INTTUC: শিলিগুড়ির রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা ছড়ালো তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ ও তৃণমূল নেতা দিলীপ বর্মনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন INTTUC। প্রধাননগর থানার সামনে থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করল INTTUC-র কর্মী-সমর্থকেরা। মূল অভিযোগ, শিলিগুড়ির রেগুলেটেড মার্কেটে শ্রমিক নিয়োগকে কেন্দ্র করে এক ব্যবসায়ী শ্রবণ সাহাকে মারধর করেছেন দিলীপ বর্মন এবং তার সঙ্গীরা। এর পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে, শ্রবণ সাহাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তার গদিতে জোরপূর্বক এক শ্রমিক নিয়োগের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শিলিগুড়ির রেগুলেটেড মার্কেটের একটি শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যাকে ঘিরে। শ্রবণ সাহা অভিযোগ করেছেন, তার গদিতে কাজ করা শ্রমিকের পরিবর্তে দিলীপ বর্মন তার মনোনীত শ্রমিককে নিয়োগ করতে চাপ দিচ্ছেন। সেই শ্রমিক আবার বিহারের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। গদির মালিক এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শনিবার দিলীপ বর্মন ও তার সঙ্গীরা গদিতে হামলা চালান বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, রবিবার ফের শ্রবণ সাহাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
এ নিয়ে সোমবার দিলীপ বর্মনের গ্রেফতারির দাবিতে শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে INTTUC কর্মীরা একত্রিত হয়ে প্রধাননগর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবি, দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে এভাবে অভিযোগ ওঠা দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত করছে। এছাড়াও প্রধাননগর থানার আইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে তারা থানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করে।
অন্যদিকে দিলীপ বর্মন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য, গদির নিয়ম অনুযায়ী যে শ্রমিকের কাজ করার কথা, তাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর বদলে বাইরের এক শ্রমিককে গদিতে নিয়োগের চেষ্টা চলছে টাকার বিনিময়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে তার দাবি। দিলীপ বর্মন আরও বলেন, “কেউ থানায় অভিযোগ করলেই যে সেটা সত্যি হয়ে যাবে, এমন নয়। অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে।”
পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব এই ঘটনায় বলেন, “আমি এখনও পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে দেখব ঠিক কী হয়েছে। দল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক, এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ছে। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে দলের তরফে একের পর এক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেখানে দলের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় ইতিমধ্যেই দলের উচ্চ নেতৃত্ব ঘটনাটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শিলিগুড়ির রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনা, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ আরও গভীর হলে আসন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বলেছেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই প্রমাণ করছে, তারা জনগণের স্বার্থ নয়, নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।”
তৃণমূলের পক্ষ থেকে INTTUC-র এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে রাজ্য তৃণমূল নেতা ভি শিবদাসন দাসু বলেন, “আমাদের দল সব সময় সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়। কোনো অনৈতিক কাজ হলে দল ব্যবস্থা নেবে।” তবে এই ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে এবং কেন তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
এই ঘটনা শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কলহ এবং বিরোধীদের আক্রমণকে কেন্দ্র করে আসন্ন নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেটাই দেখার।