Important steps taken by the administration at Gangasagar Mela to protect the environment : শীতের সময় গঙ্গাসাগর মেলা লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীর আগমনে জমজমাট হয়ে ওঠে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এত মানুষের সমাগমে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবার গঙ্গাসাগর মেলাকে সম্পূর্ণ প্লাস্টিক-মুক্ত এবং পরিবেশ-বান্ধব করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে প্রশাসন। মেলার প্রতিটি দিককে পরিচ্ছন্ন ও সুরক্ষিত রাখার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্লাস্টিক একেবারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাট ও বাঁশপাতার ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রায় ১৬ লক্ষ পাটের ব্যাগ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। মেলার বিভিন্ন জায়গায় চার হাজার ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে, যাতে যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ হয়। পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে, যারা মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করছেন।
মেলার দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলিকেও প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের জন্য প্রসাদ পরিবেশ-বান্ধব পাটের ব্যাগে বিতরণ করা হচ্ছে। সমুদ্রতট পরিষ্কার রাখার জন্য বিশেষ টিম কাজ করছে, যা মেলার পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।
জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং পুণ্যার্থীরাও এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন। একজন স্থানীয় দোকানদার জানান, “প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল, কিন্তু এখন সবাই পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পরিবেশ রক্ষায় এটি খুবই ভালো উদ্যোগ।” আরেকজন পুণ্যার্থী বলেন, “আগে মেলার চারপাশে প্রচুর ময়লা পড়ে থাকত। এখন ডাস্টবিনের ব্যবস্থায় পরিবেশ অনেক পরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।”
এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং গঙ্গাসাগর মেলার মতো বিশাল আয়োজনকে সম্পূর্ণ পরিবেশ-বান্ধব করে তোলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই প্রকল্পের উপর নজরদারি করছেন এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় রেখে কাজ করছেন। মেলার প্রতিটি কোণায় স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে যাতে কোনো সমস্যা না হয়।

এই পরিবেশ-সচেতন উদ্যোগ ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য বড় মেলা এবং উৎসবের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। মেলা পরিচালনায় পরিবেশের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলে শুধু স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রই রক্ষা পাবে না, বরং এই উদ্যোগ ভারতের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এইবারের গঙ্গাসাগর মেলা প্রকৃত অর্থে একটি ‘গ্রিন ক্লিন’ উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এরকম উদ্যোগ আমাদের প্রতিদিনের জীবনে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ সফল হলে এটি ভারতের পরিবেশ-বান্ধব ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হয়ে উঠবে।