Is Trump behind the possibility of an attack on Iran’s nuclear facilities? : ইরান আবারও আন্তর্জাতিক নজরে। আর এবার সেটা শুধু কূটনৈতিক টেবিলে নয়, সরাসরি সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘিরে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-এর এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন সম্প্রতি দাবি করেছে, ইজরায়েল খুব শীঘ্রই ইরানের একটি বা একাধিক পরমাণু ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে। এই খবর সামনে আসার পর থেকেই রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে রাষ্ট্রসংঘ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বড় শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে। যদিও ইজরায়েল সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত বক্তব্য প্রকাশ পায়নি, কিন্তু পশ্চিমি গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, ইরানের ‘জেদি’ অবস্থান এবং একগুঁয়ে পরমাণু কর্মসূচিই এই টানাপোড়েনের মূল কারণ। সূত্রের দাবি, তেহরান ইতিমধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে এমন মাত্রা স্পর্শ করেছে, যা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের কাছে বিপদের ঘণ্টা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

ইরান বারবার জানিয়ে এসেছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, কিন্তু বাস্তবে যে তা নয়, তারই প্রমাণস্বরূপ বিভিন্ন সময় উপগ্রহচিত্র, স্যাটেলাইট ফুটেজ, এমনকি হ্যাকড রিপোর্ট পর্যন্ত সামনে এনেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হল, এই উত্তেজনার মূলে রয়েছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি নিজের প্রশাসনকালে ২০১৮ সালে ইরান নিউক্লিয়ার চুক্তি (JCPOA) থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেন। এরপর থেকে তিনি বারবার ইরানকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমনকি একবার বলেছিলেন, “ইরান যদি পরমাণু বোমা তৈরির পথ থেকে না সরে, তবে আমরা এমন এক প্রতিশোধ নেব যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।” ট্রাম্পের এই যুদ্ধংদেহী অবস্থান এবং ইজরায়েলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই আজকের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রধান নিয়ামক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই সম্ভাব্য হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। একাধিক সদস্যদেশ এরই মধ্যে ইজরায়েল ও ইরান—উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানি একযোগে জানিয়েছে, “পরমাণু স্থাপনায় হামলা মানে গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ধ্বংস হয়ে যাওয়া।” এমনকি রাশিয়া ও চীন, যারা ইরানের কৌশলগত মিত্র, তারা স্পষ্ট বলেছে যে, “কোনও একতরফা সামরিক পদক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।” তবে তেহরান এখনও এই সম্ভাব্য হামলা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও, ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড বাহিনী ও দেশের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে ইতিমধ্যে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলে খবর।
তবে এই উত্তেজনার প্রভাব শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেই আটকে নেই, এর স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে স্থানীয় মানুষদের উপরেও। ইরানের ধইরান অঞ্চলের যেখানে এই পরমাণু ঘাঁটি অবস্থিত, সেখানে ধসের আশঙ্কা তো আছেই, তার চেয়েও বড় ভয় হল—একটি বিমান হানা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে পুরো এলাকা ভয়াবহ পারমাণবিক দূষণে আক্রান্ত হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি আফশার এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের বলা হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন, কিন্তু কোথায় যাব? সরকার তো এখনো কোনও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি।” ধইরানের আশপাশের গ্রামগুলি বিশেষ করে হরিশপুর, সেখানে আতঙ্ক এতটাই যে, অনেকে ইতিমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়ি চলে গিয়েছেন। সাবিনা কুরেশি, এক স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা বলেন, “আমাদের বাড়ি ধইরানের খুব কাছেই। প্রতিদিন শিশুরা স্কুলে আসছে ভয়ে ভয়ে। একটা বোমা পড়লে আমাদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে।”
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই হুমকির মুখে দাঁড়িয়েও হরিশপুরবাসীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আজও হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত শুধু সতর্কতা জারি করা হয়েছে, বাস্তবে কোনও স্থায়ী পদক্ষেপ বা রিলিফ ক্যাম্প চালু হয়নি। এই বিষয়ে ইরানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে, “পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।” কিন্তু কবে সেই প্রয়োজন আসবে, কবে মানুষ আশ্বস্ত হবে, তা কেউ জানে না।
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ইজরায়েল আসলে সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে কূটনৈতিক চাপে ফেলতে চাইছে ইরানকে। কারণ, আমেরিকার সঙ্গে বর্তমানে ইরানের সম্পর্ক একপ্রকার ঠান্ডা যুদ্ধের রূপ নিয়েছে, সেখানে আবার ইজরায়েলও যেহেতু আমেরিকার ঘনিষ্ঠ, তাই একত্রে এই চাপে ফেলে ইরানকে পুরনো পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরিয়ে আনার একটি বড় খেলা চলছে। তবে অন্য অংশের মতে, “ইজরায়েল কোনও হুঁশিয়ারি দিয়ে থামবে না, তারা সত্যিই কিছু একটা করতে চলেছে।” কারণ গত কয়েক মাসে সিরিয়া, গাজা, এমনকি লেবানন সীমান্তে ইজরায়েলের সক্রিয়তা কিন্তু অনেকটাই বেড়েছে।
এই গোটা পরিস্থিতির সবথেকে ভয়ঙ্কর দিক হল—একবার হামলা হলে শুধু ইরান-ইজরায়েল নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য জ্বলতে শুরু করবে। আর তার প্রভাব এসে পড়বে ভারত-পাকিস্তান থেকেও। কারণ ভারত এখন ইরানের সঙ্গে একাধিক কৌশলগত প্রকল্পে যুক্ত, বিশেষত চাবাহার বন্দর ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পরিকল্পনা রয়েছে। যদি ইরানে যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হয়, তবে তেলের দাম হঠাৎ করে আকাশ ছোঁবে, ফলে ভারতের সাধারণ মানুষের উপরেও চাপ বাড়বে।
সবশেষে বলাই যায়, ধইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে সম্ভাব্য হামলার এই আশঙ্কা শুধুই এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশের প্রতিরক্ষা নয়, এটি গোটা বিশ্বের ওপর এক পরোক্ষ হুমকি। আর এই হুমকির ছায়ায় দিন কাটাচ্ছেন হরিশপুরের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকেরা। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয় ইজরায়েল, আর কতটা সরাসরি যুক্ত হয় মার্কিন নেতৃত্ব, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকেরা—এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই আটকে রয়েছে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, আর বিশ্বের শান্তি।