Tuesday, September 9, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশরাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের সঙ্গে IMF-কেও নিশানায় নিল ভারত

রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের সঙ্গে IMF-কেও নিশানায় নিল ভারত

India targets IMF along with Pakistan at UN : ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার ছায়ায় আচ্ছন্ন। জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ, বারবারই ভারত আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। আর সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চ। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটা ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত যে কোনওভাবেই আর নরম ভাষায় কথা বলবে না, সেটাই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল রাষ্ট্রসংঘের সভায় ভারতের প্রতিনিধি হরিশ পর্বতনেনির বক্তব্যে। শুধু পাকিস্তান নয়, পাকিস্তানকে ক্রমাগত ঋণ দিয়ে চলা আন্তর্জাতিক অর্থভিত্তিক সংস্থা আইএমএফ-এর ভূমিকা নিয়েও তীব্র প্রশ্ন তুলেছে ভারত। বর্তমান বৈশ্বিক কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে এই বক্তব্য ভারতীয় অবস্থানকে এক নতুন উচ্চতায় তুলে ধরেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি হরিশ পর্বতনেনি কার্যত চাঁচাছোলা ভাষায় পাকিস্তানের ভূমিকা ও চরিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান এমন একটি দেশ যা সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ করে তুলেছে।” তাঁর মতে, ধর্মান্ধতা এবং সন্ত্রাসে ডুবে থাকা পাকিস্তান শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ঋণের উপর নির্ভর করে চলছে। এই সুযোগেই তিনি তির্যকভাবে আক্রমণ করেন আইএমএফ-কে—যে সংস্থা লাগাতার পাকিস্তানকে ঋণ জুগিয়ে চলেছে। হরিশের ভাষায়, “পাকিস্তান বেঁচে রয়েছে IMF-এর দয়ায়। দেশটি আসলে এক অর্থনৈতিক ভিক্ষুক, যাদের নিজস্ব কোনো ভিত্তি নেই।”

এখানেই থেমে থাকেননি হরিশ। তিনি ভারতের সঙ্গে তুলনা টেনে বলেন, “ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যে তার অর্থনীতিকে নিজের কাঁধে ভর করে ক্রমাগত উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। সেখানে পাকিস্তান সন্ত্রাস ও ঋণনির্ভরতায় আচ্ছন্ন।” তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি হল ‘জিরো টলারেন্স’। আর সেই নীতির সঙ্গে পাকিস্তানের কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বিরোধী।” পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি হুঁশিয়ারি দেন—“যে সব দেশ সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসে মদত দেয়, প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে, তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ন্যূনতম শিষ্টাচার তাদের নেই।”

এছাড়াও পাকিস্তানের বারবার যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ভারতের পাল্টা হামলার পর পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির জন্য ভারতের কাছে হাতজোড় করেছিল। এবং ভারতের সদিচ্ছাতেই সেই সংঘর্ষ থেমেছিল। একে কেন্দ্র করেই তারা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।”

ezgif 1551cb3fe9b7b3 686cbef886b

এই বক্তব্যের পর কেন্দ্র সরকারের তরফে সরাসরি কোনও বিবৃতি না এলেও, বিদেশ মন্ত্রকের সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তান ও আইএমএফ—উভয় পক্ষের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া ছিল পূর্বপরিকল্পিত কূটনৈতিক কৌশল। বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, এখনকার ভূরাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে পাকিস্তানের আসল মুখটা তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, পহেলগাঁও হামলার পরই ভারতের কূটনীতিক মহল সক্রিয় হয় এবং রাষ্ট্রসংঘের প্ল্যাটফর্মকে যথাযথ ব্যবহার করে এই বার্তা দেওয়া হয়।এই বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও তীব্র। সংবাদমাধ্যমে এবং সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ভারতের এই কঠোর অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন। দিল্লির এক তরুণ চাকরিজীবী অরুণাভ মুখার্জি বললেন, “বেশি দিন চুপ থাকলে তো তারা মাথায় চড়ে বসবে। এবার তো বুঝল, ভারত আর নরম ভাবে চলবে না।” কলকাতার শিক্ষিকা রিনা দাসের মতে, “যে দেশ তার নিজস্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তারা রাষ্ট্রসংঘে কীভাবে শান্তির কথা বলবে? ভারতের অবস্থান একদম ঠিক।” সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন দেখা গেছে হ্যাশট্যাগ #IndiaStrikesBack এবং #StopTerrorFunding-এর মাধ্যমে।বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি এমন কড়া ভাষায় কথা বলার পেছনে রয়েছে ভারতের দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ। পহেলগাঁও হামলা যেমন এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, তেমনই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং আইএমএফ-এর আর্থিক সহায়তা বারবার প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বমঞ্চে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুধাংশু সেন বলেন, “ভারতের এই পদক্ষেপ শুধু পাকিস্তান নয়, আইএমএফ-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও বার্তা দিচ্ছে—সন্ত্রাসে মদত দেওয়া দেশগুলিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করাও একপ্রকার সন্ত্রাসকে পৃষ্ঠপোষকতা করার সমান।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রসংঘের এই বক্তব্য কেবল রণনীতিগত নয়, বরং কূটনৈতিক দিক থেকেও ভারতীয় অবস্থানকে জোরালো করছে। বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময় পাকিস্তানের ঋণনির্ভরতাকে সামনে এনে ভারত নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে নেতৃত্ব নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে।”

india imf

এই বক্তব্যের পর ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। রাষ্ট্রসংঘের পরে ভারত বিষয়টি জি-২০ ও ব্রিকস-এর মতো বৃহৎ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মেও তুলতে পারে বলে ধারণা। অন্যদিকে, IMF-কে ঘিরে ভারতের এই কটাক্ষ আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। পাকিস্তান হয়তো আগামী দিনে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবে রাষ্ট্রসংঘে, তবে তাতে আন্তর্জাতিক মহলের মত পাল্টাবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।রাষ্ট্রসংঘের সভায় ভারতের এই দৃঢ় ও প্রত্যুত্তরমূলক কূটনৈতিক কণ্ঠস্বর একদিকে যেমন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের মুখোশ টেনে খুলে দিয়েছে, অন্যদিকে আইএমএফ-এর ভূমিকার প্রতিও একরকম প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনাগুলি আজকের দিনে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে কতটা গুরুত্ব পেতে পারে, এই বক্তব্যই তার প্রমাণ। ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রতিবেশী দেশ যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, তবে তার জবাব দেওয়া হবেই—তা কূটনীতির ময়দানেই হোক কিংবা আন্তর্জাতিক অর্থনীতির আলোচনায়। পাকিস্তান ও তার আর্থিক অভিভাবকদের প্রতি ভারতের এই ‘অপারেশন সিঁদুরে সপাটে’ বক্তব্য এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে বলেই মনে করা যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments