...
Thursday, April 3, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যমুক্তির পর 'খবর বাংলার' মুখোমুখি 'কোহলি' ভক্ত ঋতুপর্ণ

মুক্তির পর ‘খবর বাংলার’ মুখোমুখি ‘কোহলি’ ভক্ত ঋতুপর্ণ

‘Kohli’ fan Rituparno confronts ‘Khabar Bangla’ after release:শনিবারের সন্ধ্যা ছিল আইপিএল-প্রেমীদের কাছে বিশেষ। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে KKR বনাম RCB-র টানটান ম্যাচ দেখতে হাজির ছিলেন হাজার হাজার দর্শক। ম্যাচ জমজমাট, উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। বিরাট কোহলির অর্ধশতক পেরোনোর পর হঠাৎই ঘটে যায় এক চমকপ্রদ ঘটনা। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের যুবক ঋতুপর্ণ পাখিরা, যিনি বিরাট কোহলির অন্ধভক্ত হিসেবে পরিচিত, হঠাৎই জি ব্লকের দিক থেকে ফেন্সিং টপকে মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়েন। প্রিয় তারকার দিকে ছুটে গিয়ে ক্রিজ়ের উপর শুয়ে প্রণাম করেন এবং কোহলির পা জড়িয়ে ধরেন। মুহূর্তের মধ্যেই ইডেনে শোরগোল পড়ে যায়। নিরাপত্তারক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করেন এবং পরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশ।

রবিবার সারাদিন পুলিশের হেফাজতে থাকার পর সোমবার আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান ঋতুপর্ণ। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ফিরে আসেন জামালপুরের নিজ গ্রামে। সেখানে তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত জনতার ভিড়। এই ঘটনার পর ‘খবর বাংলার’ প্রতিনিধি সুমন বিশ্বাস কথা বলেন ঋতুপর্ণের সঙ্গে। মুক্তি পাওয়ার পর ঋতুপর্ণের মুখে ছিল একটাই কথা, ‘‘আমি বিরাট কোহলিকে গুরুদেব মনে করি। আবেগের বশেই ভুল করেছি। কারও ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছিল না।’’

Virat Kohli Update Match 2

‘কোহলির পা ছুঁতে চাইছিলাম, আবেগটা সামলাতে পারিনি’

ঋতুপর্ণর মুখে ঘটনার বিবরণ ছিল সরল এবং আবেগময়। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে কলকাতায় ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। যখন দেখলাম কোহলি অর্ধশতক করলেন, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। মনে হয়েছিল, গুরুদেবকে সামনে থেকে না দেখলে আমার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ফেন্সিং টপকে মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ি। কোহলির পা ছুঁতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছিলাম। কিন্তু জানতাম না, এমন বিপদে পড়ব।’’

গ্রামের আবেগ এবং প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া

ঋতুপর্ণর মুক্তির খবর পেয়ে জামালপুরে উচ্ছ্বাসের ঢেউ। তাঁর গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমায় প্রতিবেশীরা। ঋতুপর্ণকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখে তার মা কাকলি পাখিরা আবেগে ভেঙে পড়েন। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটা ছোট থেকে কোহলির পাগল। আমাদের কাছে কোহলি যেন তার আরাধ্য দেবতা। তাই আবেগের বশে যা করেছে, সেটাকে আমি ভুল বলতে পারি না। তবে আমাদের একটাই প্রার্থনা, এমন ভুল যেন আর না করে।’’

ঋতুপর্ণের বাবা মহাদেব পাখিরা পেশায় ছোটো ফল বিক্রেতা। ছেলের এমন কাণ্ডে তিনি যেমন অবাক, তেমনই চিন্তিতও। তিনি বলেন, ‘‘ও ছোট থেকেই খেলাধুলোয় খুব আগ্রহী। জামালপুর থেকে পরে কলকাতার বেলেঘাটায় গিয়ে ক্রিকেট কোচিংও করত। কোহলির প্রতি ওর এতটাই আবেগ যে এমন কাজ করে ফেলেছে। আমরা চাই, ও এবার থেকে আরও সচেতন হোক।’’

প্রতিবেশীদের বক্তব্য

ঋতুপর্ণের এই কাণ্ডে হতবাক তাঁর গ্রামের প্রতিবেশীরাও। তবে তাঁরা একবাক্যে বলছেন, ‘‘এই ছেলেটার কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। ছোট থেকেই কোহলিকে ভগবানের মতো মানত। তাই আবেগের কারণে এই কাজ করেছে।’’ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শ্যামাপদ মালিক বলেন, ‘‘ছেলেটা ছোট থেকেই খুব ভালো। আমরা চাই, ওকে আর পুলিশ হেনস্তা না করুক। আমাদের মনে হয়, কোহলিও ওকে ক্ষমা করে দেবেন।’’

কোহলির প্রতি এই ভক্তির শুরু কোথা থেকে?

ঋতুপর্ণের বাড়ির ঘরে ঢুকলেই বোঝা যায়, তিনি কতটা কোহলি-ভক্ত। ঘরের দেওয়ালে টাঙানো কোহলির বড় বড় ছবি। পড়ার টেবিল থেকে ডায়েরি – সর্বত্র কোহলির নাম আর ছবি। ঋতুপর্ণ বলেন, ‘‘আমি যখন প্রথম ক্রিকেট দেখতে শুরু করি, তখন থেকেই কোহলির ব্যাটিং আমাকে মুগ্ধ করত। ধীরে ধীরে তাঁর প্রতি এতটাই ভক্তি তৈরি হয় যে মনে হয়েছিল, তাঁকে একবার সামনাসামনি না দেখলে জীবন বৃথা।’’

আইনি সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মাঠে ঢুকে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য কলকাতা পুলিশ ঋতুপর্ণের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিল। যদিও পরে আদালত থেকে জামিন পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঋতুপর্ণ জানান, তিনি এখন শান্ত থাকতে চান এবং ভবিষ্যতে আবার ক্রিকেট খেলায় মন দিতে চান। ‘‘আমি চাই, মানুষ যেন আমাকে এই ভুলের জন্য বিচার না করে। আমি কোহলির মতো বড় খেলোয়াড় হতে চাই।’’

th

গ্রামের মানুষ চাইছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক স্থায়ীভাবে

ঋতুপর্ণর মুক্তির পর গ্রামের মানুষেরও দাবি, তাঁকে আর হেনস্তা না করা হোক। তাঁদের মতে, আবেগের কারণেই এই ভুল হয়েছে এবং এর জন্য ঋতুপর্ণকে ক্ষমা করা উচিত।

উপসংহার

ঋতুপর্ণ পাখিরার এই ঘটনা আমাদের শেখায়, খেলাধুলো নিয়ে আবেগ থাকা ভালো, কিন্তু সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। তাঁর কোহলিপ্রীতি অনস্বীকার্য। তবে আইনের চোখে মাঠে ঢুকে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা অপরাধ। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকা দরকার। তবে ঋতুপর্ণের মতো তরুণদের জন্য প্রয়োজন আরও সুযোগ, যাতে তারা তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.