Hydrogen powered will run us in India : স্টিম ইঞ্জিন থেকে ডিজেল তারপর বিদ্যুৎ—সময়ের সঙ্গে বিবর্তন ঘটেছে রেলের এই মুহূর্তে আরও এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভারতীয় রেল এবার হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন ছুটবে ভারতে শোনা যাচ্ছে চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যেই এই হাইড্রোজেন ট্রেন ভারতে আসবে বছর শেষ হওয়ার আগে সব মিলিয়ে ৩৫টি হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় রেলের তামিলনাড়ুর Integral Coach Factory-তে তৈরি হচ্ছে এই বিশেষ ট্রেন ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলবে এই ট্রেনের মূল বিশেষত্ব হচ্ছে একে জ্বালানির যে প্রকোষ্ঠ রয়েছে সেখানে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণে বিদ্যুৎ তৈরি করা হবে আর সেই বিদ্যুতেই চলবে এই ট্রেন ফলে কার্বন নির্গমন একেবারেই থাকবে না এই ট্রেন থেকে নির্গত হবে শুধুই জলীয় বাষ্প অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব এই ট্রেন বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ সচেতন রেল প্রকল্প হিসেবে
গণ্য হবে ভারত ইতিমধ্যেই পরিবেশ বান্ধব শক্তির দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং এই প্রকল্প সেই দিক থেকে বিশাল বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ হর্সপাওয়ারের হাইড্রোজেন চালিত ইঞ্জিন তৈরি করেছে সেখানে ভারত ১২০০ হর্সপাওয়ারের শক্তিশালী ইঞ্জিন তৈরি করছে প্রথম দফায় হরিয়ানার জিন্দ থেকে সোনিপত ৮৯ কিলোমিটার সেকশনে এই ট্রেন চলবে পরে তা বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রসারিত হবে এক একটি হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন তৈরি করতে আনুমানিক ৮০ কোটি টাকা খরচ হবে আর সেই ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নত করতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগের প্রয়োজন নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জার্মানির TUV-SUD সংস্থাকে এই প্রকল্পের জন্য ভারত সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মোট ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যা ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করা হবে প্রথম পর্যায়ে ৩৫টি ট্রেন নামানো হবে পরবর্তী ধাপে আরও ট্রেন আসবে পরিবেশ বান্ধব এই ট্রেন ভারতীয় রেলের খোলনলচে বদলে দিতে পারে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনের ফলে একদিকে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমবে তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণ বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত ট্রেনগুলির তুলনায় হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন অনেক বেশি কার্যকরী হবে বলে মনে করা হচ্ছে কারণ এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন নির্গমন একেবারেই থাকবে না পাশাপাশি যেহেতু এই ট্রেন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে তাই এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও তুলনামূলকভাবে কমবে ভারত ইতিমধ্যেই পরিবেশ বান্ধব শক্তির দিক থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের পর এবার হাইড্রোজেন শক্তির ব্যবহারে আরও একধাপ এগিয়ে গেল দেশ এছাড়া এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার ফলে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতীয় রেল পরিবেশ বান্ধব শক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই প্রকল্প তারই অন্যতম বড় প্রমাণ হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন চালু হলে ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির দেশ হিসেবে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারে অগ্রণী
ভূমিকা পালন করবে হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনের সুবিধা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভারতীয় রেলের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন “এই ট্রেন শুধু পরিবেশ বান্ধব নয় এটি ভারতীয় রেলের জন্যও একটি গেম চেঞ্জার হতে চলেছে এর ফলে জ্বালানির খরচ অনেকটাই কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদী দিক থেকে এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে” এই ট্রেন চালুর ফলে সাধারণ যাত্রীদেরও বড় সুবিধা হবে কারণ এটি আরও দ্রুত গতিতে চলবে এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে পরিচালিত হবে এমনকি ভবিষ্যতে যাত্রীভাড়া কমানোর ক্ষেত্রেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে তবে এই ট্রেন চালানোর জন্য ভারতীয় রেলের পরিকাঠামোতেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে কারণ হাইড্রোজেন জ্বালানির সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের জন্য বিশেষ ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োজন যা ধাপে ধাপে তৈরি করা হবে ভারতের পরিবেশবিদদের একাংশ মনে করছেন এই পদক্ষেপ ভারতের পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে কারণ পরিবহন খাতে কার্বন নিঃসরণ কমানো অত্যন্ত জরুরি হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন চালু হলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ধীরে ধীরে ডিজেল ট্রেন বন্ধ করে এই প্রযুক্তির ট্রেন চালানো সম্ভব হবে ভারত ইতিমধ্যেই জার্মানি ফ্রান্স এবং চিনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে হাইড্রোজেন প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার জন্য ফলে ভবিষ্যতে ভারতে তৈরি হাইড্রোজেন ট্রেন বিশ্ব বাজারেও রপ্তানি করা সম্ভব হতে পারে ভারতের রেলমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতীয় রেল সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব রেল ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন সেই দিক থেকে একটি বড় ধাপ পরিবেশ বান্ধব এই প্রকল্প শুধুমাত্র ভারতীয় রেলের নয় গোটা দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্রযুক্তি আরও উন্নত করা হবে এবং ভারত এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি হয়ে উঠবে