Hundreds of Indians stranded in China on Manas Yatra : কৈলাস-মানস সরোবর হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। প্রতিবছর হাজার হাজার ভারতীয় ভক্ত এই তীর্থযাত্রায় অংশ নিতে চেয়ে থাকেন। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকেই এই যাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষার পর সম্প্রতি ভারত-চিন সম্পর্কের খানিকটা উন্নতি ঘটায় ফের আলোচনার মাধ্যমে চালু করা হয় এই ঐতিহ্যবাহী যাত্রা।
ফলত, এ বছর শুরু থেকেই ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সিকিম ও উত্তরাখণ্ডের সরকারি পথ ছাড়াও বহু মানুষ বেসরকারি ট্রাভেল সংস্থার মাধ্যমে নেপালের রুটে মানস সরোবর যাত্রায় যোগ দেন। কিন্তু নেপালের হঠাৎ অশান্ত পরিস্থিতি সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল।
কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে গেছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তত ৪০০ ভারতীয় কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে আটকে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে বৃদ্ধ, আবার কেউ কেউ শারীরিকভাবে ক্লান্ত। শুধু বিমানবন্দর নয়, নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ছোট গ্রামগুলোতেও আটকে রয়েছেন প্রায় দু’হাজার ভারতীয় পুণ্যার্থী। বিশেষ করে ড্রাচেন গ্রামে থাকার জায়গার সীমাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
খাদ্য, পানীয় জল ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন সংকটজনক হয়ে উঠছে। স্থানীয় অশান্তির কারণে নিরাপত্তা নিয়েও ভক্তরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের একমাত্র ভরসা এখন ভারতের সরকারি হস্তক্ষেপ।

পরিস্থিতি আঁচ করেই কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফেরাতে বিমান পাঠানো হবে। বেজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসও নেপালের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে ভক্তদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা চলছে। সরকার বলেছে, “মানবিক দিক বিবেচনা করে এক মুহূর্ত দেরি না করে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।”
যাত্রায় অংশ নেওয়া বহু ভারতীয় পরিবারের সদস্যরা এখন দেশে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। কলকাতার বাগুইআটির বাসিন্দা এক ভক্তের ভাই বলেন, “আমার দিদি মানস যাত্রায় গিয়েছিলেন। ফোনে শেষ কথা হয়েছিল দু’দিন আগে। তারপর থেকে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। সরকারের ওপরই এখন ভরসা।”
ড্রাচেনে আটকে থাকা এক যাত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমরা প্রচণ্ড সমস্যায় রয়েছি। আশেপাশে থাকার মতো জায়গা নেই। ক্লান্ত মানুষগুলো কোথায় বসবে, কোথায় ঘুমাবে—তা নিয়েই চিন্তা। খাবার আর ওষুধও কমে আসছে।”
নেপালের অশান্তি কেবল রাজনৈতিক নয়, তা সরাসরি হাজারো তীর্থযাত্রীর জীবনকেও প্রভাবিত করছে। এই যাত্রা অনেকের কাছে শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং এক জীবনের সাধনার প্রতিফলন। অথচ সেই আধ্যাত্মিক যাত্রাই আজ পরিণত হয়েছে চরম ভোগান্তি ও উৎকণ্ঠার ঘটনায়।
ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জও বটে। একদিকে কূটনৈতিকভাবে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করে বহু কষ্টে পুনরায় চালু করা হয়েছে যাত্রা, অন্যদিকে নেপালের অস্থিরতা ভারতের ভাবমূর্তিকে আঘাত করছে। ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাই সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য বলছে, প্রতিবছর গড়ে কয়েক হাজার ভারতীয় মানস যাত্রায় অংশ নেন। এ বছরও কয়েক হাজার ভক্ত নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’হাজার মানুষ সরাসরি সংকটে রয়েছেন। এ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে কূটনৈতিক দিক থেকেও তা জটিল হতে পারে।
/anm-bengali/media/media_files/2025/09/09/2025-09-08t132031z-86579953-rc2nngatfrpx-rtrmadp-3-nepal-protests-2025-09-09-16-53-37.jpg)
বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আটকে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য শীঘ্রই বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত নেপালের রুটে নতুন যাত্রা আপাতত স্থগিত থাকতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নেপালের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সমন্বয় আরও জোরদার করতে হবে।
মানুষের আশা—সরকারি উদ্যোগে দ্রুত এই বিপদ কেটে যাবে। তবে এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জন্যও বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে, যেখানে আধ্যাত্মিক যাত্রার সঙ্গে যুক্ত হতে হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরি।
কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা ধর্মীয় ভক্তি ও বিশ্বাসের প্রতীক। কিন্তু নেপালের অশান্ত পরিস্থিতি সেই বিশ্বাসের পথে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত শত ভারতীয় আজ বিদেশ মাটিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদের দেশে ফেরাতে ভারতের সরকারি প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখন সবার প্রার্থনা—যেন দ্রুত নিরাপদে দেশে ফিরতে পারেন আটকে পড়া প্রতিটি যাত্রী।