Heavy rains lashed several districts of South Bengal: দক্ষিণবঙ্গের আকাশ যেন আজ একেবারে ঢেকে গেছে মেঘের চাদরে, আর সেই মেঘ থেকে অনবরত ঝরে পড়ছে অঝোর বৃষ্টি। ২৯ মে সকাল থেকেই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় জেলাগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, আর দুপুর গড়াতেই তার দাপট আরও বাড়তে থাকে। বিকেলের পর থেকে রাতের মধ্যে দফায় দফায় প্রবল বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া পুরো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি উত্তর দিকে এগিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, আর আবহাওয়াবিদদের মতে, আগামী ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই সিস্টেমটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে দীঘা, শংকরপুর, মান্দারমনি, তাজপুর, হেনরিজ আইল্যান্ডের মতো উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে, যেখানে সমুদ্রের ঢেউ ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হচ্ছে, আর মৎস্যজীবীদের জন্য ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশিকা। দীঘার এক মৎস্যজীবী রমেন মাইতি বললেন, “ভোরবেলা সমুদ্রের দিকে যেতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ঢেউয়ের শব্দ আর বাতাসের গর্জনে ভয় পেয়ে ফিরে এসেছি। এখন তো মাছ ধরতে নামা মানেই জীবনের ঝুঁকি।” শুধু উপকূল নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান – সব জেলাতেই বৃষ্টির দাপট বাড়ছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে, কারণ এই জেলাগুলোতে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হতে পারে, যা অতি ভারী বর্ষণের শামিল। কলকাতায় আজ সারাদিনই বৃষ্টি থাকবে, সঙ্গে ৩০-৪০ কিমি বেগের দমকা হাওয়া।
শহরের নিচু এলাকা যেমন বেহালা, টালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাস, ক্যানাল রোড – সব জায়গায় জল জমতে শুরু করেছে, আর বৃষ্টি চলতে থাকলে আগামীকাল সকাল নাগাদ জলাবদ্ধতা আরও বাড়তে পারে। মেট্রো রেলও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু রুটে সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে, আর প্রয়োজনে ট্রেনের গতিবেগ কমানো হতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী সৌমিক দাস জানিয়েছেন, “এই নিম্নচাপের প্রভাবে আজ থেকে আগামী ৪৮ ঘন্টা দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টিপাত ক্রমশ বাড়বে। শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের সাতটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে, আর বাকি জেলাগুলোতেও ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে। নদীর জলস্তরও বাড়তে শুরু করেছে, ফলে গঙ্গা, ভাগীরথী, দামোদর, দ্বারকেশ্বরের পাড়ের গ্রামগুলোতে প্লাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।” বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, এগরা, নন্দকুমার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং, কুলতলিতে ইতিমধ্যেই নদীর জল পাড় ছুঁতে শুরু করেছে। ক্যানিংয়ের স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বিবি বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়িঘর জলমগ্ন হয়ে যায়, এই বৃষ্টি যদি আরও দু-তিন দিন চলে, তাহলে খুবই বিপদ হবে।” কৃষকেরাও চিন্তায় – কারণ এখন আমন ধান রোপণের সময়, আর এই বৃষ্টিতে জমির জল নিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। হাওড়ার এক কৃষক গোপাল সাহা জানালেন, “বৃষ্টি তো ভালো, কিন্তু এত বেশি বৃষ্টি হলে মাঠে জল থেমে যাবে, ধানের চারা পচে যাবে। আবার যদি বেশি বাতাস হয়, তাহলে গাছ ভেঙেও পড়তে পারে।”

আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, বৃষ্টি ও বাতাসের তাণ্ডবের ফলে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা ও আশেপাশের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর এসেছে। বজ্রবিদ্যুতের সতর্কতাও রয়েছে, ফলে খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে না থাকার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৩১ মে পর্যন্ত, আর বিপদ এড়াতে স্কুল-কলেজগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তৈরি রয়েছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পাম্পিং স্টেশনগুলোর মাধ্যমে জল বের করার চেষ্টা হবে, তবে খুব বেশি বৃষ্টি হলে কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হবে।” সামনের কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য বেশ কঠিন হতে চলেছে। তবে এই সময় একটু ধৈর্য ধরতে হবে, প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজনে ১০৭০ বা জেলা কন্ট্রোল রুমের নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। এই বৃষ্টি কখনও কৃষকের জন্য আশীর্বাদ, আবার কখনও দুর্যোগ – তবে এবার যে দিকেই তাকানো যায়, শুধুই ধূসর মেঘ আর অবিরাম বৃষ্টি, আর তার সঙ্গে মানুষের উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের এক মিলিত গল্প।