IB officer from Purulia killed in militant attack in Kashmir:-কাশ্মীর মানেই বরফে মোড়া স্বর্গ, পাহাড় নদীর অপূর্ব মিলন, অথচ সেই স্বর্গেই মঙ্গলবার বিকেলে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে প্রাণ হারালেন দেশের ২৬ জন বীর সন্তান, তাঁদেরই একজন, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার ঝালদার বাসিন্দা মনীশ রঞ্জন মিশ্র, যিনি ছিলেন গোয়েন্দা ব্যুরো বা আইবির এক সেকশন অফিসার, কর্মসূত্রে হায়দ্রাবাদে থাকতেন তিনি, পরিবার নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন, পহেলগামে একটি পর্যটনবাসে ছিলেন, আর সেখানেই আচমকা শুরু হয় গুলির লড়াই, একদল জঙ্গি চুপিসারে এসে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে, সেনা ও পর্যটকদের নিশানা করেই চলে হামলা, সেই গুলিতেই প্রাণ হারান মনীশ, যদিও আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান প্রাণে বেঁচে যান, এই দুঃসংবাদ পেয়ে মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় ঝালদা পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে মনীশের পৈতৃক বাড়ি, সবার চোখে জল, কিন্তু মুখে গর্ব—এই ছেলেটাই তো দেশের জন্য জীবন দিলো, প্রতিবেশীরা জানালেন, মনীশ ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল, পড়াশোনায় মেধাবী, স্কুলের শিক্ষকরা বলতেন,

“ওর মধ্যে একটা আলাদা ধরণের পরিশ্রম আর দেশপ্রেম ছিল, ছোটবেলা থেকেই পুলিশ হতে চাইত”, বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, আর মা গৃহবধূ, ছেলের এই সাফল্য তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করেছিল, কিন্তু আজ সেই মুখে আর হাসি নেই, কেবল কান্না আর কাঁপা গলায় তাঁরা বললেন, “আমরা গর্বিত, কিন্তু ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছি”, ঝালদা শহরে শোকপ্রকাশ করতে আসেন শতাধিক মানুষ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা, প্রশাসনের কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় মনীশের ছবিতে, রাষ্ট্রপতির তরফ থেকেও টেলিগ্রাম আসে পরিবারে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, শহীদ মনীশের পরিবারের পাশে সর্বদা কেন্দ্র থাকবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বিশেষ সহানুভূতির আশ্বাস দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে লেখেন,
“পুরুলিয়ার বীর সন্তান মনীশ রঞ্জনের আত্মত্যাগ আমাদের মাথা উঁচু করে, তাঁর পরিবারকে আমরা সবরকমভাবে সাহায্য করব”, এই হামলার পরে আবারও দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে কাশ্মীর অঞ্চলে পর্যটকদের নিরাপত্তা, আইবি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তানপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা, সেনা বাহিনী ইতিমধ্যে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে, অভিযানে নামানো হয়েছে স্পেশাল ফোর্স, অন্যদিকে, মনীশের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, “ও খুবই সৎ এবং সাহসী অফিসার ছিল, দেশে যখন সন্ত্রাস দমন নিয়ে বড় কোনও পরিকল্পনা হত, মনীশই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করত”, মনীশের মৃত্যু শুধু এক পরিবারের নয়, গোটা পুরুলিয়া তথা বাংলার এক অপূরণীয় ক্ষতি, এই ঘটনায় সারা দেশে শোকের ছায়া, কিন্তু তার সঙ্গেই জেগে উঠেছে প্রতিশোধের দাবিও—সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল, সকলেই চাইছে দোষীদের কঠোরতম শাস্তি, অনেকেই বলছেন,

“এই ধরনের হামলা বন্ধ করতে হলে কূটনৈতিকভাবে ও সেনার মাধ্যমে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে”, মনীশের মৃত্যুর পর অনেক তরুণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছবি পোস্ট করে লিখছেন, “আপনি গর্ব, আপনি অনুপ্রেরণা”, ঝালদার স্থানীয় স্কুলে এক শোকসভার আয়োজন করা হয়, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানায়, স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনীশের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হবে এবং একটি স্কুলে তাঁর নামে বৃত্তি চালু করা হবে, যাতে ভবিষ্যতের মনীশরা উঠে আসতে পারে, এই ঘটনার অভিঘাতে স্পষ্ট—দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা দরকার, বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, পরিবার জানিয়েছে মনীশের একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন, এই শোকের মধ্যেও মনীশের স্ত্রী বললেন, “আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, আমি চাই ওর স্বপ্ন যেন বাঁচে, ওর মতো সাহসী ছেলেরা যেন আরও উঠে আসে”, আজ মনীশ আর নেই, কিন্তু তাঁর সাহস, দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগের গল্প ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার প্রতিটি কোণে, প্রতিটি বাচ্চার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, “আমি কি মনীশের মতো হতে পারি?”, আর এই প্রশ্নই বদলে দিতে পারে আগামী প্রজন্মের মানসিকতা, এই শহীদ আইবি অফিসার শুধু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি, তিনি একজন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন, যিনি শিখিয়ে গেলেন—দেশপ্রেম মানে শুধু শব্দ নয়, তা কখনও কখনও জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হয়।