Israeli Prime Minister sick with food poisoning : বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে ইসরায়েল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ, আর সেই দেশের প্রধান নেতৃত্বে রয়েছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বহু বিতর্ক, কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সামরিক সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যিনি দীর্ঘ সময় ধরে দেশের হাল ধরে রেখেছেন, তিনিই এবার নিজেই পড়েছেন শারীরিক বিপদের মুখে। বয়সের ভারে কিছুটা দুর্বল হলেও রাজনৈতিকভাবে এখনও তিনি আগের মতোই দৃঢ়। কিন্তু এবার এক অপ্রত্যাশিত ও আশঙ্কাজনক ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো তাঁকে—খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এই প্রবীণ নেতা। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা বিশ্বের নজর ঘুরে গিয়েছে নেতানিয়াহুর শারীরিক অবস্থার দিকে।প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৭৫ বছর বয়সি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা কোনও বিষাক্ত পদার্থের কারণে তাঁর অন্ত্রে প্রদাহ দেখা দিয়েছে এবং সঙ্গে রয়েছে তীব্র ডিহাইড্রেশন। শরীরে জলের ঘাটতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, তাঁকে অবিলম্বে স্যালাইন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় চিকিৎসকদের। এই মুহূর্তে তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এবং বাড়িতে থেকেই তিনদিন কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানানো হয়েছে।তবে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি গুরুতর নয়। বরং শারীরিকভাবে তিনি আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ বোধ করছেন। যদিও কিছুদিন আগেই নেতানিয়াহুর শরীরে পেসমেকার বসানো হয়েছিল এবং প্রস্টেট সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারও হয়েছিল, তাই নতুন করে এমন একটি শারীরিক বিপর্যয় তাঁর শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
নেতানিয়াহুর দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আপাতত চিকিৎসকদের নির্দেশ মেনে চলছেন এবং আগামী তিনদিন অফিসের বদলে বাড়ি থেকেই সব কাজ পরিচালনা করবেন। তাঁদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো আগামী কয়েকদিন অফিস না গিয়েই কাজ চালিয়ে যাবেন তিনি।” এই বিবৃতি সাময়িক স্বস্তি দিলেও খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো বিষয় সামনে আসায় উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।ইসরায়েলের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই এটিকে একটি “দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা” হিসেবে দেখলেও, কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, একটি সুরক্ষিত রাষ্ট্রনেতার খাদ্যে কীভাবে বিষক্রিয়া হতে পারে? সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা দেখছেন। তাঁদের মতে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নাও হতে পারে। অপরদিকে, নেতানিয়াহুর সমর্থকরা প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

এই ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্য বিশাল। একজন শীর্ষ রাষ্ট্রনেতার এমন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তোলে। ইসরায়েল এমন একটি দেশ, যেখানে রাজনৈতিক মতবিরোধ, উগ্রপন্থী হুমকি ও আন্তর্জাতিক বিরোধ প্রতিনিয়ত মাথা চাড়া দেয়। এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর খাদ্যে বিষক্রিয়া নিছক দুর্ঘটনা না হয়ে পরিকল্পিত হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া, নেতানিয়াহুর পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলিও নতুন করে সামনে চলে এসেছে। ২০২৩ সালে তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়েছিল এবং গত বছর প্রস্টেট অপারেশনের জন্য বেশ কিছুদিন তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সেই সময় তাঁর অনুপস্থিতিতে ন্যায়বিচার দপ্তরের মন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন।

সুতরাং, নেতানিয়াহুর অনুপস্থিতি রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।যদিও আপাতত তিনদিনের জন্য বাড়ি থেকে কাজ করার কথা বলা হয়েছে, তবে এমন অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে আরও সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে এই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত তদন্তও। খাদ্যে বিষক্রিয়া কিভাবে ঘটল, কোন খাবারের মাধ্যমে সেটি শরীরে প্রবেশ করল, সেই প্রশ্নগুলির উত্তর এখনও অজানা। ভবিষ্যতে যদি এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকে, তাহলে তা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে এই ঘটনার পর শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, রাজনৈতিক পরিণতিও বেশ গুরুতর হতে পারে।ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া এবং তার পেছনে খাদ্যে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক মহলেও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন প্রবীণ রাষ্ট্রনেতা যিনি একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে জয় করে এখনও দেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, তাঁর এই শারীরিক অসুস্থতা নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের বার্তা দেয়। যদিও সরকারি সূত্রের আশ্বাসে বলা হচ্ছে অবস্থা স্থিতিশীল, তবুও এমন ঘটনা থেকে ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের সতর্কতার প্রয়োজন আছে।