Friday, June 13, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যপ্রাচীন রীতিনীতি মেনে বর্ধমানে আয়োজিত কালাচাঁদ পূজো

প্রাচীন রীতিনীতি মেনে বর্ধমানে আয়োজিত কালাচাঁদ পূজো

Kalachand Puja organized in Burdwan following ancient customs:বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার অন্তর্গত কোমরপুর গ্রামে প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার দিন অনুষ্ঠিত হয় শতাব্দী প্রাচীন কালাচাঁদ পূজো, যা আজও গ্রামীণ ধর্ম-সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে। এই পুজো শুধুই কোনও ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি একটি আবেগ, একটি ঐতিহ্য এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা বিশ্বাসের স্রোত। লোককথা অনুযায়ী, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন প্রভু জগন্নাথদেবের মাথায় যন্ত্রণা হয়, তখন তাঁর মস্তকে চন্দনের প্রলেপ লাগানো হয়। এরপর স্নান করানোর পর তিনি জ্বরে কাবু হন এবং ১৫ দিনের জন্য তাঁকে দর্শন না করার বিধান থাকে। সেই ১৫ দিনের অন্তে অনুষ্ঠিত হয় স্নানযাত্রা ও কালাচাঁদ পূজো। কোমরপুরে প্রভু কালাচাঁদ পূজিত হন বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারে, সঙ্গে বিরাজমান ধর্মরাজও, যার গাজন উৎসব এই পূজোকে কেন্দ্র করে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।পূজোর দিন ভোরবেলা থেকেই ভক্তদের ভিড় জমে যায় কোমরপুরে। স্নানযাত্রার সময় ধর্মরাজকে পদ্মফুলে মোড়া দোলায় চড়িয়ে ভক্তেরা কাঁধে তুলে নেন, আর সেই দোলার তালে তালে বাজতে থাকে ঢাক, কাঁসর ও শঙ্খ। এরপর স্নান শেষে যখন প্রভু মন্দিরে ফিরে আসেন, তখন শুরু হয় ঐতিহ্যমণ্ডিত ‘ভাঁড়াল খেলা’।

এই খেলা শুধুই নৃত্য নয়, এটি এক ধরনের আত্মনিবেদন—ভক্তের মধ্যে ‘প্রভুর বল’ প্রবেশ করে, উপোষী শরীরে তাঁরা যেভাবে নাচেন, তাতে উপস্থিত দর্শক ও ভক্তরা অভিভূত হয়ে পড়েন। প্রায় ৫০০-এরও বেশি সন্ন্যাসী সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেন এই উৎসবে, যা শুরু হয় বহু আগে থেকে। তাঁদের বিশ্বাস, এই গাজনের মাধ্যমে তারা আত্মশুদ্ধি লাভ করেন। গ্রামের প্রাচীন মাটির মন্দির ও সেই ঘিরে গড়ে ওঠা মেলা, হাট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কোমরপুরকে এই ক’দিনে পরিণত করে এক তীর্থক্ষেত্রে।স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীমতি অঞ্জলি দাস বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে এই পুজো দেখে আসছি। আগে ঘরেই ছোট করে হত, এখন তো হাজার হাজার মানুষ আসেন। আমাদের গ্রামে যেন ঈশ্বর নিজে নেমে আসেন এই দিনগুলোতে।

pi

” গাজনের এক সন্ন্যাসী জানান, “প্রভুর বল না থাকলে এই খেলায় শরীর নাচানো সম্ভব নয়। উপোষ করে থাকি, আর বিশ্বাস করি—ভগবান আমার ভেতরেই নেমে আসেন।” এই বিশ্বাসই চালিত করে কোমরপুরবাসীকে, যা কোনও বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না।এই পূজোর আরেকটি বিশেষ দিক হল প্রভুর স্নানযাত্রার দিন দর্শন করলে পুণ্য লাভ হয়, এমনকি মন্দিরের মাটি স্পর্শ করলেই চর্মরোগ সারতে পারে—এই বিশ্বাস বহু মানুষের মনে গভীরভাবে প্রোথিত। বহু দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন, মাটির মন্দিরে মাথা ঠেকান, আশীর্বাদ চান। পাশেই বসে বিশাল মেলা—ঝালমুড়ি, খেলনা, মিষ্টির দোকান, গ্রামীণ হাতের তৈরি জিনিস, নাচ-গানের অনুষ্ঠান, লোকসঙ্গীতের আসর। পুজোকে ঘিরে এই উৎসব কেবল ধর্মীয় নয়, এটি একটি সামাজিক বন্ধনের ও মিলনের উদযাপন।ভবিষ্যতে এই পুজোর ঐতিহ্য ও কৃষ্টি ধরে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও পঞ্চায়েত উদ্যোগ নিয়েছে পূজো কমিটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার, যাতে পর্যটকদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামাগার, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যপরিষেবার ব্যবস্থা আরও উন্নত করা যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments