Saturday, April 12, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যখেলা২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের পথে ভারত!

২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের পথে ভারত!

India on the way to host the 2036 Olympics! : ভারতবর্ষে খেলাধুলার প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরকালই প্রবল। ক্রিকেট থেকে ফুটবল, হকি থেকে ব্যাডমিন্টন—ভারতের খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রতিভার মাধ্যমে দেশের নাম বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছেন। তবে এবার ভারত বড়ো কিছু করতে চলেছে খেলাধুলার দুনিয়ায়। ২০৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের জন্য ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (IOA) আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (IOC) কাছে আবেদন করেছে। অলিম্পিক আয়োজন করা বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই একটি গর্বের বিষয়, এবং এবার ভারত এই বিশাল সম্মান অর্জনের জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলতি বছরের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ২০৩৬ সালে অলিম্পিক আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার এই বক্তব্যের পর থেকেই দেশে এক নয়া উদ্দীপনা তৈরি হয়, এবং অলিম্পিক আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতিতে মত্ত হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। IOA ইতিমধ্যে IOC-কে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি প্রেরণ করেছে, যাতে ভারতকে ২০৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনের জন্য বিবেচনা করা হয়। যদি IOC চূড়ান্তভাবে এই সিদ্ধান্তে আসে, তবে ভারত হবে সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি যারা বিশ্বকে অলিম্পিক আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার পরিচয় দিতে পারবে।

1494842 oo

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত যদি অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব পায়, তাহলে দেশের অর্থনীতি, পর্যটন, অবকাঠামো উন্নয়ন সহ একাধিক ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন আসবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে নতুন স্টেডিয়াম, অ্যাথলেটিক ট্র্যাক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে উঠবে, যা পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে।

ভারতের অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ক্রীড়া বিশ্লেষক মধুমিতা সেন বলেন, “ভারত এমন একটি দেশ যেখানে প্রতিভার অভাব নেই। অলিম্পিকের মতো বড়ো আয়োজনের দায়িত্ব পেলে ভারতীয় খেলাধুলার জগতে এক বিপুল পরিবর্তন আসবে। নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও সুযোগ পাবে এবং বিশ্ববাসী আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে কাছ থেকে দেখতে পাবে।”

অলিম্পিক আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে বেশ কিছু সময় লাগবে। IOC-এর সঙ্গে আলোচনা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই বোঝা যাবে যে ভারত আদৌ অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব পাচ্ছে কি না। তবে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সমর্থন এবং উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত ক্রীড়া সংগঠনগুলো ভারত সরকারের পাশে থেকে সমর্থন দিচ্ছে, যাতে সমস্ত প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। এদিকে, অলিম্পিক আয়োজনের জন্য সম্ভাব্য শহর হিসেবে দিল্লি ও মুম্বাইয়ের নাম শোনা যাচ্ছে, যেখানে উন্নতমানের স্টেডিয়াম এবং পরিবহন ব্যবস্থা ইতিমধ্যে বিদ্যমান।

অলিম্পিক আয়োজনের মাধ্যমে ভারতের পর্যটন খাতে বিপুল লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক এবং খেলোয়াড়েরা ভারতে আসবেন, এবং এর ফলে অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও অবকাঠামো তৈরি হওয়ার পাশাপাশি, দেশজুড়ে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং স্থানীয় বাজারে ব্যবসা প্রসারিত হবে। এটি স্থানীয় মানুষের জন্য যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, তেমনি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্বদরবারে তুলে ধরার একটি বড় সুযোগ হবে।

তবে, অলিম্পিক আয়োজনের পাশাপাশি দেশের ক্রীড়া ব্যবস্থার উন্নয়নেও মনোযোগ দিতে হবে। ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং আধুনিক মানের সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভারতীয় খেলোয়াড়রা অলিম্পিকের আসরে নিজের দেশে লড়াই করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত হতে পারেন। এর ফলে, ভবিষ্যতে অলিম্পিক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতের জয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে।

Olympics Games File Image

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ভারত অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব পায়, তবে এটি এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। তরুণ ক্রীড়াবিদদের জন্য এটি হবে একটি বড়ো সুযোগ, এবং এই বিশাল মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য ভারতের খেলোয়াড়রা আরও মনোযোগী হয়ে উঠবেন। অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় ক্রীড়া ব্যবস্থার পরিকাঠামো আরও উন্নত হবে এবং ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

তবে এটি শুধুমাত্র একটি বড়ো দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি বড়ো চ্যালেঞ্জও বটে। বিশাল বাজেট, অত্যাধুনিক অবকাঠামো এবং নির্ভুল ব্যবস্থাপনা সবকিছুই নিশ্চিত করতে হবে। তবে, অনেকের মতে, ভারতের কাছে এই দায়িত্ব আসা মানে বিশ্বের দরবারে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা এবং শক্তি প্রদর্শন।

এই উদ্যোগটি কেবল ভারতীয় ক্রীড়াজগৎকেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, বরং সমগ্র দেশবাসীর জন্য গর্বের এক বিরল মুহূর্ত তৈরি করবে। আশাকরি, IOC শীঘ্রই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমরা ২০৩৬ সালে ভারতের মাটিতে অলিম্পিকের আসর বসানোর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে দেখবো।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments