Friday, April 25, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশজঙ্গি হানায় নিহত ঝালদার আইবি অফিসারের বাড়িতে ঝাড়খণ্ডের কৃষি মন্ত্রী

জঙ্গি হানায় নিহত ঝালদার আইবি অফিসারের বাড়িতে ঝাড়খণ্ডের কৃষি মন্ত্রী

Jharkhand Agriculture Minister visits house of Jhaldar IB officer killed in militant attack:ঝাড়খণ্ডের ছোট্ট শহর ঝালদা যেন হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এক অদৃশ্য শোকের ছায়ায়, কারণ সেই শহরেরই বুকে বেড়ে ওঠা এক সাহসী সন্তান, আইবি অফিসার মনীশ রঞ্জন মিশ্র, সম্প্রতি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় শহীদ হয়েছেন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, চোখে জল আর মুখে অভিমান নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মনীশের পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা এবং সারা রাজ্যের মানুষ। আর এই সময়েই শহীদ মনীশ রঞ্জনের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তাঁর ঝালদার বাড়িতে পৌঁছলেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী নেহা তির্কি, সঙ্গে ছিলেন যুগসালাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মঙ্গল কালিন্দী, বিধায়ক বিকাশ কুমার মুন্ডা, যিনি বর্তমানে খাদ্য, গণবন্টন ও ভোক্তা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং আরও অনেক প্রশাসনিক আধিকারিক। মন্ত্রী নেহা তির্কি এদিন সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক। আমাদের রাজ্যের একজন সাহসী অফিসার দেশের জন্য প্রাণ দিলেন। আমি ঝাড়খণ্ড সরকারের পক্ষ থেকে এবং মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে এসেছি। পরিবার যাতে একা না পড়ে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের।” মন্ত্রীর সঙ্গে শহীদ মনীশের পরিবারের সদস্যদের আলাপ হয় এবং সেই সময় পরিবার তাঁদের কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন, যেমন শহীদ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য, চাকরির প্রতিশ্রুতি এবং সন্তানদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু দাবি। মন্ত্রী আশ্বাস দেন, “এই সমস্ত বিষয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি সরাসরি তুলে ধরব এবং যতটা সম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার গভীরে গেলে দেখা যায়, মনীশ রঞ্জন মিশ্র ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান গোয়েন্দা অফিসার, যিনি আইবি-তে কর্মরত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরেই উপত্যকায় কৌশলগত কাজে যুক্ত ছিলেন। কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় একটি স্পেশাল অপারেশন চলাকালীন তিনি জঙ্গিদের গুলিতে গুরুতর আহত হন এবং পরে শহীদ হন। মনীশ ছিলেন পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী এবং তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু শুধু একটি পরিবার নয়, গোটা সমাজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর বাবা-মা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তাঁদের ছেলে আর নেই। মনীশের মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “ও বলেছিল কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে, আমি তার পছন্দের খাবার রেঁধে রেখেছিলাম, আজ সেটা সে খেতে পারল না।” এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য সামনে এলে যে কেউ চোখের জল আটকাতে পারবে না।

স্থানীয় বাসিন্দারাও মন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ঝালদার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন শিক্ষক গোপাল মাহাতো বলেন, “শহীদ মনীশ আমাদের গর্ব। সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং এর পাশাপাশি ওঁর নামে কোনও রাস্তা, স্কুল বা সরকারি প্রকল্পের নামকরণ করা হলে সেটাই হবে প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য।” অন্যদিকে তরুণ সমাজও শহীদ মনীশকে নিজেদের অনুপ্রেরণা হিসেবে তুলে ধরছেন। স্থানীয় কলেজের ছাত্র অভিষেক বলেন, “দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া মানে শুধু সাহসিকতা নয়, এটা হলো মানুষের প্রতি এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। মনীশদা আমাদের চোখে একজন সত্যিকারের হিরো।”

শহীদ মনীশের এই ত্যাগের কথা শোনার পর ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করছেন, কেউ বলছেন ‘মন থেকে স্যালুট’, কেউ আবার সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ঝাড়খণ্ড সরকার শহীদ পরিবারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা ভাবছে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি, এককালীন আর্থিক সহায়তা এবং পরিবারকে রেশন ও চিকিৎসা সহায়তার মতো পরিষেবা। এছাড়া সরকারের তরফ থেকে শহীদ মনীশের স্মৃতিতে একটি স্মারক নির্মাণের প্রস্তাবও উঠে এসেছে প্রশাসনিক মহলে।

এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ধরণের ঘটনা কেবল একটি নিরাপত্তা বিষয় নয়, এটি একটি সামাজিক ও প্রশাসনিক ইস্যু। শহীদদের পরিবার যদি যথাযথ সম্মান না পায়, তাহলে ভবিষ্যতে মানুষ এমন পেশায় যোগ দিতে নিরুৎসাহী হতে পারে। তাই শহীদদের যথাযথ মর্যাদা এবং তাঁদের পরিবারের পাশে প্রশাসনের দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন।”

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও উঠে এল দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জটিল চিত্র, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যুবকেরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে চলেছেন। শহীদ মনীশ রঞ্জনের আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, আজও রক্ত দিয়ে লেখা হয়। সরকার, সমাজ এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত চেষ্টাতেই সম্ভব হবে এমন শহীদদের স্মরণে যথার্থ সম্মান জানানো এবং তাঁদের পরিবারের পাশে থাকা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments