Jagaddhatri is worshiped as Bharatmata in Dubrajpur: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল জগদ্ধাত্রী পুজো। দুর্গা পুজো, কালী পুজো, ভাইফোঁটার পর এবার সমস্ত বাঙালি মেতে উঠেছে এই বিশেষ উৎসবে। দুবরাজপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাজারে ভারতমাতা সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এই জগদ্ধাত্রী পুজো এবার ২৮তম বছরে পদার্পণ করেছে। শহরজুড়ে এই একমাত্র জগদ্ধাত্রী পুজোয় দেবীকে ভারতমাতা রূপে পুজো করা হয়, যেখানে মায়ের এক হাতে থাকে ভারতের জাতীয় পতাকা। দেবী জগদ্ধাত্রীকে জগতের পালিকা শক্তি মনে করা হয়, যিনি চতুর্ভূজা এবং তাঁর এক বিশেষ শক্তি রয়েছে যা সকলকে সুরক্ষা প্রদান করে।
পুজো কমিটির একজন সদস্য জানালেন, “এই বছর আমাদের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বাজেটে পুজো করা হচ্ছে। নতুন মন্দির তৈরির পরিকল্পনা থাকায় পুরনো মন্দিরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাই এবার আমরা থিমের উপর ভিত্তি করে প্যান্ডেলে পুজোর আয়োজন করেছি।” পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল অষ্টমীর চাল কুমড়ো ও আখ বলিদান এবং তার পরেই শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী জয়তারা উৎসব। এই সময়ে পাড়ার যুবকরা বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেন এবং উল্লাসে মেতে ওঠেন। এ যেন এক ঐতিহ্য এবং শ্রদ্ধার মেলবন্ধন, যা শহরবাসীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
এলাকার মানুষদের জন্য এই পুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক সামাজিক উৎসব, যা এলাকার যুবসমাজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের এক বিশেষ উদাহরণ তৈরি করে। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা স্থানীয় প্রতিভাদের উপস্থাপনের সুযোগ দেয়। পুজো কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “আমাদের পুজোতে সামিল হয়ে সকলেই আনন্দে মেতে উঠেছেন। এটি আমাদের এলাকার অন্যতম বড় উৎসব, যেখানে ছোট থেকে বড় সবাই অংশ নেয়।”
বিসর্জনের দিনে প্রতিমা নিয়ে বাদ্যযন্ত্র সহকারে গোটা শহর পরিক্রমা করানো হয়। এই সময় পুরো দুবরাজপুর শহর যেন উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। পুজোর প্রতিমা যখন শহর পরিক্রমায় বের হয়, তখন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে বহু দূর-দূরান্তের ভক্তরাও এই দৃশ্য উপভোগ করেন। পুজো কমিটির এক প্রবীণ সদস্য বলেন, “জগদ্ধাত্রী পুজো আমাদের এলাকায় ঐতিহ্যের প্রতীক। ভারতমাতা রূপে দেবীকে পূজিত করা আমাদের দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।”

দুর্লভ এই ভারতমাতা রূপে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে বহু ভক্ত প্রতিবছর এখানে আসেন। এবার নতুন থিম ও প্যান্ডেল ডিজাইনের কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বেশি বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “এবারের থিম এবং প্যান্ডেল ডিজাইন ভিন্ন ধরনের হওয়ায় আমাদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। নতুন মন্দির নির্মাণের আগে এমন আয়োজন দেখে আমরা খুবই খুশি।”
দুবরাজপুরের এই বিশেষ পুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুজো উদ্যোক্তারা সুষ্ঠু এবং নিরাপদভাবে উৎসব সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা এই পুজোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়ে এলাকার সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন।