ISRO says no information will be available two and a half hours before lightning strikes : ভাবুন তো, আপনি দুপুরবেলা মাঠে গরু চরাচ্ছেন বা বাড়ির ছাদে কাপড় শুকোতে দিয়েছেন, হঠাৎ আকাশ কালো করে আসছে, কিন্তু বুঝতেই পারছেন না কখন কী হবে—আর তার মধ্যেই বজ্রপাত শুরু! ঠিক এই জায়গাতেই এবার সাহস জোগাচ্ছে ইসরো। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এমন এক দিশা দেখিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে। ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার (NRSC) একটি বিশেষ প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে বজ্রপাতের প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগে থেকে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে। এটি সম্ভব হয়েছে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট ইনস্যাট-৩ডি ও ইনস্যাট-৩ডিআরের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে। এই স্যাটেলাইটগুলি প্রতি মিনিটে পৃথিবীর উপরিভাগের ছবি তুলে ধরে, যার সাহায্যে আবহাওয়ার বিভিন্ন পরিবর্তনের ওপর নজর রাখা যায়। এই প্রযুক্তিতে ওএলআর (Outgoing Longwave Radiation), ভূমির তাপমাত্রা এবং মেঘের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছেন। অনেকেই বলছেন এটি “গেম চেঞ্জার” হতে চলেছে ভারতের মতো
দেশে, যেখানে প্রতিবছর বজ্রাঘাতে বহু মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র ২০২২ সালেই দেশে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৫০০ মানুষের, যার মধ্যে অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের কৃষক ও খোলা জায়গায় কর্মরত শ্রমিক। খড়গপুর আইআইটি-র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাতের সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে গত দশ বছরে। ঠিক এই কারণেই এমন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা এতদিনে আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছিল। ইসরোর এই প্রচেষ্টার ফলে, এখন স্থানীয় প্রশাসন, রাজ্য সরকার এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর অনেক আগেই সতর্কতা জারি করতে পারবে। মানুষ ঘরে থাকতে পারবে, চাষিরা মাঠ ফাঁকা করে দিতে পারবেন, এমনকি স্কুল-কলেজও প্রয়োজনে বন্ধ রাখা যেতে পারে। যেমন NRSC-র ডিরেক্টর ডঃ এ ভি কে রমনার মতে, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছিলাম, এবং এখন যে সিস্টেমটি কাজ করছে, তা খুবই নির্ভরযোগ্য। আমরা আশা করি এই তথ্য দেশের প্রতিটি মানুষকে পৌঁছে দিতে পারলে বহু প্রাণহানি আটকানো যাবে।” শুধু সরকারি স্তরেই নয়, বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থাগুলিও বলছে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্কাইমেট ওয়েদার সার্ভিসের চিফ মেটিওরোলজিস্ট মহেশ পালাও বলেন, “ভারতের মতো দেশে, যেখানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস গ্রামাঞ্চলে পৌঁছাতে দেরি হয়, সেখানে এই স্যাটেলাইট-ভিত্তিক আগাম তথ্য জীবনদায়ক হতে পারে।” পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তরবঙ্গের অনেক অংশে নিয়মিত বজ্রপাত হয় বর্ষাকালে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট না থাকায় তথ্য পৌঁছতে দেরি হয়, কিন্তু ইসরো যদি রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে মিলে মোবাইল অ্যাপ বা এসএমএস অ্যালার্ট চালু করতে পারে, তাহলে আরও কার্যকর হবে এই

ব্যবস্থা। গ্রামের মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে, “আগে জানলে মাঠে যাই না, অনেক সময় হঠাৎ বজ্রপাত হয়, বুঝতে পারি না। যদি আগে খবর মেলে, তাহলে আমরা আগে থেকেই সুরক্ষায় থাকব।” এই কথাগুলি বলছিলেন বর্ধমানের এক কৃষক বিভাস মণ্ডল। ইসরোর গবেষকরা বলছেন, প্রতিটি বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া যাবে না কারণ আবহাওয়া অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং বাতাসের আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ—এই সবকিছু একসঙ্গে কাজ করে বজ্রপাতের সৃষ্টি করতে। কিন্তু, যে বড় বজ্রপাতগুলি প্রাণঘাতী হতে পারে, তা শনাক্ত করার ক্ষমতা এই নতুন প্রযুক্তির রয়েছে। বর্তমানে এটি পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু রাজ্যে শুরু হয়েছে, এবং ধাপে ধাপে গোটা দেশে এই প্রযুক্তি চালু করা হবে। ভবিষ্যতে, যদি এই প্রযুক্তিকে আরও শক্তিশালী করা যায়, তাহলে শুধু বজ্রপাত নয়, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, ভারী বৃষ্টি, এমনকি হঠাৎ শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাসও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে করে কৃষি, ট্রান্সপোর্ট, স্কুল-কলেজ, পর্যটন, এমনকি দৈনন্দিন জীবনযাপনও অনেক বেশি পরিকল্পিত ও নিরাপদ হবে। এর সঙ্গে জুড়ে যেতে পারে নতুন ডিজিটাল ব্যবস্থা—মোবাইল অ্যাপ, ভয়েস অ্যালার্ট, রেডিও বার্তা, টিভি স্ক্রল, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া আপডেটের মাধ্যমেও এই তথ্য ছড়ানো যেতে পারে। ইসরো এই তথ্যগুলি সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছনোর জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, পঞ্চায়েত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যেও প্রচারাভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রযুক্তি শুধু বিজ্ঞান নয়, মানবিকতারও এক বড় সাফল্য। সাধারণ মানুষ, চাষি, শ্রমিক, ছাত্র—সবার জন্যই এই ব্যবস্থা একটি বড় আশার আলো। এখন দেখার বিষয়, এই প্রযুক্তি কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে মানুষের হাতে পৌঁছায় এবং তার ফলে প্রাণহানি রোধে কতটা সফল হয়। তবে একথা বলাই যায়—ইসরোর এই সাফল্য শুধু একটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নয়, এটি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে এক নতুন আশ্বাস, এক নতুন নিরাপত্তা।