Thursday, July 17, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যফের শিক্ষার দাবিতে সরব আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীরা

ফের শিক্ষার দাবিতে সরব আদিবাসী ছাত্র ছাত্রীরা

Indigenous students again demand education:ঝাড়গ্রামের শাবলমারা এলাকার ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর আজ সকাল থেকেই এক অভিনব দৃশ্য—প্লাকার্ড হাতে রাস্তায় বসে রয়েছেন অসংখ্য আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা। মুখে স্লোগান—”আমাদের ভাষায় পড়তে চাই, আমাদের অধিকার চাই।” আর সেই দাবি ঘিরেই শুরু হয়েছে এক শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় অবস্থান আন্দোলন, যেটা প্রশাসনের ঘুম ভাঙাতে বাধ্য করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সমস্যার কোনো সমাধান না মেলায় এবার আর ধৈর্য না ধরে তারা নেমে পড়েছে রাস্তায়। মূলত নবম ও দশম শ্রেণিতে অলচিকি ভাষায় পাঠদান শুরু করার দাবি, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার অনুরোধ, এবং পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নির্মাণের মতো একাধিক দাবিতে তারা সরব হয়েছে। এই অবরোধের জেরে একদিকে যেমন ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল, তেমনই সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ঝাড়গ্রামের সাথে বাইরের যোগাযোগ ব্যবস্থা।এই আন্দোলন যে আকস্মিক নয়, বরং বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ—তা স্পষ্ট অভিভাবকদের কথায়। বুধু হেমব্রম নামে এক অভিভাবক বলেন, “বারবার স্কুলে গিয়ে বলেছি, অফিসে দরবার করেছি, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অলচিকি ভাষায় পড়তে চায়, সেটাই তো তাদের মাতৃভাষা।” এক ছাত্রীর কথায়, “আমরা পড়তে চাই, কিন্তু স্কুলে ক্লাসরুম নেই, শিক্ষকের অভাব আছে, বই আসে না। সব মিলিয়ে একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি।”

উল্লেখযোগ্যভাবে অলচিকি ভাষা, যা সাঁওতালি ভাষার লিপি হিসেবে পরিচিত, তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হলেও বাস্তবের মাটিতে সেই শিক্ষা এখনও পৌঁছয়নি অনেক জায়গায়। ঝাড়গ্রামের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সেই বাস্তব আরও করুণ। এক অভিভাবিকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ভাবছিলাম, অলচিকি ভাষায় পড়া শুরু হবে, আমাদের সন্তানরা আরও ভালোভাবে শিখবে, নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কিন্তু ক্লাস তো দূরের কথা, এখনো পর্যাপ্ত বেঞ্চ-ডেস্কও নেই।”আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকা জুড়ে তৈরি হয় উত্তেজনা। যান চলাচল একেবারে থমকে যায়। শালবনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তা কার্যত রণক্ষেত্র নয়, প্রতিবাদের মঞ্চে পরিণত হয়। পরবর্তীতে জামবনি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—”লিখিত আশ্বাস না পেলে অবরোধ উঠবে না।”

Screenshot 2025 07 17 163643

এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে যায়। জেলার শিক্ষা আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়। যদিও আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তারা আর কথার আশ্বাসে বিশ্বাস রাখে না, এখন চাই কাজের প্রতিফলন।এই প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ তথা সমাজকর্মী শ্যামল সোরেন বলেন, “এই আন্দোলন শুধু একটি বিদ্যালয়ের সমস্যাকে ঘিরে নয়, এটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনার এক রূপ। মাতৃভাষায় শিক্ষা পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার, এবং অলচিকি ভাষায় পাঠদান শুরু হওয়া উচিত ছিল বহু আগেই।”স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও এই ইস্যুতে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধী পক্ষের দাবি, রাজ্য সরকার আদিবাসী শিক্ষাকে নিয়ে শুধুই ভোটের রাজনীতি করে, বাস্তবে উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও পৌঁছায় না গ্রামাঞ্চলে। অন্যদিকে শাসক দলের স্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন, “সরকার সবসময় আদিবাসী উন্নয়নের পক্ষেই কাজ করেছে। সমস্যার সমাধান শীঘ্রই হবে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments