In 11 years, unemployment has increased, not jobs!:২০১৪ সাল, গুজরাট মডেলের সাফল্যকে পাথেয় করে নরেন্দ্র মোদী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন দেশের যুবসমাজের মধ্যে একটা আশা ছিল—আশা ছিল উন্নয়নের, চাকরির, স্বপ্নপূরণের; কারণ মোদীজি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি সৃষ্টির। সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় মানুষের মনে আলো জ্বলেছিল, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত আর কর্মপ্রত্যাশী শিক্ষিত যুবকদের চোখে। কিন্তু এক দশক পার হয়ে গেছে, সেই প্রতিশ্রুতি যেন আজ শুধুই ‘জুমলা’, বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই—বরং উল্টে দেখা যাচ্ছে, দেশে বেকারত্ব বেড়েছে বহুগুণে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ণ মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে আবারও এই বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, জুন ২০২৫-এ দেশের যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৩ শতাংশে, যেখানে মে মাসেও এই হার ছিল প্রায় সমান। দেশের মোট বেকারত্বের হার এখনও ৫.৩ শতাংশে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা গত কয়েকমাস ধরে অপরিবর্তিত। অথচ এই অবস্থার কোনও স্থায়ী সমাধান এখনও মেলেনি, মেলে না বলেই যেন সরকারও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করে না। বরং যেটা পরিষ্কার, তা হলো কর্মসংস্থানের প্রশ্নে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ।
খুব সাধারণভাবে বোঝালে, আজকের ভারতবর্ষে হাজারো শিক্ষিত তরুণ-তরুণী গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স এমনকি পিএইচডি করার পরও ঠেলাগাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বা ডেলিভারি বয়ের চাকরি নিচ্ছেন, শুধুমাত্র পেট চালানোর জন্য। কলকাতার এক ছাত্র, অনির্বাণ সাহা (নাম পরিবর্তিত) আমাদের ‘খবর বাংলা’ কে জানালেন—”আমি পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স করেছি, সিভিল সার্ভিসেসের জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছি। কিন্তু চাকরি নেই, পরীক্ষা নেই, যেটুকু পরীক্ষা হয় তাতেও দুর্নীতি, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব। এখন অনলাইনে গৃহশিক্ষকতা করেই দিন চলে।” অনির্বাণ একা নন, তার মতো হাজারো তরুণ আজ শুধুই হতাশার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ‘চাকরি নেই’ কথাটা যেন আজ একটা সর্বজনীন ব্যথার গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা সোমা মণ্ডল, যিনি একটি সরকারি চাকরির জন্য ৮ বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তিনিও বললেন—”নিয়োগ তো বন্ধ। পরীক্ষাই হয় না ঠিকঠাক। বিয়ে হয়নি, পরিবারও চাপ দিচ্ছে। কিন্তু একটা নিশ্চয়তা ছাড়া কি জীবনের বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?”এই সমস্যার পিছনে যেমন সরকারের উদাসীনতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে নীতিগত অস্থিরতা। কোভিড পরিস্থিতি অনেকখানি দায়ী, কিন্তু তার আগেও কর্মসংস্থানের অবস্থা আশানুরূপ ছিল না। একের পর এক প্রতিশ্রুতি—স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া—এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবিক ফলাফল কোথায়? বহু বিশ্লেষকই বলছেন, এই প্রকল্পগুলো কেবল পোস্টারবয় ভাবমূর্তি তৈরির হাতিয়ার হয়েছে, বাস্তবে এর সুফল সাধারণ মানুষ পায়নি। এমনকি সরকারি ক্ষেত্রেও নিয়োগের হার কমেছে। রেল, ব্যাংক, ডিফেন্স সহ বহু দপ্তরে শূন্যপদ থাকলেও, বছরের পর বছর নিয়োগ নেই। পিএসইউ গুলোয় কর্মী ছাঁটাই চলছে, নতুন নিয়োগ প্রায় বন্ধ।

বেকারত্ব বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে সমাজে—মানসিক অবসাদ, অপরাধপ্রবণতা, আত্মহত্যার প্রবণতা, ঘরোয়া হিংসা—এইসব বাড়ছে। দিল্লির এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ভয়াবহ হারে বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলেও কৃষিকাজে আগ্রহ হারানো এবং শহরে চাকরি না পাওয়ার ফলে ব্যাপক অভিবাসনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটি দেশের শ্রম বাজারেও একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।এদিকে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও ভারতের কর্মসংস্থানের হাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, ভারতের যুবসমাজের একটা বড় অংশ ‘NEET’ ক্যাটাগরিতে পড়ছে—Not in Employment, Education or Training—অর্থাৎ না তারা পড়াশোনা করছে, না কাজ করছে, না কোনও ট্রেনিং নিচ্ছে। এটা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে এক অশনিসংকেত।এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা। যাঁরা সরকারকে বিশ্বাস করে বারবার ভোট দিয়েছেন, চাকরির স্বপ্নে বুক বেঁধেছেন, তাঁরা আজ সবচেয়ে হতাশ। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন—”জনগণ যখন চাকরির প্রতিশ্রুতিতে ভোট দেয়, তখন সেটি রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা হয়ে যায়। ১১ বছর পর এসে যদি সরকার বলে, ‘চাকরি দেওয়া সরকারের কাজ নয়’, তাহলে সেটি শুধু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নয়, প্রতারণা।”