ISRO is about to set a precedent 101st rocket launch:ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক তৈরি করতে চলেছে ইসরো। ২০২৫ সালের ১৮ই মে, শনি সকালে, শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে ইসরোর ১০১তম রকেট PSLV-C61। এই রকেট বহন করবে RISAT-18 নামক একটি অত্যাধুনিক পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ, যা দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, কৃষিকাজ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুধু প্রযুক্তিগত নয়, আত্মনির্ভর ভারত গঠনের দিকেও আরও এক ধাপ এগোবে ভারত। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ইসরো চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন জানান, “এই উৎক্ষেপণ শুধু একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
” তিনি আরও বলেন, “ইসরো জানুয়ারি মাসে ১০০তম উৎক্ষেপণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, এবার আরও জটিল প্রযুক্তি এবং উচ্চতর দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন উপগ্রহ নিয়ে আসছে RISAT-18।” এই উপগ্রহটি মূলত রাডার ইমেজিং স্যাটেলাইট, যার মাধ্যমে রাত-দিন এবং খারাপ আবহাওয়াতেও পরিষ্কার ছবি সংগ্রহ করা যাবে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চলগুলোতে নজরদারি চালানো সহজ হবে। শুধু তাই নয়, এই উপগ্রহ কৃষকদের জন্যও এক আশার আলো। বিশেষ করে দেশের যেসব জায়গায় খরা বা বন্যার ঝুঁকি বেশি, সেই অঞ্চলগুলোর উপরে নজর রেখে আগাম সতর্কতা ও পরিকল্পনা তৈরি করা যাবে। এছাড়া RISAT-18 এর তথ্য বিশ্লেষণ করে মাটির আর্দ্রতা, ফসলের গুণমান এবং সম্ভাব্য রোগের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হবে, যা কৃষিকাজে বড় সহায়ক হবে।

এই ধরনের প্রযুক্তি সাধারণত উন্নত দেশগুলো ব্যবহার করে, কিন্তু এখন ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে সেই উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। উৎক্ষেপণের দিন ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে – ১৮ই মে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট। বিশিষ্ট মহাকাশ বিজ্ঞানী ও ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডঃ কিরণ কুমার এই উদ্যোগকে ‘একটি নিঃশব্দ বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “RISAT-18 হল সেই প্রযুক্তি যার জন্য আমরা এক দশক ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আজ আমরা শুধু উৎক্ষেপণ করছি না, আমরা ভবিষ্যতের ভারত গড়ে তুলছি।” শ্রীহরিকোটার বাসিন্দাদের মধ্যে এই উৎক্ষেপণ ঘিরে প্রবল উত্তেজনা। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই শহরে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন উৎক্ষেপণের মুহূর্ত নিজ চোখে দেখার জন্য। স্থানীয় দোকান, হোটেল ও পরিবহণ পরিষেবায় নতুন করে প্রাণ এসেছে। ছোট ছোট স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ, সবাই চাইছে এই ইতিহাস সাক্ষাৎকারের অংশ হতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে উত্তেজনা। বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ প্রজন্ম, ইউটিউবার, ইনস্টাগ্রামার ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্লগাররা ইতিমধ্যেই লাইভ আপডেট দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই উৎক্ষেপণকে ‘ভারতের আত্মনির্ভর মহাকাশ শক্তির নতুন সূচনা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এক টুইটে লেখেন, “ইসরোর ১০১তম উৎক্ষেপণ শুধুই সংখ্যা নয়, এটি আমাদের বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আত্মবিশ্বাসের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।” এই রকেট উৎক্ষেপণের ভবিষ্যৎ প্রভাবও অনেক। একদিকে, ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইটে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আরও দৃঢ় ও প্রযুক্তিসম্পন্ন হবে। তৃতীয়ত, কৃষি, দুর্যোগ মোকাবিলা ও নগর পরিকল্পনায় এই ধরনের ডেটা বিশ্লেষণ অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনবে। একদিকে যেমন দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ঘটবে, অন্যদিকে এই উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি ও তথ্য বিদেশেও বিক্রি করে রাজস্ব আয় বাড়াতে পারবে ভারত। অর্থাৎ এই উৎক্ষেপণ শুধু বৈজ্ঞানিক নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য, RISAT সিরিজের প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ হয়েছিল ২০০৯ সালে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এই সিরিজ ভারতীয় নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। RISAT-18 হচ্ছে এই সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ, যার রাডার ইমেজিং ক্ষমতা অতুলনীয়। এই সফল উৎক্ষেপণ ইসরোর পরবর্তী বড় মিশন, যেমন Gaganyaan (মানব অভিযানের), জন্য আত্মবিশ্বাসও জোগাবে।

সব মিলিয়ে, ১৮ মে’র উৎক্ষেপণ শুধু একটি তারিখ নয় – এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গর্ব, প্রতিজ্ঞা ও অদম্য অগ্রগতির প্রতীক হয়ে থাকবে। আজকের দিনে যখন গোটা পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ, এবং নিরাপত্তার সমস্যায় জর্জরিত, তখন ইসরোর এই ধরনের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ভারতের হাতে এনে দিচ্ছে এক অদম্য শক্তি – তথ্য, নজরদারি এবং প্রতিরোধের অস্ত্র। এর ফলস্বরূপ গ্রামীণ কৃষক থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী – সবাই উপকৃত হবে এই উপগ্রহের তথ্য ব্যবস্থার দ্বারা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, কখন আকাশে উঠে যাবে PSLV-C61, আর ভারত দেখবে তার ১০১তম মহাজাগতিক জয়।