India in airstrikes, 10 militant houses blown up in Kashmir: কাশ্মীরের পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পর গোটা উপত্যকায় যখন আতঙ্ক আর শোকের ছায়া, তখনই শুরু হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর জোরদার অভিযান। পাহালগাম হামলায় ২৫ জন নিরীহ পর্যটক এবং এক স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু ঘিরে ভারত সরকার ও সেনাবাহিনীর তরফে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত ছয় দিনে জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় মোট ১০ জন কুখ্যাত জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং সেনা সূত্রে জানা গেছে এই অভিযান আরও চলবে। যাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের সক্রিয় সদস্যরা রয়েছেন।
সেনা জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা এবং উপত্যকায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। লস্কর কমান্ডার শাহিদ আহমদ কুট্টে, যিনি বহুদিন ধরে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত ছিলেন, তার বাড়ি ছাড়াও আদিল হুসেন ঠোকার, যাকে সরাসরি পাহালগাম হামলার সাথে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আহসান উল হক, যে ২০১৮ সালে পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করেছিল, তার বাড়িতেও চলে বুলডোজার। এই তালিকায় রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের আমির নাজির ওয়ানি এবং জামিল আহমদ শের গোজরির বাড়িও। নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, অভিযানের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং নিশ্চিত করা হয় যাতে কোনও সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া সন্ত্রাসবাদীদের মনোবল ভেঙে দিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এবং উপত্যকায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। তাদের মতে, অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙার আগে আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা উচিত ছিল। এই প্রসঙ্গে নিরাপত্তা দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “যারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কারণ সাধারণ মানুষের জীবন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন জানিয়েছে, যে সব বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। পাহালগামের মতো পর্যটন কেন্দ্রের উপর আঘাত দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সরকার চাইছে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। আপাতত উপত্যকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে উপত্যকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একাংশ সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ আবার উদ্বেগ প্রকাশ করছেন আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে। আন্তর্জাতিক মহলও নজর রাখছে এই অভিযানের দিকে। বিশেষ করে পাকিস্তানের দিক থেকে নতুন করে কোনও প্রতিক্রিয়া আসে কি না, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে দিল্লি। পাহালগাম হামলার পরে এই প্রথম ভারত এত জোরালোভাবে সন্ত্রাসবাদ দমনে সক্রিয় ভূমিকা নিল। এখন দেখার, এই অভিযানের ফলশ্রুতি কতটা দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে কতটা সফল হয় কেন্দ্রীয় সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী।