Land dispute in Dholata, several houses set on fire:-দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাটের দক্ষিণ হরিনডাঙা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। জমি নিয়ে বিবাদের জেরে দুই পরিবারের মধ্যে মারপিট চলতে চলতে তা এতটাই গুরুতর আকার নেয় যে শেষপর্যন্ত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আগুন লাগার পর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বাড়িগুলিতেও। এতে কমপক্ষে তিনটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে, সঙ্গে পুড়ে গেছে রান্নাঘর, গোয়ালঘর, নগদ টাকা, দুটি বাইক, সাইকেল, বাড়ির আসবাবপত্র, খাদ্য সামগ্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নথি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার সূত্রপাত ছিল নজরুল পুরকাইত ও তার প্রতিবেশী রহমাতুল্লাহ পুরকাইতের মধ্যে বহুদিনের জমি সংক্রান্ত বিবাদ। দীর্ঘদিন ধরেই জমির দখল নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ চলছিল। এদিনও সেই নিয়েই তর্কাতর্কি হয় এবং ধীরে ধীরে তা ভয়াবহ সংঘর্ষের রূপ নেয়। এরপরই রহমাতুল্লাহ পুরকাইত ও তার সহযোগীরা নজরুল পুরকাইতের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে স্থানীয়রা এও বলছেন যে, জমি নিয়ে এই সমস্যা বহুদিনের এবং আগে থেকেও বেশ কয়েকবার দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা বেঁধেছিল।

ঘটনার পর থেকেই পুরো এলাকা উত্তেজনার কেন্দ্রে পরিণত হয়। আগুন লাগার খবর পেয়ে আশেপাশের লোকজন সেখানে ছুটে আসেন, কিন্তু আগুন এতটাই ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে কেউ কিছুই করতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা মহিবুল শেখ বলেন, “আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছিলাম জল ঢেলে আগুন নেভানোর, কিন্তু আগুন এতটাই ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে আমাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। একটার পর একটা বাড়ি জ্বলতে থাকে, আমরা শুধুমাত্র অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।”
দুর্ভাগ্যের বিষয়, ঢোলাহাট এলাকা দুর্গম হওয়ায় দমকল বাহিনী যথাসময়ে সেখানে পৌঁছতে পারেনি। যে কারণে আগুন আরও বিধ্বংসী আকার ধারণ করে এবং আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। অবশেষে খবর পেয়ে ঢোলাহাট থানার আইসি দেবাশিস রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ বাহিনী এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করে এবং সন্দেহভাজনদের আটক করে।
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রহমাতুল্লাহ পুরকাইত সহ মোট দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে এবং পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঢোলাহাট থানার এক আধিকারিক বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি, তবে তদন্ত এখনো চলছে। আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, যেসব পরিবার এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তারা এখন আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এক ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা বলেন, “আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন কোথায় থাকব, কী খাবো, কিছুই জানি না।” প্রশাসনের তরফ থেকে দ্রুত ত্রাণ ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, জমি সংক্রান্ত বিবাদ যেন ভয়ংকর দাঙ্গার রূপ না নেয়, তাই পুলিশ-প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল গনি বলেন, “এই জমি নিয়ে ঝামেলা অনেক পুরনো। প্রশাসন যদি আগেই ব্যবস্থা নিত, তাহলে এত বড় ক্ষতি হত না। এখন আমরা সবাই ভয়ে আছি, কখন কী হয়ে যায় বলা মুশকিল।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের জমি সংক্রান্ত বিবাদ শুধু ঢোলাহাট নয়, পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গাতেই দেখা যায়। আইনি জটিলতা ও স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা আরও বাড়ছে। তাই সরকার ও প্রশাসনের উচিত দ্রুত জমির সঠিক রেকর্ড সংরক্ষণ করা এবং যেকোনো জমি সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি করা।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতির ফলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।” অন্যদিকে, প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা দোষীদের শাস্তি দেব, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করব। কেউ রেহাই পাবে না।”
তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের দ্রুত পুনর্বাসন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া। পাশাপাশি, এলাকায় যাতে আর কোনো উত্তেজনা না ছড়ায়, তার জন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকা জরুরি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “আমরা চাই শান্তি, আমরা চাই আমাদের জায়গা-জমি নিয়ে কোনো অশান্তি না হোক। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।”
এখন দেখার বিষয়, পুলিশি তদন্তের ফলে কী বেরিয়ে আসে এবং প্রশাসন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু একথা নিশ্চিত, জমি নিয়ে বিবাদের জেরে এত বড় বিপর্যয় এলাকার মানুষকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।