Is Trump on the verge of shutting down Voice of America?মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বরাবরই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য আলোচিত হয়েছে। এবার সেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে ভয়েস অব আমেরিকা (VOA)। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিল থেকে পরিচালিত এই আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সংস্থাটি কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। তবে ট্রাম্পের মতে, এই সংস্থাটি তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করছে এবং করদাতাদের অর্থ ‘ভুল’ কাজে লাগানো হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা এমন একটি সংস্থায় অর্থ ব্যয় করতে পারি না যা উগ্রবাদী প্রচার চালায় এবং মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে।
” ভয়েস অব আমেরিকা মূলত বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রচারে ভূমিকা রেখে এসেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, সংস্থাটি নিরপেক্ষতার নিয়ম ভঙ্গ করছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন সংবাদ প্রচার করছে যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। এর জেরে ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জগতে বিশাল প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, “ভিওএ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের নানা প্রান্তে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের জন্য কাজ করেছে। একে বন্ধ করে দেওয়া মানে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা।” বিশ্লেষকদের মতে, ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই দেশগুলোর জনগণ, যেখানে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর জনগণের জন্য ভিওএ ছিল স্বাধীন তথ্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ভয়েস অব আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, যাতে এটি সরকারের প্রচার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামোর কারণে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা খুব সহজ হবে না। মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য ইতোমধ্যে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিজেদের মত দিয়েছেন এবং একে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে বর্ণনা করেছেন। এদিকে, ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন, ভিওএ দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন প্রশাসনের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং একে সংস্কার করা দরকার। তবে সমালোচকরা মনে করছেন, এটি মূলত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার একটি প্রচেষ্টা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বরাবরই সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে ‘ভুয়া সংবাদ প্রচারকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধ হয়ে গেলে সেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রচার নীতিতে বিশাল পরিবর্তন আনবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় কিনা এবং হলে তার প্রভাব কীভাবে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে।