India Bangladeh Border: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের উত্তর অন্দরান খরখরিয়ায় পাচার এবং অনুপ্রবেশ রুখতে বিএসএফ এক অভিনব পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় ঝোলানো হয়েছে মদের খালি বোতল। এই বোতলগুলি এমনভাবে ঝোলানো হয়েছে যে কেউ বেড়া কাটার বা টানার চেষ্টা করলে বোতলগুলি তারে ধাক্কা খেয়ে শব্দ করবে, যা সহজেই সীমান্তে প্রহরারত জওয়ানদের সতর্ক করবে। প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পাচারকারী এবং অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্যে তারা অতিষ্ঠ। রাতের অন্ধকারে গবাদি পশু ও ফসল চুরি এবং বেড়া কাটার ঘটনা এখানে প্রায়শই ঘটে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বিএসএফের এই উদ্যোগে স্বস্তি পেয়েছেন এবং নিজেরাও এই কাজে সাহায্য করেছেন।

তবে এই উদ্যোগ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এই পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে এবং বিএসএফকে এই ব্যবস্থা বন্ধ করতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু সীমান্তে বেড়া কাটার প্রবণতা এবং পাচার রোধে কার্যকর হওয়ায় বিএসএফ এই পদ্ধতি চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশ মনে করেন, এটি একটি অস্থায়ী সমাধান এবং সীমান্তে স্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া এবং উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজন। এই উদ্যোগ সীমান্ত এলাকায় তাত্ক্ষণিক সুরক্ষা প্রদান করলেও দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দু’দেশের প্রশাসনের মধ্যে এই বিষয়ে আরও আলোচনা এবং সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে।বিএসএফের এই উদ্যোগ সীমান্তে অবৈধ কার্যকলাপ রোধে প্রাথমিকভাবে কার্যকর হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের একাংশ মনে করেন, এই ব্যবস্থা যদিও তাৎক্ষণিক সুরক্ষা দিচ্ছে, তবে এটি কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। সীমান্তে স্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া এবং উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা না থাকলে সমস্যাগুলি পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি জানানো হয়েছে। বিজিবি-র কর্মীরা দাবি করেছেন যে, এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করছে এবং এটি প্রতিবেশী দেশের মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে বিএসএফ জানিয়েছে, সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং পাচার রোধে তারা এই ব্যবস্থা চালিয়ে যাবে।
স্থানীয় প্রশাসনও এই পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখছে। কোচবিহারের প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়াতে যে কোনও কার্যকর উদ্যোগকে সমর্থন করা হবে। তবে স্থানীয় জনগণের জন্য কোনও রকম সমস্যা তৈরি হলে তার সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলেও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সীমান্ত এলাকার উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধী দলগুলি সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারি প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন, তাদের সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার উন্নয়নে আরও মনোযোগ দেওয়া হোক।
উপমহাদেশের এই স্পর্শকাতর সীমান্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএসএফ এবং বিজিবি-র মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির সমাধান করা সম্ভব। তবে, সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে এবং মানুষের জীবনে নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরির জন্য উভয় দেশের সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।