Thursday, May 22, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদিল্লির নাম করে পাকিস্থানে জ্যোতি,স্তম্ভিত বাবা

দিল্লির নাম করে পাকিস্থানে জ্যোতি,স্তম্ভিত বাবা

Jyoti in Pakistan named after Delhi, father shocked:হরিয়ানার মেয়ে জ্যোতি মালহোত্রা—সোশ্যাল মিডিয়ায় যিনি পরিচিত একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার হিসেবে, যাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৩.৮৭ লক্ষেরও বেশি—তিনি এখন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজরে। কারণ? তিনি দিল্লি যাওয়ার নাম করে একেবারে চলে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে, এবং এখন তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ অভিযোগ—চরবৃত্তি। এই খবর সামনে আসতেই গোটা দেশ চমকে উঠেছে, স্তম্ভিত তাঁর বাবা হরিশ মালহোত্রাও, যিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “জ্যোতি বলেছিল দিল্লি যাচ্ছে। পাকিস্তানে যাওয়ার কোনও কথা বলেনি। চরবৃত্তি কী, ও সেটা করে কেন, এসব কিছুই জানি না।” যদিও পুলিশের তদন্ত বলছে একেবারে ভিন্ন কথা। এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি), আইবি (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো), এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের অফিসাররা জ্যোতিকে জেরা করছেন ধারাবাহিকভাবে। তাঁরা খুঁজে পেতে চাইছেন—জ্যোতির পাকিস্তান এবং চিন সফরের পেছনে কারা ছিল, কী উদ্দেশ্যে ছিল, এবং টাকা কোথা থেকে আসছিল? কারণ একথা ইতিমধ্যেই জানা গেছে যে জ্যোতি শুধু পাকিস্তানেই যাননি, বরং তিনি গিয়েছিলেন চিনেও, যেখানে সাধারণত ব্লগিং-এর ছুতোয় অনেক সময়ই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়, এবং সেটা পরে ব্যবহার হয় দেশের বিরুদ্ধে। তার এই আন্তর্জাতিক সফর নিয়ে খুঁটিনাটি তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মহল।

জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে জ্যোতি পাকিস্তান যাওয়ার জন্য সরাসরি গিয়েছিলেন পাকিস্তান হাই কমিশনে ভিসার আবেদন করতে, সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় এক পাক নাগরিক দানিশের সঙ্গে। এরপর তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সেখান থেকেই নাকি শুরু হয় এক ‘অজানা পরিকল্পনার’ যাত্রাপথ। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, দানিশ নাকি পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভস-এর (PIO) হয়ে কাজ করেন। এই দানিশের মাধ্যমেই জ্যোতির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় পাক গোয়েন্দা মহলের।

হরিয়ানা পুলিশের এসপি শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান এই ঘটনায় বলেছেন, “এই যুগের যুদ্ধ হচ্ছে একদম আলাদা ধরনের। শুধু সীমান্তে গুলি নয়, আজকের দিনে যুদ্ধ হচ্ছে তথ্যের মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় ইউটিউবারদের ব্যবহার করে তথ্য পাচার করছে শত্রু দেশ। তাই আমাদেরও কৌশল বদলাতে হচ্ছে। জ্যোতির সরাসরি সংযোগ ছিল পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভদের সঙ্গে, এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”

এই প্রসঙ্গে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে—কাশ্মীরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার আগে জ্যোতি সেখানে গিয়েছিলেন। তারও আগে তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের মতে, এই সফরের মধ্যে কোনও সংযোগ থাকতে পারে। কাকতালীয় ভাবে কাশ্মীর সফর, এরপর হামলা—এই মিলকে হালকাভাবে নিচ্ছে না এনআইএ। তাঁরা বলছেন, “এই সফরগুলো নিছক ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি নয়, এর গভীরে আরও কিছু আছে।”

অবাক করার মতো ব্যাপার হল, জ্যোতি ব্লগিংয়ের ছুতোয় শুধু পাকিস্তান বা চিন নয়, ঘুরে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গেও। আর এখানেই উঠে এসেছে এক বাঙালি ইউটিউবার—সৌমিত ভট্টাচার্যের নাম। সৌমিত নাকি একাধিকবার জ্যোতির সঙ্গে দেখা করেছেন কলকাতায় এবং উত্তরবঙ্গে। তদন্তকারীরা সৌমিতের সঙ্গেও কথা বলছেন, কারণ তাঁরা খতিয়ে দেখতে চাইছেন—জ্যোতির ভ্রমণ এবং ব্লগিংয়ের আড়ালে কেউ কি গোপন কাজ চালাচ্ছিল?

জ্যোতির বাবা হরিশ মালহোত্রার কথায় এখন একটা হতাশা আর অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট, “আমরা ভাবতাম ও ইউটিউবে ভিডিও করে টাকা কামাচ্ছে, দুনিয়া ঘুরছে। এখন তো বুঝতেই পারছি না, কাকে বিশ্বাস করব।” এই পরিবারিক প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট—এই ঘটনা শুধু দেশের সুরক্ষা নয়, একটা পরিবারের বিশ্বাসকেও ভেঙে দিয়েছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে—

  • একজন সাধারণ ইউটিউবার কীভাবে পাকিস্তান বা চিনে গিয়ে ঘুরে আসেন এত সহজে?
  • এই বিদেশ সফরের পিছনে আর্থিক সাহায্য কোথা থেকে আসে?
  • আরও কী কী তথ্য ভিডিওর মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে?
  • এটা কি একটি বড় চরের নেটওয়ার্কের অংশ, যার মাথা বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছিল?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা ভারতের সাইবার সিকিউরিটির দিক থেকেও বড় একটা লাল সঙ্কেত। ভারতকে এখন আরও কঠোরভাবে নজর রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ওপর—বিশেষ করে যাঁরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করছেন বা সন্দেহজনক সংযোগ রাখছেন বিদেশি সংগঠনের সঙ্গে।

জ্যোতির ইউটিউব চ্যানেলের পুরনো ভিডিওগুলোও এখন এনালাইসিসে পাঠানো হয়েছে। দেখা হচ্ছে—সেখানে কোনও সামরিক বা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভিডিও করা হয়েছিল কি না।

শেষমেশ, এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বর্তমান যুগে যুদ্ধ মানে শুধু বন্দুক বা গোলাগুলি নয়, যুদ্ধ এখন হচ্ছে ক্যামেরা, ল্যাপটপ আর মোবাইলের মাধ্যমে। তথ্যের যুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে উঠছে মানুষের বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস ভাঙলে তার মূল্য শুধু দেশের নয়, একটা গোটা সমাজ, একটা পরিবারকেও দিতে হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments