Thursday, June 26, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যনেপালে আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় বড় সাফল্য ভারতের

নেপালে আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় বড় সাফল্য ভারতের

India's big success in international karate competition in Nepal:নেপালের সবুজ পাহাড়, শান্তিপূর্ণ শহর রামধুনী নগর—আর তারই বুকে সদ্যই বসেছিল আন্তর্জাতিক মানের চতুর্থ টি.এস. রাই কাপ ইন্টারন্যাশনাল ক্যারাটে প্রতিযোগিতা, যেখানে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যে তিন দেশের সেরা প্রতিযোগীরা মুখোমুখি হয়েছিলেন দুটি দিনব্যাপী এক দুর্দান্ত ক্রীড়া আসরে। গত ২ ও ৩ মে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল ভারতের হয়ে অংশগ্রহণ করা চিলারায় ওয়ারিয়র্স ডুয়ার্স স্পোর্টস এন্ড ক্যারাটে একাডেমির সাতজন তরুণ প্রতিযোগীর অসাধারণ সাফল্য। এই সাত সাহসী সন্তান, কেউ এসেছে জলপাইগুড়ি থেকে, কেউ বা আলিপুরদুয়ার কিংবা কোচবিহার থেকে—তবে তাদের লক্ষ্য একটাই ছিল, দেশের নাম উজ্জ্বল করা, আর ঠিক সেটাই তারা করে দেখিয়েছে।এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে গোবিন রায় কাতা ইভেন্টে স্বর্ণপদক এবং কুমিতে ইভেন্টে রূপো, সুদীপা রায় কাতা ও কুমিতে উভয় বিভাগেই রূপো, এম. ডি. আজান কাতা ও কুমিতে বিভাগে দু’টি ব্রোঞ্জপদক, দেবজিৎ রায় কুমিতে ইভেন্টে রূপো এবং শুভজিৎ রায় কাতা ইভেন্টে রূপো পদক অর্জন করে। এই পদকপ্রাপ্তির খবর প্রকাশ হতেই গোটা উত্তরবঙ্গ যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে। শুধুমাত্র একজন খেলোয়াড় নয়, এই সাতজনই যেন উত্তরবঙ্গের গর্ব হয়ে উঠেছে। তাদের সাফল্য শুধু পদকে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে সুযোগ ও সঠিক দিশা পেলে, প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিভারাও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে।

এই পুরো দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ প্রশিক্ষক—কৈলাশ বর্মন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও স্বপ্ন দেখানোর ক্ষমতাই আজ উত্তরবঙ্গের এই শিশু-কিশোরদের পৌঁছে দিয়েছে নেপালের আন্তর্জাতিক মঞ্চে। প্রতিযোগিতা শেষে কৈলাশ বাবু জানান, “এই সাফল্য শুধুমাত্র আমার ছাত্রদের নয়, এটা গোটা দেশের গর্ব। আমি চাই সরকার এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই প্রতিভাগুলিকে আরও যত্ন নিয়ে দেখে, তাহলে শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা ভারতের অলিতে গলিতে আমরা আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় পেয়ে যাব।” তিনি আরও বলেন, “এই শিশুরা দিনে স্কুল যায়, রাতে প্র্যাকটিস করে। অনেকেই আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল, জুতো বা প্র্যাকটিস গিয়ার কিনতেও সমস্যা হয়। তবুও তারা স্বপ্ন দেখে দেশের জন্য লড়াই করার।”এই প্রতিযোগিতার বিশেষত্ব ছিল এর আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি—নেপাল ও ভুটানও সম্মিলিতভাবে অংশ নিয়ে এক ইতিবাচক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া যোগাযোগ গড়ে তোলে। ফলে এই আসর ছিল শুধু পদকের জন্য লড়াই নয়, বরং প্রতিবেশী দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মঞ্চ। নেপালের রামধুনী ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এমন এক সফল আন্তর্জাতিক ইভেন্ট যে সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

ভারতীয় দূতাবাসের এক আধিকারিক, যিনি এই প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন, বলেন, “এই ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্ট শুধু প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা বাড়ায় না, বরং এটি দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করে। ভারতীয় প্রতিযোগীদের দৃঢ়তা এবং শৃঙ্খলা দেখে আমি অভিভূত।”এই সাফল্যের পিছনে ছিল অভিভাবকদের অশেষ ত্যাগও। দেবজিত রায়ের মা বলেন, “ছেলেটা অনেকবার ভাঙা মাদুরে প্র্যাকটিস করেছে, রাতে আলো না থাকলে মোমবাতি জ্বালিয়ে মুভমেন্ট প্র্যাকটিস করত। আজকে ওর মুখে হাসি দেখে মনে হচ্ছে, সমস্ত কষ্ট সার্থক।”এদিকে, এই সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা, বিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই চাইছেন, এই শিশুদের জন্য সরকারি স্কলারশিপ এবং উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হোক যাতে তারা ভবিষ্যতে অলিম্পিক স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments