Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গকলকাতাউত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরে বড় ভাঙন, তৃণমূলে যোগ দিলেন জন বার্লা

উত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরে বড় ভাঙন, তৃণমূলে যোগ দিলেন জন বার্লা

John Barla: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গে রাজনীতির জমিতে যেন আগুন জ্বলছে! দীর্ঘদিন ধরে জল্পনা চলার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার বড়সড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটল রাজ্যে। বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তৃণমূল ভবনে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে জন বার্লা তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন হাতে, আর তার মধ্য দিয়েই উত্তরবঙ্গে বিজেপির সংগঠনের ভিত নড়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

২০১৯ সালে বিজেপির হয়ে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে জন বার্লা কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তাঁর রাজনৈতিক উত্থান তখন চোখে পড়ার মতো ছিল। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগান কেন্দ্রিক রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যখন আলিপুরদুয়ার থেকে মনোজ টিগ্গাকে প্রার্থী করে, তখন থেকেই জন বার্লার সঙ্গে দলের দূরত্ব বেড়েছিল বলে শোনা যাচ্ছিল। সেই সময় থেকেই চাউর হয়, বার্লা অন্য রাজনৈতিক ঠিকানার খোঁজে রয়েছেন। এমনকি মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি উত্তরবঙ্গ সফরের সময়, তাঁকে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যাওয়ায় দলবদলের জল্পনা আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

john barla joins tmc salil bera

অবশেষে সেই জল্পনাই সত্যি করে তৃণমূলে এলেন জন বার্লা। তৃণমূলের তরফে সুব্রত বক্সী জানিয়েছেন, “জন বার্লা দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য বিজেপির নীতি ও দিশা নিয়ে হতাশ ছিলেন। তাঁর মতে, রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম, বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। সেই কারণেই তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আবেদন গ্রহণ করেছেন, এবং আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।”

বার্লার এই যোগদানে তৃণমূল কংগ্রেস বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের চা বাগান কেন্দ্রিক রাজনীতিতে নতুন উদ্দীপনা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সুব্রত বক্সী আরও বলেন, “উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকায় জন বার্লার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তাঁর আসায় আমাদের সংগঠন আরও মজবুত হবে। রাজ্য স্তর থেকে চা বাগান – দুই ক্ষেত্রেই তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন।”

এদিকে, জন বার্লার এই দলবদল নিয়ে বিজেপি শিবিরে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, “অনেকদিন ধরেই উনি চেষ্টা করছিলেন। দল ওঁকে অনেক সুযোগ দিয়েছিল। তবে কেন দলবদল করলেন, তা উনিই ভাল বলতে পারবেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমরা সম্মান জানাই।”

500x300 2580556 untitled design 2025 05 15t171403186 1747309445938

জন বার্লা নিজেও জানান, “আমি রাজনীতি করতে এসেছি মানুষের জন্য, তাঁদের উন্নয়নের জন্য। আমি দেখেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উত্তরবঙ্গে কাজ করছেন, বিশেষ করে চা বাগান শ্রমিকদের জন্য, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি চাই, তাঁদের অধিকারে যেন কেউ হস্তক্ষেপ না করে। এই লক্ষ্যে কাজ করতেই আমি আজ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলাম।”

জন বার্লা আদিবাসী সমাজ থেকে উঠে আসা এক জননেতা। ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত সাধারণ পরিবেশে। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু স্থানীয় স্তরে সংগঠন করে। পরে অল ইন্ডিয়া টি ট্রাইবস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। রাজনীতিতে তাঁর উত্থান মূলত চা বাগানকেন্দ্রিক সামাজিক আন্দোলনের হাত ধরেই। ২০১৯ সালে বিজেপির তরফে প্রার্থী হয়ে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি আলিপুরদুয়ার থেকে জিতে আসেন। পরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে একাধিকবার কেন্দ্র-রাজ্যের দ্বন্দ্বের মাঝেও জনসংযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেন।

এই রাজনৈতিক পালাবদলের প্রভাব কেবল একজন নেতার পদ পরিবর্তন নয়, এর প্রভাব পড়তে চলেছে উত্তরবঙ্গের রাজনীতির ঘরানায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জন বার্লার যোগদানে উত্তরবঙ্গের আদিবাসী এবং চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব অনেকটাই বাড়বে। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের তৃণমূল নেতারা বার্লার যোগদানে উৎসাহিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেবাশিস চক্রবর্তী জানান, “তৃণমূল বুঝে গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ ছাড়া ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন। তাই এই কৌশলী পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা বিজেপিকে চাপে ফেলতে চায়।”

অন্যদিকে বিজেপির একাংশ মনে করছে, বার্লার দলবদল রাজনৈতিক সুবিধাবাদের পরিচয়। দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার মতে, “দলে থেকে যদি চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলেই অনেকে দল বদল করে। তবে আমরা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রয়েছি। একজন চলে গেলেই সংগঠনের ভিত্তি নড়ে যাবে না।”

তবে আগামী দিনে এই দলবদলের প্রকৃত প্রভাব কী হবে, তা নির্ভর করছে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের ফলাফলের উপর। এখনই বোঝা যাচ্ছে না, জন বার্লার আগমন তৃণমূলের জন্য কতটা রাজনৈতিক সুবিধা এনে দেবে। কিন্তু এটা নিশ্চিত, তাঁর আগমন তৃণমূলের পক্ষে উত্তরবঙ্গে একটি বড় মাইলস্টোন, আর বিজেপির জন্য নিঃসন্দেহে তা এক বড় ধাক্কা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments