Insects in biryani meat in Siliguri, Purnigam in custody! : এক থাল বিরিয়ানি—বাঙালির জন্য শুধু খাবার নয়, উৎসবের অংশ। কিন্তু সেই বিরিয়ানিতেই যদি পোকা পাওয়া যায়? তাও আবার রেস্তোরাঁয় বসে খেতে গিয়ে? এই এক ঘটনায় এখন তোলপাড় গোটা শিলিগুড়ি শহর। চম্পাসারির এক নামী বিরিয়ানি দোকানে খাওয়ার সময় মাংসের মধ্যে পোকা দেখতে পান এক ক্রেতা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও তুলে তা পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে। মুহূর্তে ভাইরাল হয় ভিডিওটি। রাগে, দুঃখে, আতঙ্কে ফেটে পড়ে শহরের মানুষ। অভিযোগের তির শিলিগুড়ি পুরনিগমের দিকে। প্রশ্ন উঠছে—এই শহরে কে দেখছে খাবারের মান? কোথায় স্বাস্থ্যবিধি? কে দিচ্ছে অনুমতি?ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামেন বঙ্গীয় হিন্দু মহামঞ্চের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার তাঁরা শিলিগুড়ি পুরভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান—“মেয়রবাবু বিরিয়ানি খাবেন?” তাঁদের দাবি, শহরের নানা প্রান্তে যে হারে বিরিয়ানি দোকান গজিয়ে উঠছে, তাতে স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুরনিগম দু’টিই কার্যত উদাসীন। কোনও নিয়ম মানা হচ্ছে না, কোনও পরিদর্শন নেই, অথচ মানুষ ঠকে যাচ্ছে প্রতিদিন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ আরও গভীর—“এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এমন ঘটনায় পুরনিগম কড়া ব্যবস্থা নেয়নি। আজও খাদ্য দফতর ঘুমিয়ে। পুরনিগমও দায় ঝেড়ে ফেলছে।”
বিক্ষোভের সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঞ্চের কর্মীদের পুরভবনের গেটের সামনে আটকে দেওয়া হয়। তবে তাঁদের অবস্থান প্রতিবাদ থেমে যায়নি। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, “যদি অবিলম্বে পুরনিগম এবং স্বাস্থ্য বিভাগ শহরের সব রেস্তোরাঁয় তদারকি না চালায়, তাহলে আরও বৃহত্তর আন্দোলন হবে।”এই ঘটনায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। চম্পাসারির স্থানীয় বাসিন্দা প্রবাল দাস বলেন, “শুধু চম্পাসারিই নয়, এখন প্রতিটি এলাকায় রোজ নতুন বিরিয়ানি দোকান খুলছে। কিন্তু সেগুলির রান্নাঘর, স্টোরেজ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো তদারকি নেই। আমরা কী খাচ্ছি, সেটা জানার অধিকার কি নেই?”
এই নিয়ে শিলিগুড়ি পুরনিগমের এক স্বাস্থ্য আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাদ্য ও স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান শুরু হবে।” তবে বিক্ষোভকারীরা এটিকে “রুটিন আশ্বাস” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, পুরনিগমের আশ্বাসে ভরসা নেই, কারণ পূর্বের অভিযোগগুলির কোনো কার্যকর পদক্ষেপই হয়নি।এই বিতর্ক রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় তৈরি করেছে। বিরোধী দলের এক নেতা বলেন, “শিলিগুড়ি শহর এখন ব্যবসার আড়ালে এক অব্যবস্থার জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পুরনিগম নির্লিপ্ত। মানুষ প্রতিদিন বিষ খাচ্ছে আর প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।”
তবে শাসক শিবির পাল্টা দাবি করেছে, “ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক হলেও, প্রশাসন তৎপর। কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। খাদ্য পরীক্ষার মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”এই ঘটনার পর শহরের বিভিন্ন খাদ্য সরবরাহকারী ও হোটেল মালিকদের মধ্যেও একরকম গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এবার হয়তো পুরনিগম কড়া অভিযান চালাতে পারে। ইতিমধ্যেই কিছু দোকানে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা কেবল একটি রেস্তোরাঁ বা একটি বিরিয়ানি নয়—এটা একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকেত। নিয়মিত খাদ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সনদ, রান্নাঘরের মান যাচাই—এসব নিয়ে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে শহরে খাদ্যবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ শ্রীময়ী গুহ বলেন, “পচা মাংস বা দূষিত খাবার থেকে জ্বর, ফুড পয়জনিং, এমনকি টাইফয়েডের মতো রোগও ছড়াতে পারে। বাচ্চা ও বৃদ্ধরা এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েন। এটা শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, পুরো শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য হুমকি।”সামাজিক মাধ্যমেও ঘটনার প্রতিবাদে নেটিজেনরা মুখর হয়েছেন। কেউ লিখেছেন, “এটা বিরিয়ানি নয়, বিষ খাওয়ানো।” কেউ আবার ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “বিরিয়ানির সঙ্গে ‘ফ্রি প্রোটিন’।”এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে শহরের লাইসেন্স প্রক্রিয়া নিয়েও। পুরনিগম কি সত্যিই সমস্ত হোটেল ও ফুড আউটলেটের বৈধতা খতিয়ে দেখে লাইসেন্স দিচ্ছে? না কি টাকা দিয়ে সবই চলছে? যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই দোকান চলে, তবে দায় কার?