Sunday, May 25, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যস্বাস্থ্য সচেতনতায় পাতে রাখুন সতেজ বিট

স্বাস্থ্য সচেতনতায় পাতে রাখুন সতেজ বিট

Keep fresh beets on hand for health awareness : এই যে, সকালে ঘুম থেকে উঠে পাতে একটু লালচে-গোলাপি রঙের বিট দেখে আপনার মন কি খুব আহ্লাদিত হয়? হয়তো এখনও সেই অভ্যাস তৈরি হয়নি, কিন্তু এবার সময় এসেছে আপনার খাবারের তালিকায় নিয়ম করে যোগ করতে হবে বিট। হ্যাঁ, ‘স্বাস্থ্য সচেতনতায় পাতে রাখুন সতেজ বিট’—এই স্লোগানটি এখন আর শুধু প্রচার নয়, প্রয়োজনও বটে। শহরের নামী ডাক্তার থেকে পাড়ার স্বাস্থ্যকর্মী, সকলেই একবাক্যে বলছেন, “বিট রোজ খেলে শরীরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনেক রোগ, অনেক সমস্যা সহজেই দূরে রাখা সম্ভব।” বস্তুত, বিটকে নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অবহেলা আছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অনেকেই মনে করেন, “এটা তো শুধু রঙের জন্য খাওয়া হয়, গাজরের মতো কোনও পুষ্টিগুণ নেই।” কিন্তু সেই ভাবনাটা এখন বদলাতে হবে। কারণ, বিট শুধুমাত্র রঙের জন্য নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী ডিটক্সিফায়ার

বিটের উপকারিতা কী কী? এই নিয়ে কথা বললে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অনুপম দত্ত বলেন, “বিট মূলত শরীরের ভিতরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে, যেটা আমরা ডিটক্সিফিকেশন বলি। বিটের রসে থাকা নাইট্রেট আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীরা নিয়ম করে বিটের রস খেলে উপকার পাবেন।” পাশাপাশি, তিনি যোগ করেন, “বিটের ফাইবার কনটেন্ট খুব ভালো, ফলে যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্যও বিট খুব উপকারী।” এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাজারের বিক্রেতা মধু দাস জানিয়েছেন, “এখন লোকজন বিট বেশি করে কিনছেন। আগের থেকে তিনগুণ বেশি চাহিদা। লোকে জেনে গিয়েছে যে বিট খেলেই শরীর ঠিক থাকে। সকালবেলা অনেকে একগ্লাস করে বিটের রস নিতে শুরু করেছেন।”

beets

আরেকটি মজার তথ্য হলো, বিট স্ট্যামিনা বাড়াতে সাহায্য করে। খেলোয়াড়দের মধ্যে বিটের রস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্পোর্টস কোচ সোমনাথ ঘোষ বলেন, “আমাদের ক্লাবের খেলোয়াড়রা এখন নিয়ম করে বিটের রস খায়। ওয়ার্কআউটের আগে বিটের রস খেলে শরীর বেশি শক্তি পায়, ক্লান্তি কম হয়।”বিটের আরও একটি বড় গুণ হলো, এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। হ্যাঁ, বিটে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বিশেষ করে, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি—এই সমস্ত পুষ্টি উপাদান বিটে থাকে। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তারা বিটের স্যালাড খেতে পারেন, কিংবা একগ্লাস করে বিটের রস পান করতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও বিট এক আশীর্বাদ। কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. মধুমিতা রায় বলেন, “বিট ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে পরিমাণ বুঝে খেতে হবে, কারণ বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়তেও পারে। নিয়ম করে অল্প অল্প করে খাওয়াই ঠিক।”বিটের আরেকটি গুণের কথা না বললেই নয়, সেটা হলো হার্টের যত্ন। বিটের রস খেলে ব্যাড কোলেস্টেরল কমে যায়, ফলে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে বিটের রস কার্যকরী হতে পারে। এছাড়াও, বিট লিভারকে সুস্থ রাখে, বদহজমের সমস্যা দূর করে, গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা কমায়।

শুধু ডাক্তাররাই নন, সাধারণ মানুষও এখন বিট খাওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। রানাঘাটের গৃহবধূ মধুবালা সাহা বলেন, “আগে আমরা বিট খেতাম না, ভাবতাম এটা স্যালাডে শুধু রঙ আনায়। এখন বুঝেছি, শরীরের ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখার জন্য বিট খুব দরকার। এখন প্রতিদিন একগ্লাস করে বিটের রস খাই। খুব ভালো লাগে, শরীরও হালকা লাগে।”বাজারের ব্যবসায়ী চন্দন পাল বলেন, “আগে বিটের কদর তেমন ছিল না। কিন্তু এখন মানুষ বুঝতে পারছে এর উপকারিতা। ফলে দামও কিছুটা বেড়েছে, তবে চাহিদা তুঙ্গে।”

এইভাবে, বিট এখন আর শুধু বাজারের এক কোণে পড়ে থাকা সবজি নয়, বরং মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই সময়, যখন চারদিকে নানা রোগ-জীবাণু, দূষণ, অসুস্থতার আশঙ্কা বেড়েছে, তখন শরীরের ডিটক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কাজে বিটের মতো প্রাকৃতিক খাবার একেবারে অপরিহার্য।তবে মনে রাখতে হবে, বিট খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। খুব বেশি খেলে কখনও কখনও বিট্যুরিয়া নামে এক ধরনের অবস্থা দেখা দিতে পারে, যার ফলে মূত্রের রঙ লালচে হয়ে যায়। যদিও এটা ক্ষতিকারক নয়, তবুও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments