Jammu and Kashmir: 2 terrorists arrested, huge cache of arms recovered in Shopian:জম্মু কাশ্মীর আবার শিরোনামে, আবার জঙ্গি দমন অভিযান, আর এবার সেই অভিযানের মুকুটে জুড়ল এক বড় সাফল্য। সোমবার সকালবেলা কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার ডিকে পোড়া এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ এবং জম্মু কাশ্মীর পুলিশের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ল দুই সন্ত্রাসী সহযোগী। শুধু গ্রেফতার করাই নয়, তাদের কাছ থেকে মিলেছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র—দুটি পিস্তল, চারটি গ্রেনেড, ৪৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ম্যাগাজিন সহ আরও নানা আগ্নেয়াস্ত্র। ৩৪ আর আর (রাষ্ট্রীয় রাইফেলস) এবং সিআরপিএফ-এর ১৭৮ ব্যাটালিয়নের এই চিরুনি অভিযানকে ঘিরে গোটা এলাকায় তৈরি হয়েছে প্রবল চাঞ্চল্য। এই দুই ধৃতকে জেরা করে জানা যাচ্ছে, তারা জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা র অনুগত এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিরাপত্তা বাহিনী এবং নির্দোষ সাধারণ নাগরিকদের উপর আক্রমণ চালানো। শোপিয়ানের মতো সেনাবাহিনীর গড়া শান্ত অঞ্চলকে ফের উত্তপ্ত করতেই তাদের তৎপরতা শুরু হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর কড়া নজর এবং তথ্যভিত্তিক অভিযানে তা ভেস্তে যায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ধৃত দুই সন্ত্রাসীর নাম নাবিল আহমেদ এবং শাহিদ আলি, যারা স্থানীয় হলেও গত এক মাস ধরে পাকিস্তান ভিত্তিক হ্যান্ডলারদের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগে ছিল এবং সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্র আসার রাস্তাও খোঁজার চেষ্টা করছিল।

একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, “আমরা আগেই খবর পেয়েছিলাম এই অঞ্চলে কয়েকজন সক্রিয় সহযোগী লুকিয়ে আছে। সেই সূত্র ধরেই গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করে অভিযান চালানো হয়।” এই ঘটনায় ফের প্রমাণ হয়ে গেল, সেনা ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় কতটা শক্তিশালী এবং কাশ্মীরকে স্থিতিশীল রাখতে তারা কতটা সজাগ। গত কয়েক মাস ধরেই জম্মু কাশ্মীরে একাধিক চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। একদিকে যেমন সক্রিয় জঙ্গিদের দমন করা হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি তাদের স্থানীয় যোগাযোগ রক্ষাকারী নেটওয়ার্ককে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেনার তরফে এক মুখপাত্র বলেন, “এই গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধার শুধুমাত্র এক অভিযান নয়, এটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
স্থানীয় জনতা এই ঘটনার পরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ বলছেন, “এভাবে বারবার আমাদের এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, এটা ভয়ের বিষয়।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “সেনা যদি না থাকত, তাহলে জানি না আজ আমাদের কী দশা হত।” বিশেষ করে স্কুল-কলেজের অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট যে নিরাপত্তা বাহিনী সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। এই অভিযান চলাকালীন সেনাবাহিনী আশপাশের এলাকায় কড়া নজরদারি চালায়, সাধারণ মানুষকে বাড়ির বাইরে বের না হতে অনুরোধ করে এবং স্থানীয় দোকানপাট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
এই ঘটনার পেছনে আন্তর্জাতিক মাত্রাও উঠে আসছে। প্রতিনিয়ত পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ, অনুপ্রবেশ ও অনলাইন মাধ্যমে মগজধোলাইয়ের প্রক্রিয়া চালু আছে বলেই গোয়েন্দা দফতরের দাবি। সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপ চিহ্নিত হয়েছে, যেখান থেকে কাশ্মীরি তরুণদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জম্মু কাশ্মীরে এই ধরনের সন্ত্রাস দমনের ঘটনা একদিকে যেমন প্রশংসনীয়, অন্যদিকে তেমনি ভবিষ্যতের জন্য বাড়তি সতর্কতাও বয়ে আনে।
কাশ্মীরি রাজনীতিক মুজফফর শাহ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, “সন্ত্রাস দমন যেমন দরকার, তেমনি যুব সম্প্রদায়কে মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো দরকার।” কেন্দ্রের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, নতুন ডেভেলপমেন্ট স্কিম, ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্প এবং পর্যটন বৃদ্ধির পরিকল্পনার মাধ্যমে কাশ্মীরকে একটা স্থিতিশীল ও সুরক্ষিত অর্থনীতির দিশা দেখানো হচ্ছে।

সেনার এই অভিযানের সাফল্য প্রমাণ করে দিচ্ছে, উপত্যকা জুড়ে জঙ্গিদের জন্য আর নিরাপদ ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে না। প্রতিটি পাথরে নজর, প্রতিটি ফোনকলে তথ্য এবং প্রতিটি সন্দেহজনক চলাফেরায় কড়া নজর রাখছে বাহিনী। ধৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরও বড় নেটওয়ার্ক ধরা পড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামী দিনে উপত্যকায় ফের কোনও বড়সড় হামলা বা ষড়যন্ত্রের ছক রুখে দিতে পারে এই অভিযান।
সবমিলিয়ে, শোপিয়ানের এই জঙ্গি গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধার শুধু একটি দিনের খবর নয়, বরং উপত্যকার নিরাপত্তা পরিকাঠামোর দৃঢ়তা এবং সন্ত্রাস মোকাবিলায় সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি। এই ধরনের অভিযানগুলি যত ঘন ঘন হবে, ততই শান্তির দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে কাশ্মীর।