‘Indian blood will flow in Sindh,’ Pakistan threatens
‘Indian blood will flow in Sindh,’ Pakistan threatens:পাহালগামে মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার রক্তাক্ত পরিণতির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তাপ চরমে পৌঁছালো। ভারতের কড়া পদক্ষেপ, বিশেষ করে সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষিতে এবার পাকিস্তানের তরফ থেকে এলো উগ্র হুঁশিয়ারি—“সিন্ধুতে বইবে জল, নইলে বইবে রক্ত!” পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো সরাসরি এই চরম হুমকি দিয়ে ভারতকে সতর্ক করে দিলেন। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনার পারদ নতুন করে চরমে উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত পাহালগামের ভয়াবহ জঙ্গি হামলা থেকে, যেখানে ২৬ জন নিরীহ তীর্থযাত্রীর জীবন কেড়ে নেওয়া হয়। এই বর্বর হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা আসে—পাকিস্তান যদি সন্ত্রাসবাদ দমন না করে, তাহলে সিন্ধু নদীর জলচুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হবে। ১৯৬০ সালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলির জল বণ্টন নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। আর ঠিক এই সময়েই পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল থেকে আসছে এমন রক্তগরম করা হুঁশিয়ারি।
বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, “সিন্ধু নদ আমাদের অধিকার। ভারত যদি এর জল আটকে দেয়, তবে আমরা রক্তের স্রোত বইয়ে দেব।” তাঁর এই বক্তব্য শুধু পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদের উন্মাদনা নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর সরাসরি যুদ্ধের মেঘ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

কে এই বিলাওয়াল ভুট্টো?
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির পুত্র বিলাওয়াল বর্তমানে পিপলস পার্টির (PPP) চেয়ারম্যান। তিনি পূর্বে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন। বিলাওয়ালের মন্তব্য পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের একাংশকে উগ্রতা এবং যুদ্ধোন্মাদনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মত।
এছাড়া পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার আরও একধাপ এগিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের মিসাইল আছে, পারমাণবিক অস্ত্র আছে। ভারতের বিরুদ্ধে কেউ যদি আগ্রাসন চালায়, আমরা তার যোগ্য জবাব দেব।” তাঁর এই বক্তব্য পাকিস্তানের দায়িত্বজ্ঞানহীন কূটনৈতিক অবস্থানেরই পরিচয় বহন করে বলেই আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা।
ভারতের জবাব কী?
ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো আপস হবে না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, পাকিস্তানের হুমকি ভারতের নীতিগত অবস্থানকে নড়াতে পারবে না। ভারত আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের এই উগ্র বক্তব্য এবং সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার বিষয়গুলি তুলে ধরবে। ভারতের তরফ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যদি সিন্ধু চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হয়, সেটা হবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং সম্পূর্ণ কূটনৈতিক পথে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের এই হুমকি আসলে দেশের ভেতরের ব্যর্থতা এবং আর্থিক সংকট থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা। বর্তমানে পাকিস্তান তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে, বৈদেশিক ঋণ বেড়ে গেছে, মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ প্রশমনের জন্য যুদ্ধের আবহ তৈরি করা হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আমেরিকা, ইউরোপের নানা দেশ ইতিমধ্যেই এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মহল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা উচিত। যুদ্ধ বা হুমকি কোনোদিনও সমাধান হতে পারে না।
বিশেষজ্ঞ মত:
কূটনৈতিক বিশ্লেষক অনির্বাণ চক্রবর্তী মনে করেন, “ভারতের পক্ষ থেকে এখন ধৈর্য ও আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। পাকিস্তান যতই উগ্র ভাষায় কথা বলুক, ভারতের উচিত আন্তর্জাতিক আইন মেনে দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখা। কারণ, যুদ্ধের ফলাফল উভয় পক্ষের জন্যই ভয়াবহ হতে পারে।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া:
ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই হুমকি নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ, কিছুটা উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, “ভারত আজ আর ১৯৪৭ সালের দেশ নয়, ভারতের কূটনীতি, প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। পাকিস্তানের উস্কানিতে ভারত গা না ভাসিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক জবাব দেবে।”
উপসংহার:
এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক সীমারেখায় দাঁড়িয়ে আছে। যুদ্ধের হুমকি বা উগ্র জাতীয়তাবাদ কখনোই সঠিক সমাধান হতে পারে না। আন্তর্জাতিক মহলও শান্তির পক্ষেই মত দিয়েছে। তবে পাকিস্তান যদি সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামী দিনে ভারতের আরও কড়া পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে তা বলাই বাহুল্য।