Immediately the relationship ended, disoriented by the conflict : ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ইতিহাস মানেই কখনও উত্তাপ, কখনও সংঘাত, আর কখনও কূটনৈতিক ঠাণ্ডা লড়াই। তবে এবার পরিস্থিতি আরও গুরুতর রূপ নিয়েছে কাশ্মীরে ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পর, যার জেরে পাকিস্তান ভারতীয় পণ্যের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। আর তারই সরাসরি ফলশ্রুতি পড়েছে পাকিস্তানের ওষুধ শিল্পে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, দেশের বহু হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে ওষুধের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান, “আমাদের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ফার্মাসিউটিক্যাল কাঁচামাল সরবরাহ হত ভারত থেকে। এখন এই যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে ওষুধের মজুত দ্রুত কমে আসছে।” পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তান সরকার আপৎকালীন বৈঠক ডাকছে, চিন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে বিকল্প সরবরাহের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু এই পথে খরচ বাড়বে কয়েকগুণ, যা ইতিমধ্যেই ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতির উপর প্রবল চাপ ফেলবে। ইসলামাবাদের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডঃ সাহিল ওয়াসিম বলেন, “বিকল্প বাজার থেকে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, ফলে সাধারণ মানুষের হাতে জীবনদায়ী ওষুধের দাম নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।” এই সংকটের আঁচ ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
করাচির এক ফার্মাসিস্ট বলছেন, “পৃথিবীতে সবকিছুতেই রাজনীতি হতে পারে, কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ওষুধের যোগানে রাজনীতি দেশের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সমান।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত কোনও সমাধান না হয়, তাহলে পাকিস্তানে শুধু জীবনদায়ী ওষুধ নয়, প্যারাসিটামল, ইনসুলিনের মতো সাধারণ জরুরি ওষুধেরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরেও এমন পরিস্থিতির ঝলক দেখা গিয়েছিল, তবে তখন দ্রুত কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল। কিন্তু এবার ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এতটাই কঠিন অবস্থানে রয়েছে যে, অচিরেই কোনও সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামিদ মির জানিয়েছেন, “এই বাণিজ্য বন্ধ শুধু স্বাস্থ্য খাতে নয়, কৃষি, টেক্সটাইল এবং অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে।
সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যদি পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্যসামগ্রী, সার, এবং শিল্পজাত পণ্য সরবরাহেও সঙ্কট তীব্র আকার নিতে পারে। পাকিস্তানের কৃষকরা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা করছেন, ভারতীয় সার এবং বীজের বিকল্প না পেলে আগামী মৌসুমে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। মোটের উপর, কাশ্মীর নিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলাফল এখন সাধারণ পাকিস্তানি নাগরিকদের জীবন এবং স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ইসলামাবাদের সাধারণ বাসিন্দা রাহিলা বেগম বলেন, “আমাদের বাচ্চাদের জন্য ইনহেলার চাই, আমাদের মায়েদের জন্য ডায়াবেটিসের ওষুধ চাই, আমরা চাই রাজনীতির খেলার বল না হয়ে থাকতে।” ভারতীয় কূটনৈতিক মহল থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, পাকিস্তান যদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে না হাঁটে, তাহলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের এই বন্ধুত্বের সেতু ভেঙে পড়বে, এবং তার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া পড়বে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর। শেষমেশ বলা চলে, মানবিকতার স্বার্থে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার তাগিদে, দুই দেশের নেতৃত্বের উচিত অবিলম্বে এই সমস্যার একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করা, নচেৎ ওষুধ সংকটের মতো মানবিক বিপর্যয় পাকিস্তানের ভিত আরও দুর্বল করে দেবে।