Huge amount of ammonia nitrate recovered in Rampurhat :-বীরভূমের রামপুরহাটে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হায়দ্রাবাদ থেকে ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় রামপুরহাটে ১৬ হাজার কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বোঝাই একটি লরি আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছে এই বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পরিবহনের কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না, এমনকি কোনো ব্যাচ নম্বরও পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই এত বড় পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ধরা পড়ায় প্রশ্ন উঠছে, এটি আদৌ বৈধভাবে পরিবাহিত হচ্ছিল নাকি অন্য কোনো অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লরিটি হায়দ্রাবাদ থেকে রওনা হয়েছিল এবং গন্তব্য ছিল ঝাড়খণ্ড। তবে ঠিক কোথায় এবং কার কাছে এই বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল, সে বিষয়ে ধৃতরা কোনো স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। পুলিশের সন্দেহ, এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতে পারত। কারণ, এর আগে বিভিন্ন জায়গায় এই রাসায়নিকের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানোর ঘটনা সামনে এসেছে।

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মূলত কৃষিক্ষেত্রে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি রাসায়নিক, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তীব্র বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। ২০২০ সালে লেবাননের বৈরুতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণ এই রাসায়নিকের কারণেই হয়েছিল, যেখানে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়ে শহরের একটি বড় অংশ ধ্বংস করে দিয়েছিল। তাই, ১৬ হাজার কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ধরা পড়ার ঘটনা প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
রামপুরহাট থানার এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট অনুমতি লাগে। ধৃতরা কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি, ফলে সন্দেহ আরও বেড়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই তাদের জেরা শুরু করেছি এবং জানার চেষ্টা করছি, কার নির্দেশে এই বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পরিবহন করা হচ্ছিল।”
ধৃতদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ, তবে জানা গেছে, তারা সবাই লরির সঙ্গে যুক্ত কর্মী। পুলিশ ইতিমধ্যে তাদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তদন্ত চালাচ্ছে, এই চক্রের পেছনে কারা রয়েছে তা জানার জন্য। পাশাপাশি, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কোথা থেকে কেনা হয়েছিল এবং কোথায় সরবরাহ করা হচ্ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রামপুরহাট শহরের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, “এতো বিপজ্জনক জিনিস আমাদের শহরের মধ্যে দিয়ে পাচার হচ্ছিল, অথচ আমরা কিছুই জানতাম না। পুলিশ সময়মতো ধরতে পেরেছে, তাই বড় কোনো বিপদ এড়ানো গেছে।”
এই ঘটনার পর প্রশাসন আরও কড়া নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করছে। বড় রাসায়নিক চালান পরিবহনের ক্ষেত্রে নথি যাচাই করা হবে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলেই তদন্ত শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় রামপুরহাটকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনার কথাও ভাবছে প্রশাসন।
এই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কোথা থেকে এল, কারা এর পেছনে রয়েছে, এবং কী উদ্দেশ্যে এটি পরিবহন করা হচ্ছিল, তা তদন্ত সাপেক্ষ। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের সময়মতো পদক্ষেপের ফলে বড় কোনো বিপর্যয় এড়ানো গেছে। এখন দেখার, তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয় এবং কারা এই চক্রের আসল চালক, তা সামনে আসে কি না।