‘I could have cut Pakistan into four pieces’, Rajnath threatens:-শুক্রবার সকাল, মুম্বাই বন্দরের নৌঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে বিরাটাকার যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত। তার বুক চিরে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে, আর সেই আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যখন বললেন—“পাকিস্তানকে চার টুকরো করে দিতে পারতাম”— তখন শুধু যুদ্ধজাহাজের ডেক নয়, গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, এমনকি সাধারণ মানুষও চমকে উঠল। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য নতুন করে উসকে দিয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর তার ছায়া পড়েছে গরম হয়ে ওঠা রাজনৈতিক আলোচনায়ও।রাজনাথ সিং তাঁর বক্তব্যে সরাসরি ১৯৭১ সালের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, “যদি আমাদের নৌসেনা সেই অভিযানে সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করত, তাহলে পাকিস্তান আজ চার ভাগে বিভক্ত হয়ে যেত। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী স্থল, জল, বায়ু—তিন বাহিনীর সমন্বয়ে যে দক্ষতা দেখিয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। আর নৌসেনার নিঃশব্দ অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ফলে পাকিস্তানের নৌবাহিনী সাহসই করতে পারেনি সমুদ্রে নামার।” তিনি আরও বলেন, “আজকের ভারত শুধু আত্মরক্ষায় নয়, আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতেও সমানভাবে সক্ষম। আমরা শান্তি চাই, তবে যদি কেউ আমাদের চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তাকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।”

রাজনাথের এই বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়ার ঝড় বইছে। একদিকে সাধারণ মানুষ ও জাতীয়তাবাদী শিবির উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। বিজেপির এক নেতা বিজয় মিশ্র বলেন, “রাজনাথজির এই বক্তব্যে দেশের নিরাপত্তা নীতি ও শক্তির প্রতিফলন ঘটেছে। পাকিস্তানকে বারবার মনে রাখতে হবে, ভারত আগের ভারত নয়।” কিন্তু কংগ্রেসের নেতা শশী থারুর বলেন, “এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উচিত সংযমের ভাষা ব্যবহার করা।”আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম মুখার্জি মনে করেন, “রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি কেবল প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়, আক্রমণাত্মক কৌশলেও প্রস্তুত। তবে এই ধরনের মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল।” তিনি বলেন, “এখন ভারতকে সাবধানে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যাতে শক্তি প্রদর্শন ও শান্তির বার্তা—দুটোই ঠিকভাবে পৌঁছে যায়।”
পাকিস্তানের তরফ থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আঞ্চলিক শান্তির পরিপন্থী। পাকিস্তান কখনো ভারতীয় আগ্রাসন মেনে নেবে না, এবং আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এই বিতর্কের আঁচ পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। মুম্বইয়ের এক যুবক রাহুল শর্মা বলছেন, “আমরা চাই পাকিস্তানের থেকে আমাদের দেশে আর কোনো সন্ত্রাস না আসুক। যদি প্রয়োজনে চার ভাগ করা লাগে, করুক, আমাদের সেনার উপর বিশ্বাস আছে।” তবে কলকাতার এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিতালি দত্ত বলেন, “এভাবে যুদ্ধের কথা বলা ঠিক নয়। আমাদের উচিত শান্তি রক্ষা করা, যুদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, কিন্তু সেই সময়ের বাস্তবতা আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়।”এই ধরনের মন্তব্যের ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি যে আগ্রাসী হয়ে উঠছে, তা স্পষ্ট, যা নির্বাচনের আবহে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে।

অন্যদিকে, ভারতীয় নৌসেনার আধুনিকীকরণ ও শক্তি প্রদর্শনের বার্তা যে এই বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তা স্পষ্ট। আইএনএস বিক্রান্তের ডেকে দাঁড়িয়ে রাজনাথ সিং-এর ভাষণ যেন একপ্রকার প্রতীকী বার্তা—“আমরা তৈরি আছি, কেউ আমাদের চোখ রাঙিয়ে কিছু করতে পারবে না।” তবে এই শক্তির প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের মেলবন্ধন কোথাও কোথাও আশঙ্কার সুরও তুলেছে। বিশেষ করে চিন ও পাকিস্তান—এই দুই প্রতিবেশীর সাথে ভারতের সীমান্ত পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত।সবশেষে বলা যায়, রাজনাথ সিংয়ের হুঙ্কার ভারতীয় প্রতিরক্ষার এক আত্মবিশ্বাসী বার্তা হলেও, এর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া গেলেও, এই উত্তেজনাকে সামলানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ‘পাকিস্তানকে চার টুকরো করে দিতে পারতাম’— এই বাক্য শুধু এক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্য নয়, এক রণহুংকার, যা ভারতের নিরাপত্তা নীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি, এবং জনগণের আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তবে এই উত্তাপ কতদূর গিয়ে গড়াবে, তা সময়ই বলবে।