Wednesday, July 9, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসকাঁথিতে বামেদের বনধের ধর্মঘট, রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ

কাঁথিতে বামেদের বনধের ধর্মঘট, রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ

Leftists hold strike in contai protest by blocking roads:আজ কাঁথি শহরের সকালটা অন্যরকম ছিল। দোকানপাট ছিল অর্ধেক বন্ধ, বাসচালকরা অনিশ্চিত, রাস্তায় বেরোলে কোথাও না কোথাও দেখা মিলছে লাল পতাকা হাতে বাম কর্মীদের মিছিল। কারণ? বামফ্রন্টের ডাকা ১২ ঘণ্টার রাজ্যব্যাপী বনধ। কিন্তু শুধু বনধ নয়, কাঁথির মতো জায়গায় তা একপ্রকার রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। বামেদের দাবি ছিল, বর্তমান রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ও মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কৃষকদের দুর্দশা ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো। সেই প্রতিবাদই আজ সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় ফুটে উঠেছে বাম কর্মী-সমর্থকদের অবরোধ, মিছিল ও স্লোগানের মাধ্যমে। সকাল থেকেই কাঁথি শহরের একাধিক সরকারি দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে বামফ্রন্টের কর্মীরা। অভিযোগ, পুলিশ সেই বিক্ষোভ সরাতে গেলে প্রথমে বচসা এবং পরে তা ধ্বস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। বিক্ষোভরতদের মধ্যে অন্যতম, হিমাংশু দাস-সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর এখানেই জ্বলে ওঠে আগুন। অবিলম্বে ওই চারজনকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কাঁথি থানার সামনে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করে বামপন্থীরা। স্থানীয় সিপিএম নেত্রী শ্যামলী মাইতি বলেন, “বাম আন্দোলন মানেই পুলিশি দমন! গ্রেফতার করে দমন করা যায় না আন্দোলন। আমরা আবারও পথে নামব।” শুধু শহরের মধ্যেই নয়, ১১৬বি জাতীয় সড়কের উপরও দেখা যায় বামফ্রন্টের রোড অবরোধ। যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়লেও, আন্দোলনকারীরা

জানান, “জনগণের দুর্ভোগ হলেও সরকারের চোখ খুলতেই হবে। এই প্রতিবাদ জনগণের স্বার্থেই।” পুলিশ একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এই রকম উত্তেজনার আবহে কিছু সময়ের জন্য কাঁথি শহরের যানবাহন ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরিবহন ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যায়। দোকানপাটও পুরোপুরি খোলেনি অনেক জায়গায়। অটোচালক মহম্মদ ফিরোজ জানান, “যাত্রী নেই, পুলিশ বলছে চলতে, বামেরা বলছে দাঁড়াও—আমরা যাই কোথায়?” এমন অবস্থায় সাধারন মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ বলছেন, “বামেদের প্রতিবাদ ঠিক, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদল দরকার।” আবার কেউ বলছেন, “আমরা তো রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছি অফিস যাওয়ার জন্য, কার বনধ, কে প্রতিবাদ করছে বুঝতেই পারছি না।” অন্যদিকে, এই একই দিনে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়াতেও সকাল সকাল শুরু হয়ে যায় ট্রেন অবরোধ। হলদিয়া বন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করে বাম সমর্থকরা। ‘গণশক্তি’ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, রেল পুলিশের সঙ্গে সেখানে প্রচণ্ড বচসা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশই আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। শুধু ট্রেন নয়, হলদিয়ায় বাসও আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে ধর্মঘটীরা। যদিও পুলিস তাদের সরিয়ে দেয়। তবে এতে বামদের মনোবল কমেনি। স্থানীয় বাম নেতৃত্বের দাবি, “ধর্মঘট সফল হয়েছে। রাজ্যজুড়ে মানুষ আজ তাদের ক্ষোভের ভাষা জানিয়েছেন। পুলিশ দিয়ে দমন করা গেলেও মানুষের অভিমত আটকানো যাবে না।” রাজনীতির মহলে এই বনধকে ঘিরে নানা জল্পনা। অনেকেই মনে করছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বনধগুলির মাধ্যমে বামফ্রন্ট ফের মাটিতে নামার চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন হারানো বাম নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া নয়, রাজনীতির আসল লড়াইটা মাটিতে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে। আর এই বনধ সেই মাটিতে ফেরার চেষ্টার প্রথম ধাপ। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, “বামেদের আন্দোলনের ধরন অনেকটাই পুরনো দিনের। নতুন প্রজন্ম বা শহুরে মধ্যবিত্ত এতে খুব একটা সাড়া দেবে না।” তবে বাম নেতৃত্ব তা মানতে নারাজ। বাম নেতা স্বপন ভৌমিক বলেন, “আমরা মানুষের সমস্যা নিয়ে পথে নেমেছি। যদি পুলিশ মারধর করে, গ্রেফতার করে, তাও আমরা থামব না।” অন্যদিকে শাসক দলের অভিযোগ, “বামেদের বনধ মানেই জনজীবনকে দুর্ভোগে ফেলা। আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে অশান্তি সৃষ্টি করা এদের পুরনো অভ্যাস।” প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন, এই বনধ আদৌ কতটা রাজনৈতিকভাবে সফল হল? সাধারণ মানুষের মন পেল কি বামেরা? নাকি পুলিশি বাধায় মুখ থুবড়ে পড়ল আন্দোলন? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে আজকের বনধ বুঝিয়ে দিল, এখনও বামেদের মধ্যে লড়াই করার স্পৃহা রয়েছে। আর তারা যদি সংগঠিত হতে পারে, তাহলে আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। কাঁথির মতো জায়গায় যেখানে আগে থেকেই বামদের এক শক্ত ঘাঁটি ছিল, সেখানে আজকের বনধ সেই পুরনো শক্তির পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন অনেকে। আর সাধারণ মানুষের পক্ষে আজকের দিন ছিল ভীষণই বিভ্রান্তিকর। কোথাও পুলিশ, কোথাও মিছিল, কোথাও বন্ধ দোকান, আবার কোথাও লোকাল ট্রেন বাতিল। কর্মজীবী মানুষ, ছাত্রছাত্রী, ছোট ব্যবসায়ী—সবাই পড়েছেন সমস্যায়। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট, এই বাম বনধ শুধু প্রতিবাদ নয়, একটা বার্তা। বার্তা রাজ্যের শাসক দল এবং প্রশাসনের প্রতি—“আমরাও এখনও আছি, দেখার আছে অনেক কিছু।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments