Late senior Congress leader Abu Hena: না ফেরার দেশে চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এক শান্ত, সদালাপী ও জনদরদী মুখ – প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আবু হেনা। ২০ জুলাই রাত ১১টা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে, বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা— সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। আবু হেনা ছিলেন শুধু একজন রাজনীতিক নন, তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক, সংগঠক এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। লালগোলার এই নেতা নিজের জীবনের প্রায় অর্ধশতক কেটেছেন কংগ্রেসের পতাকা ও আদর্শকে আঁকড়ে ধরে। জন্ম ১৯৫০ সালের ৩১ জানুয়ারি, সবুজ বিপ্লবের রূপকার প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবে লালগোলার রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হয়ে ওঠেন তিনি। বাবার প্রয়াণের পর রাজনীতিতে আসেন, এবং খুব দ্রুতই সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবার হাত প্রতীকে লালগোলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। এরপর টানা পাঁচবার ২০১১ পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন।
রাজ্যের মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রীও হন ২০১১ সালে, তবে ২০১২ সালে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। কংগ্রেস দলের প্রতি তাঁর অটল নিষ্ঠা আজীবন বজায় ছিল, অন্য দলে যাওয়ার প্রলোভন তিনি কখনো গ্রহণ করেননি, যা বর্তমান রাজনৈতিক ভাঙন-ধারার মাঝে বিরল দৃষ্টান্ত। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। দলের নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, “আবু হেনা শুধু কংগ্রেস নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের বড় ভাইয়ের মতো। তাঁর মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন অভিভাবককে হারালাম।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ক্ষতি অপূরণীয়।” কংগ্রেস নেতা তথা সংসদ সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “শান্ত স্বভাবের, নীতিবান ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিক হিসেবে আবু হেনার মতো নেতার অভাব দীর্ঘদিন অনুভব করবে দল ও রাজ্য রাজনীতি।” আবু হেনার শেষযাত্রা সোমবার সম্পন্ন হয় তাঁর প্রিয় লালগোলায়। শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন সহকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সহপাঠী ও সাধারণ মানুষ। যারা প্রত্যেকেই আবেগঘন চোখে বিদায় জানিয়েছেন প্রিয় ‘হেনা দা’কে। রাজনীতির এই গুণী মানুষ কখনোই চিৎকার করে বক্তব্য রাখেননি, টেলিভিশনের পর্দায় তেমনভাবে দেখা যেত না, কিন্তু গ্রামে গ্রামে পায়ে হেঁটে মানুষের দরজায় গিয়ে যেভাবে তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা আজকের রাজনীতির জন্য এক বিরল উদাহরণ।
আজ যখন রাজনীতি ব্যক্তিস্বার্থের দৌড়ে বিভক্ত, তখন আবু হেনার মতো মানুষ ছিলেন এক প্রশান্তির ছায়া। এই মৃত্যু শুধু কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার অবসান নয়, বরং রাজনীতির সেই শুদ্ধ চেহারার এক বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায়ের অন্তিম ছোঁয়া। তরুণ রাজনীতিকদের কাছে তাঁর জীবনের আদর্শ হোক অনুপ্রেরণা। আবু হেনার চলে যাওয়া যেন মুর্শিদাবাদের এক যুগের অবসান। তাঁর অনুপস্থিতি আজ শুধু কংগ্রেস নয়, সমগ্র বাংলার রাজনীতিতে এক শূন্যতা তৈরি করল। লালগোলা বিধানসভা এলাকার হাজার হাজার মানুষ আজ শোকে স্তব্ধ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে স্মৃতিচারণা, কেউ লিখছেন— “হেনা সাহেব ছিলেন একদম মাটির মানুষ,” কেউ বলছেন— “তিনি ছিলেন আমাদের কষ্টের সময়ের ভরসা।” এমন নেতা খুব কম আসেন, যাঁরা ক্ষমতা না পেয়েও মানুষের মন জয় করে থাকেন। কংগ্রেস ভবিষ্যতে কিভাবে এই শূন্যতা পূরণ করবে, তা সময়ই বলবে, তবে সাধারণ মানুষ হয়তো আর কোনোদিন ‘হেনা দা’র মতো একজন রাজনীতিককে ফিরে পাবে না। তিনি না থাকলেও তাঁর রেখে যাওয়া নীতি, আদর্শ ও মানবিকতার উদাহরণ রাজনীতির ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে। তাই আজ তাঁর চলে যাওয়ার দিনে কেবল শোক নয়, স্মরণ হোক তাঁর নিষ্ঠা, সরলতা ও মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতাকে।