Israeli attack on Gaza, 400 dead after ceasefire ends:গাজা আবার রক্তাক্ত। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইজরায়েলি বাহিনী গাজায় ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই গাজার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে টার্গেট করে শুরু হয়েছে এই আক্রমণ। বিশেষ করে নেতজারিম করিডর দখল করে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে সাঁজোয়া বাহিনী এবং বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। গত দুই দিনে ইজরায়েলি সেনাদের হামলায় অন্তত ৪৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৮৩ জন শিশু। পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক যে গাজার সাধারণ মানুষ প্রতিমুহূর্তে জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
গাজা সিটি, রাফা এবং খান ইউনুসের মতো এলাকা ইজরায়েলি বিমান এবং ট্যাঙ্ক হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তা, হাসপাতাল, স্কুল—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত। এই হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন, এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে আহতদের জায়গা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বেড নেই, ওষুধ নেই, এমনকি জরুরি খাদ্য এবং পানীয় জলের অভাবও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ইজরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এই আক্রমণ হামাসের ঘাঁটি এবং কৌশলগত অবস্থানগুলিতে চালানো হয়েছে। তারা বলছে, গাজা থেকে আসা রকেট হামলার জবাব দিতেই এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। অন্যদিকে, হামাসের বক্তব্য অনুযায়ী, ইজরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে তাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার সাধারণ মানুষ। বোমার শব্দে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, “প্রতিটি বোমা ফাটার সঙ্গে মনে হচ্ছে আমরা যেন ধ্বংসের আরেকধাপ কাছে চলে যাচ্ছি। কোথায় পালাবো, কোথায় আশ্রয় নেবো, জানি না।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। “আমরা বারবার বলেছি যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরে গাজায় শান্তি ফিরবে বলে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সাধারণ মানুষের উপর আরও বড় আক্রমণ নেমে এসেছে,” বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন মুখপাত্র।
গাজার এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন বিশ্বনেতা ইজরায়েল ও হামাস উভয়কেই সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে কোনো পক্ষই আপস করতে প্রস্তুত নয়।
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই সংঘাত কতদূর গড়াবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আক্রমণের ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়বে। ইজরায়েলি আক্রমণ যদি এইভাবে চলতে থাকে, তবে গাজা কেবল মানবিক সংকটের মুখে পড়বে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
এদিকে, গাজার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জলের সংকট, খাদ্য সরবরাহ প্রায় বন্ধ। পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া একটি পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, “আমরা রাতেও ঘুমাতে পারি না। যখন মনে হয় কিছুটা শান্তি এসেছে, তখনই আবার বিমান হামলার শব্দ।”
ইজরায়েলি আক্রমণের কারণে হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। আশ্রয় শিবিরগুলিতে ঠাঁই নিয়েছেন। কিন্তু সেই শিবিরগুলিতেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। খাবার, ওষুধ, নিরাপত্তা—সবকিছুরই অভাব। এই সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজায় সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করলেও ইজরায়েলের কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে সেই সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
হামাস এই পরিস্থিতিতে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আরও সক্রিয় হয়েছে। তারা গাজা থেকে ইজরায়েলের দিকে পাল্টা রকেট হামলা চালাচ্ছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। গাজার সাধারণ মানুষও দ্বিধায় রয়েছেন। কেউ মনে করছেন, হামাসের নেতৃত্বে এই প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া উচিত, আবার কেউ শান্তি ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী।
এই মুহূর্তে গাজার সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে মানবিক সহায়তা। রেড ক্রস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে শিশু এবং মহিলাদের জন্য চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি উঠছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সংঘাত বন্ধ করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। তারা মনে করেন, ইজরায়েল এবং হামাস উভয়ের মধ্যেই যদি কোনো স্থায়ী শান্তি চুক্তি না হয়, তবে এই ধরনের সংঘাত বারবার ফিরে আসবে এবং প্রতিবার সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই সংকটের একটি বড় দিক হলো, বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলি এই সংঘাত বন্ধে কতটা ভূমিকা নেবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মহলে ইজরায়েলের সমালোচনা যেমন হচ্ছে, তেমনই হামাসের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
গাজার এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি শুধু একটি অঞ্চলের সংকট নয়, বরং এটি বিশ্ব রাজনীতির একটি জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দ্রুত এই সংঘাত বন্ধ হবে, ততই ভালো। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো পক্ষই শান্তি আলোচনার পথে এগোতে রাজি নয়, যা পুরো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।