Ishan Kishan scores century, Hyderabad wins : জাতীয় দলে দীর্ঘদিন ধরেই নেই ঈশান কিষান। বিসিসিআই-এর রোষ, কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়া, এবং একাধিক প্রতিযোগিতায় উপেক্ষা—সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন বিহার-ঝাড়খণ্ডের তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ঈশান কিষান। তবে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই আবারও প্রমাণ করলেন নিজের ক্ষমতা। ২৩ মার্চ ২০২৫, আইপিএল-এর দ্বিতীয় দিনে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ শতরান করে শিরোনামে এলেন ঈশান কিষান। তাঁর ৪৭ বলে অপরাজিত ১০৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে জয় পেল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ।
তাঁর ইনিংসে ছিল ১১টি চার এবং ৬টি বিশাল ছয়। প্রতিটি শট ছিল রাজস্থান বোলারদের ওপর যেন এক একবার মেঘের মতো গর্জন। এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যেন আবারও মনে করিয়ে দিল ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর সেই ঐতিহাসিক ২০০ রানের ইনিংস, যেখানে প্রতিপক্ষের মাঠেই চমকে দিয়েছিলেন ক্রিকেটবিশ্বকে।
তবে এই শতরান শুধুমাত্র একটি ম্যাচ জেতার গল্প নয়; এটি ঈশানের লড়াই, জেদ এবং প্রতিভার প্রতিচ্ছবি। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় দলের বাইরে থাকা ঈশানকে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএলকেই নিজের প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চ বানাতে হয়েছে। চোট, খারাপ ফর্ম, এবং নির্বাচকদের উপেক্ষা সত্ত্বেও নিজের ফোকাস হারাননি এই তরুণ খেলোয়াড়। রাজস্থানের বিরুদ্ধে তাঁর এই ইনিংসটি যেন নির্বাচকদের কাছে এক জোরালো বার্তা—”আমি তৈরি, আমাকে সুযোগ দিন।”
কেমন ছিল ম্যাচের পরিস্থিতি?
রাজস্থান রয়্যালস টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অধিনায়ক প্যাট কামিংসের নেতৃত্বে ব্যাটিং লাইনআপ ভালো শুরু করলেও মাঝের ওভারে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়। রাজস্থান ২০ ওভারে ১৭৫ রানের লক্ষ্য দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কিছুটা নড়বড়ে অবস্থা হয় হায়দ্রাবাদের। ওপেনাররা দ্রুত আউট হয়ে যান। তখনই মাঠে নামেন ঈশান কিষান।
ঈশান কিষানের ইনিংস: ম্যাচ ঘোরানো মুহূর্ত
ঈশান নামার পর থেকে পুরো ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে যায়। প্রথমে ধীরে শুরু করলেও তৃতীয় ওভারের পর থেকে একের পর এক বাউন্ডারি মেরে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে থাকেন তিনি। তাঁর শটসিলেকশন, টাইমিং এবং ছক্কার ঝড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন রাজস্থানের বোলাররা। বোলারদের মধ্যে বিশেষত ট্রেন্ট বোল্ট এবং সাঞ্জু সামসনকে বারবার আক্রমণ করেন ঈশান। ইনিংসের ১৫তম ওভারে মাত্র ৪০ বলেই নিজের শতরান পূর্ণ করেন তিনি। তখনই বোঝা যায়, জয়ের রাস্তা সহজ হয়ে গিয়েছে হায়দ্রাবাদের জন্য। শেষ পর্যন্ত ১৮তম ওভারে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তিনি।
জাতীয় দলের নির্বাচকদের মুখে ঝামা ঘষলেন ঈশান
আইপিএল মঞ্চকে ঈশান বারবারই প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এর আগেও বেশ কিছু ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচকদের বিশ্বাস আদায় করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি—একাধিক বড় টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছেন। তবে এবার কী হবে? ঈশানের এই শতরানের পর কি জাতীয় দলের দরজা খুলবে? এই প্রশ্ন এখন ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ঈশানের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে ঈশান কিষান বলেন, “আমি শুধু নিজের খেলাটা খেলতে চেয়েছিলাম। গত কয়েক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করছি। যখন সুযোগ পাই না, তখন কষ্ট লাগে। কিন্তু আমি জানি, আমার কাজ মাঠে পারফর্ম করা। আজ দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে খুব ভালো লাগছে।”
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার বলেন, “ঈশান যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তা বিশ্বমানের। ওকে আর উপেক্ষা করা কঠিন হবে। ভারতের ভবিষ্যৎ টি-টোয়েন্টি দলের জন্য ওকে অবশ্যই ভাবা উচিত।” অন্যদিকে, আইপিএল ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বলেন, “ঈশানের এই ইনিংসটি শুধুমাত্র হায়দ্রাবাদকে নয়, ভারতীয় ক্রিকেটকেও ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় বার্তা দিল।”
হায়দ্রাবাদের উত্থান
ঈশানের ইনিংস শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জয় নয়, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই জয়ের ফলে তারা আইপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবিলে ভালো জায়গায় উঠে এসেছে। দলের কোচ ট্রেভর বেলিস বলেন, “ঈশান আজ অসাধারণ খেলেছে। ওর মতো একজন ব্যাটসম্যান দলে থাকা মানে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।”
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
ঈশান কিষানের এই শতরান শুধু আইপিএল-এ একটি ম্যাচ জয়ের গল্প নয়; এটি তাঁর ফিরে আসার গল্প, নিজেকে বারবার প্রমাণ করার গল্প। জাতীয় দলের নির্বাচকরা এবার কি তাঁর দিকে নজর দেবেন? ক্রিকেটপ্রেমীরা সেই উত্তর খুঁজছেন। তবে একটা কথা স্পষ্ট—ঈশান কিষান আরও বড় কিছু করতে প্রস্তুত, এবং তিনি ফিরে এসেছেন আরও শক্তিশালী হয়ে।