Indian Air Force on war alert: রাত তখন গভীর, চারপাশ নিস্তব্ধ, শুধু প্রকৃতির শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই, আর ঠিক সেই সময়েই আকাশ কেঁপে উঠল এক বিশাল গর্জনে—উড়ে চলেছে রাফাল, তার ঠিক পেছনেই সুখোই-৩০ এমকেআই, যেন আকাশ চিরে বার্তা দিচ্ছে, “ভারত প্রস্তুত!” ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুর জেলার পীরু গ্রাম, যেখানে গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উপর গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ‘রাতেও ব্যবহারযোগ্য’ এয়ারস্ট্রিপ—৩.৫ কিমি দীর্ঘ এই বিশেষ রাস্তায় গতরাতেই ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারতীয় বায়ুসেনা, যখন একের পর এক যুদ্ধবিমান এই স্ট্রিপ থেকে উড়ে গেল এবং আবার অবতরণ করল নিখুঁতভাবে। রাফাল, মিরাজ-২০০০, সুখোই, মিগ-২৯, জাগুয়ার—প্রতিটি যুদ্ধবিমান যেন একেকটা বার্তা, একেকটা যুদ্ধঘোষণা; আর শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, নামল K-130J হারকিউলিস, AN-32 ট্রান্সপোর্ট প্লেন, এমনকি হেলিকপ্টারও—দিন হোক বা রাত, আকাশ এখন সম্পূর্ণরূপে সেনার নিয়ন্ত্রণে। এই মহড়া শুধু সামরিক অনুশীলন নয়, বরং
সাম্প্রতিক কাশ্মীরের পাহলগামে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার পরে এটি একটি স্পষ্ট কূটনৈতিক ও সামরিক বার্তা—“ভারত শান্তি চায়, কিন্তু যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত!” এই মহড়ার মাধ্যমে ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের সক্ষমতা আরেকবার গোটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিল, বিশেষ করে পাকিস্তান ও চিনের দিকে কড়া বার্তা ছুঁড়ে দিল। CAT II Instrument Landing System, হাই-ইনটেনসিটি লাইটিং, রিইনফোর্সড পেভমেন্টসহ যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও যেন কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য এই স্ট্রিপ তৈরি হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। এক্সপ্রেসওয়েতে বসানো হয়েছে ২৫০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা, নজরদারি রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তায়। সরকার পক্ষের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই ধরনের মহড়া ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতিতে এক নতুন দিশা দেখাবে। আমরা চাই প্রতিটি পরিস্থিতিতে যেন আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী সক্রিয় ও প্রস্তুত থাকে।” মহড়ায় অংশ নেন বহু উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তা, উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদস্যরা এবং শতাধিক স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, যারা নিজের চোখে ভারতের সামরিক শক্তি দেখে রীতিমতো গর্বিত। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিপ্রা বলছে,

ই দৃশ্যটা কখনও ভুলব না, যেন সিনেমার থেকেও বেশি বাস্তব।” এই মহড়ার মাধ্যমে গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সামরিক ব্যবহারের সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে, যা যুদ্ধকালীন মুহূর্তে কাজে লাগবে ‘ফরওয়ার্ড অপারেশন বেস’ হিসেবে। জানা গেছে, নভেম্বর মাসেই জাতির উদ্দেশে খুলে দেওয়া হবে পুরো এক্সপ্রেসওয়ে, ইতিমধ্যেই ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন। এইরকম উদ্যোগ শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, সমগ্র দেশকেই সামরিক দিক থেকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সঞ্জয় বার্মা বলছেন, “এই মহড়া আসলে ভারতের ‘প্রজেক্ট মোবাইল এয়ার ফোর্স’ ধারণার বাস্তব প্রতিফলন, যেখানে যেকোনো স্থানে যুদ্ধবিমান নামতে পারবে—এটি কৌশলগত দিক থেকে এক বিপ্লব।” শুধু প্রতিরক্ষা নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ছে। ম
হড়ার আগে ও পরে যেসব সরঞ্জাম আনা হয়েছে, সেই সুবাদে বহু মানুষ কাজ পেয়েছেন। নিরাপত্তা, রাস্তাঘাট, খাবার সরবরাহ, এমনকি মিডিয়া কভারেজ—সব মিলিয়ে পীরু গ্রাম এখন সংবাদমাধ্যমের কেন্দ্রে। গ্রামেরই বাসিন্দা প্রবীণ চৌধুরী জানালেন, “এত বড়ো জিনিস আমাদের গ্রামে হচ্ছে—আমরা গর্বিত, আর ভয় তো নেইই। সেনা আছে তো সব আছে।” এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভারত শুধু সীমান্তে নয়, দেশের অভ্যন্তরেও তৈরি হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য। সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে এইরকম শক্তি প্রদর্শন দেশের মনোবল বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ যে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে হবে না, বরং কৌশল, প্রযুক্তি এবং সময় ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করবে, তা এই মহড়াই প্রমাণ করে দিল। ভারতের বায়ুসেনা কেবল আকাশ নয়, রাতের আকাশও এখন নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আর সেই আকাশ থেকে তারা বলছে—“চেষ্টা করলে আমরা কিছুই অসম্ভব নয়।”