India caught in the crossfire! Sunil Chhetri fails : মঙ্গলবার রাত। এশিয়ান কোয়ালিফিকেশন পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি দুই প্রতিবেশী দেশ— ভারত ও বাংলাদেশ। স্টেডিয়ামে গর্জন করছে দর্শকরা, মাঠের বাইরে ফুটবল প্রেমীদের উত্তেজনা তুঙ্গে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয় পাওয়ার পর ভারতীয় দলের আত্মবিশ্বাস ছিল আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে জাতীয় দলে অবসর ভেঙে ৮ মাস পর ফিরে হেড দিয়ে দুরন্ত গোল করা সুনীল ছেত্রীকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল প্রবল। কিন্তু সেই আশা দুঃস্বপ্নে বদলে গেল। একদিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা বাংলাদেশের ডিফেন্ডার হাজমা চৌধুরীর দুর্দান্ত রক্ষণভাগ, অন্যদিকে ভারতের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীর ফর্মহীনতা— সব মিলিয়ে ম্যাচ শেষ হল হতাশাজনক গোলশূন্য ড্র দিয়ে।
২৬ বছর পর ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ গোলশূন্য ড্র-তে শেষ হওয়ায় ফুটবলপ্রেমীদের মনে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। মালদ্বীপের মতো দলকে ৩-০ গোলে হারানো দল কেন বাংলাদেশের মতো তুলনামূলক দুর্বল দলের সামনে গোল করতে ব্যর্থ হলো? মাঠে যেন ছন্নছাড়া লাগছিল ছেত্রী বাহিনীকে। সুনীল ছেত্রী, শুভাশিস বসুর মতো তারকা খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা এবং বাংলাদেশি ডিফেন্ডার হাজমা চৌধুরীর অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্যই ভারতের হারিয়ে যাওয়া সুযোগগুলো আর ফিরে এল না।
হাজমা চৌধুরীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স: সুনীলকে আটকে দিলেন একাই!
বাংলাদেশের ডিফেন্সে ‘দেয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হাজমা চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুনীল ছেত্রীকে এক বিন্দুও জায়গা ছাড়েননি তিনি। খেলা যত এগিয়েছে, ততই দেখা গেছে হাজমার দাপট। সুনীল ছেত্রী বহুবার গোল করার সুযোগ পেলেও হাজমার কড়া পাহারায় বল লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসার স্ট্রাইকার ছেত্রী মাঠে ছিলেন বটে, কিন্তু তার পা থেকে সেই জাদু বেরোলো না, যা বহুবার ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
বাংলাদেশের দাপুটে ডিফেন্স এবং গোলরক্ষকের কৃতিত্বেও প্রশংসা করতে হয়। ভারতের আক্রমণ যতই শক্তিশালী হোক, শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ রক্ষণকে টলাতে পারেনি। বাংলাদেশের কোচের কথায়, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল সুনীল ছেত্রীকে আটকে রাখা। হাজমা চৌধুরী সেই দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছে। ভারতকে আটকে রেখে ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে।’’
ছন্নছাড়া ভারতের ব্যর্থতা
মালদ্বীপের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় দলের থেকে এমন খেলা কেউ আশা করেনি। প্রথম থেকেই দেখা যাচ্ছিল, সুনীল ছেত্রী নিজের ছন্দে নেই। আইএসএলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার শুভাশিস বসুও গোল করার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ৮৩ মিনিটের মাথায় ফাঁকা গলে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন ছেত্রী, কিন্তু সেই সুযোগও নষ্ট হল। ভারতীয় দলের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, মাঠে স্ট্র্যাটেজির অভাব রয়েছে। আক্রমণভাগ, মাঝমাঠ এবং ডিফেন্সের মধ্যে সেই সঠিক সংযোগটা ছিল না। বাংলাদেশের ডিফেন্সকে টপকাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল ভারতীয় আক্রমণভাগ।
ভারতের কোচ ইগর স্টিম্যাক ম্যাচ শেষে জানালেন, ‘‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। বাংলাদেশ দল আজ খুবই ভালো খেলেছে, বিশেষ করে তাদের ডিফেন্স দুর্দান্ত ছিল। আমাদের আক্রমণভাগ আরও ধারালো হওয়া দরকার।’’
ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত এবং হাজমার স্ট্র্যাটেজি
ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত ছিল হাজমা চৌধুরীর ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি। মাঠে বারবার দেখা গেছে, সুনীল ছেত্রীকে টাইট মার্কিং করে রাখছেন তিনি। সুনীল বল পেলেই হাজমা তার সামনে দাঁড়িয়ে বল কেড়ে নিচ্ছেন। এই স্ট্র্যাটেজি কার্যত সুনীলের খেলায় প্রভাব ফেলেছে এবং ভারতীয় দলের গোল করার সম্ভাবনা প্রায় শেষ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের দলে হাজমা ছাড়াও গোলরক্ষকের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। কয়েকটি দুর্দান্ত সেভ করে তিনি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন।
২৬ বছর পর গোলশূন্য ড্র: হতাশ ফুটবলপ্রেমীরা
১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ গোলশূন্য ড্র-তে শেষ হল। ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা এই ফলাফলে চরম হতাশ। ম্যাচ শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল নানান প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ‘‘সুনীল ছেত্রী ফুরিয়ে গেছেন,’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘হাজমা চৌধুরী একাই ভারতকে আটকে দিয়েছে।’’
ফুটবল বিশ্লেষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘‘ভারতীয় দলের সমস্যাটা হলো তাদের আক্রমণভাগ ঠিকমতো কাজ করেনি। ছেত্রীর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আমরা আরও ভালো পারফরম্যান্স আশা করেছিলাম। তবে বাংলাদেশের ডিফেন্স এবং হাজমার পারফরম্যান্সের প্রশংসা করতেই হবে।’’
ফের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ: ভারতীয় দলের কী শিক্ষা নেওয়া উচিত?
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ব্যর্থতা থেকে ভারতীয় দল কী শিক্ষা নেবে? মালদ্বীপের বিরুদ্ধে বড় জয় পেলেও বাংলাদেশের মতো দলের সঙ্গে গোল করতে না পারা চিন্তার বিষয়। ভারতীয় দলের আক্রমণভাগের আরও ধারালো হওয়া দরকার। মাঝমাঠে আরও সংযোগ তৈরি করতে হবে এবং স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনতে হবে।
ভারতীয় কোচ স্টিম্যাক জানিয়েছেন, ‘‘এই ম্যাচ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। সামনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে, এবং আমরা সেখানে শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব।’’
উপসংহার: ফুটবল শুধু খেলা নয়, আবেগের গল্পও
ফুটবল শুধু খেলা নয়, দুই দেশের আবেগের লড়াই। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ গোলশূন্যে শেষ হলেও এই ম্যাচে অনেক গল্প তৈরি হয়েছে। একদিকে হাজমা চৌধুরীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, অন্যদিকে সুনীল ছেত্রীর ব্যর্থতা— সব মিলিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা এই ম্যাচের আলোচনা করবেন আরও অনেক দিন। তবে ভারতের ফুটবল দলের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ— পরের ম্যাচে আরও ভালো পারফরম্যান্স করে নিজেদের প্রমাণ করা।