণীগঞ্জের শিশুবাগান ময়দান পরিণত হবে মানবতার এক বিশাল মঞ্চে, যেখানে শহরের মানুষ দৌড়াবে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে, সুস্থ জীবনের পক্ষে। এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা “ফিরে দেখা প্রতীতি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি”। তারা এবার দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করছে রাণীগঞ্জ ম্যারাথন ২০২৫, যার মূল বার্তা “STEP UP AGAINST CANCER”

run big 20180728135724

এক সময় ক্যান্সার শব্দটা শুনলেই মানুষের বুক কেঁপে উঠত, কারণ তখন এই রোগ মানেই ছিল ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। কিন্তু সময় বদলেছে, প্রযুক্তি এগিয়েছে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় এসেছে বিস্ময়কর অগ্রগতি। আজ একটু সচেতনতা, নিয়মিত জীবনযাপন আর সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই ক্যান্সার রোখা সম্ভব। এই সত্যটাই তুলে ধরতেই রাণীগঞ্জের এই মহৎ উদ্যোগ। ম্যারাথনে অংশ নিতে পারবেন যে কেউ—১৫ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো পুরুষ বা মহিলা। নাম নথিভুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট লিংকে গিয়েই বা QR কোড স্ক্যান করেই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। যারা দৌড় সম্পূর্ণ করবেন, তাঁদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে সম্মানজনক মেডেল, ক্যাপ আর একখানা টিশার্ট—যা কেবল স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং এক সচেতনতামূলক পরিচয়। প্রথম তিনজন বিজয়ী পাবেন আকর্ষণীয় আর্থিক পুরস্কার, যা এই প্রতিযোগিতাকে আরও উৎসাহব্যঞ্জক করে তুলছে। শিশুদের খেলার মাঠ, সেই প্রিয় শিশুবাগান ময়দান থেকেই ম্যারাথনের সূচনা হবে এবং নির্দিষ্ট রুট ঘুরে পুনরায় ওই মাঠেই সমাপ্তি ঘটবে।

1645082969 new project 2022 02 17t125833 907

শুধু দৌড় নয়, এই আয়োজন শহরের মানসিকতা বদলানোর একটা প্রয়াস। একজন অংশগ্রহণকারী, রাণীগঞ্জের কলেজ পড়ুয়া রূপসা ঘোষ জানালেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই দৌড় ভালবাসি, কিন্তু এবার এই দৌড়ের পেছনে একটা উদ্দেশ্য জেনেই সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত। আমার কাকিমা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন, জানি এই রোগ কতটা যন্ত্রণাদায়ক। আমি চাই সবাই সচেতন হোক।” আরেকজন, স্থানীয় শিক্ষক সুমন পাত্র বললেন, “ক্যান্সার আজ শুধু বড় শহরের নয়, আমাদের ছোট শহরেও এসে পড়ছে। এই দৌড় যদি কাউকে সচেতন করে তোলে, সেটাই হবে আমাদের জয়।” “ফিরে দেখা প্রতীতি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি”র পক্ষ থেকে সংগঠনের সম্পাদক মল্লিকা রায় বললেন, “গতবছর প্রথমবার রাণীগঞ্জ ম্যারাথন করেছিলাম, সাড়া ছিল অভাবনীয়।

এবার দ্বিতীয়বার, বার্তাটা আরও জোরালোভাবে দিতে চাই—সবাই মিলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসুন। এই দৌড় কেবল শরীর নয়, মনকেও জাগিয়ে তুলবে।” শহরের হাসপাতালগুলির তরফ থেকেও এই উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। রাণীগঞ্জের চিকিৎসক ডা. অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে সচেতনতা। প্রতিটি মানুষ যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটু সতর্ক হয়, জীবনযাপন নিয়মিত করে, তাহলে বহু রোগের মতো ক্যান্সারও অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। এই ম্যারাথনের মাধ্যমে সে বার্তাই ছড়িয়ে পড়ুক।” ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগগুলি আজ ভারতের মতো দেশে এক নীরব মহামারির আকার নিয়েছে। তামাক, অ্যালকোহল, দূষণ, অনিয়মিত জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসই এর অন্যতম কারণ।

run 3 20210602103130

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারতে প্রায় ১৩ লক্ষ নতুন ক্যান্সার রোগী ধরা পড়েন এবং এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেরিতে ধরা পড়ায় চিকিৎসা কঠিন হয়ে ওঠে। সেই জায়গা থেকেই রাণীগঞ্জের মতো শহরে এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়। এই দৌড় শহরবাসীর মধ্যে একটা শক্তিশালী বার্তা দেবে যে স্বাস্থ্য মানে শুধু ওষুধ খাওয়া নয়, বরং চলাফেরা, শরীরচর্চা, আত্মবিশ্বাস আর সবচেয়ে বড় কথা—সচেতনতা। শুধু ক্যান্সার নয়, এই দৌড়ে আমরা দৌড়াবো নিজের অলসতাকে হারাতে, দৌড়াবো আত্মবিশ্বাসের পক্ষে, দৌড়াবো সুস্থ জীবনের আশায়। পুরো আয়োজন ঘিরে ইতিমধ্যেই শহরে একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। স্কুল-কলেজ, ক্লাব, স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ—সবাই নিজের মতো করে এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন। কেউ পোস্টার করছেন, কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন, কেউ আবার অনুশীলনে নেমে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন, “এটা শুধু ম্যারাথন নয়, বরং এ এক সামাজিক আন্দোলন।” রানীগঞ্জের মানুষদের এই অংশগ্রহণই বলে দিচ্ছে—মানুষ এখনও ভালো কিছুর পাশে দাঁড়াতে জানে, যেখানে শুধুই দৌড় নয়, একটা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা রয়েছে। হয়তো এভাবেই একদিন এমন একটা সময় আসবে, যখন ক্যান্সারকে আমরা ভয় নয়, প্রতিরোধ করতে শিখে যাবো। আর সেই শিক্ষার যাত্রা শুরু হচ্ছে ১৩ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকেই, শিশুবাগান ময়দানে এক ঐতিহাসিক দৌড়ের মাধ্যমে। তাহলে চলুন, হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে আমরা সবাই বলি—“দৌড় হোক বাঁচার পক্ষে!”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments