Heads of two bodies stolen from cemetery, recovered in Nanur:বীরভূমের নানুর থানার অন্তর্গত থুপসারা গ্রামে ঘটল এক অবিশ্বাস্য আর গা শিউরে ওঠা ঘটনা, যা কেবল ওই গ্রাম নয়, গোটা এলাকা জুড়েই চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এমন একটি ঘটনা, যা শোনা মাত্রই সাধারণ মানুষের মন আতঙ্ক আর কৌতূহলে ভরে উঠছে—দুই কবর থেকে চুরি হয়েছে মৃতদেহের মাথা! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন, গ্রামের মানুষজন সকাল সকাল মাঠের ধারে কাজ করতে যাওয়ার সময় দেখতে পান, থুপসারা গ্রামের মুসলিম কবরস্থানে দুটি কবর আংশিকভাবে খোঁড়া, আর কাছে গিয়ে বোঝা যায়, যে দুইজন মানুষকে মাস কয়েক আগে কবর দেওয়া হয়েছিল—তাঁদের মাথা নেই! এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে আতঙ্কে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেননি, তারপর ধীরে ধীরে খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। শোরগোল পড়ে যায় থুপসারায়। পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শুরু করে গ্রামের প্রবীণরাও এসে পৌঁছান ঘটনাস্থলে।
দ্রুত খবর দেওয়া হয় নানুর থানায়, এবং পুলিশ এসে কবরস্থান ঘিরে ফেলে তদন্ত শুরু করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দুটি কবর ছিল মুনাই শেখ ও হারুন শেখ নামক দুই বৃদ্ধ ব্যক্তির, যাঁদের মৃত্যুর পর প্রায় আট মাস আগে তাঁদের ইসলামিক রীতি মেনে দাফন করা হয়েছিল। পরিবার সূত্রে খবর, দুই বৃদ্ধের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছিল, এক জন বার্ধক্যজনিত কারণে এবং অপর জন দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর। এমন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধিস্থ হওয়া মৃতদেহের এমন অমানবিক চেহারায় ফিরে আসার ঘটনা নিয়ে স্বজনদের কান্না থামছে না। মৃতদের পরিবার থেকে একজন, হারুন শেখের ছেলে আনোয়ার শেখ বলেন, “আমরা কখনও ভাবতেও পারিনি, যাদের দাফন করেছি, তাঁদের মাথা কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে। এটা কিসের ইঙ্গিত? কেন এমন হচ্ছে? আমাদের মৃতদেরও কি আর শান্তিতে ঘুমানোর অধিকার নেই?” এলাকাবাসীরা এই ঘটনাকে ঘিরে যেভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, তাতে স্পষ্ট, এটা শুধু এক বা দুইজনের পরিবারের বেদনার বিষয় নয়, বরং পুরো সম্প্রদায়ের সম্মান ও সংস্কৃতির ওপর এক বড় আঘাত। প্রশ্ন উঠছে, কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটাল? কেনই বা কবর খুঁড়ে শুধু মাথাগুলোই নিয়ে যাওয়া হলো? স্থানীয়দের মতে, এই ধরণের মাথা বা হাড় চুরি কালোজাদু, তান্ত্রিক ক্রিয়া অথবা ভিন্নধর্মী অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই হতে পারে। কিছু সূত্র বলছে, পাশ্ববর্তী জেলাগুলিতে অতীতে এরকম দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তান্ত্রিক ক্রিয়ার জন্য মৃতদেহের অঙ্গ চুরির অভিযোগ উঠেছিল।
যদিও পুলিশ এখনই এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না, তবে থানার একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ, এলাকাবাসীর বয়ান এবং মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু কবর খোঁড়ার বিষয়টি রাতের অন্ধকারে ঘটেছে, তাই অভিযুক্তরা খুবই পরিকল্পিতভাবেই কাজ করেছে বলে ধারণা।” এই ঘটনার পরে এলাকায় গুজবও ছড়াতে শুরু করেছে, কেউ বলছেন বিদেশি চক্র জড়িত, কেউ বলছেন স্থানীয় কিছু তান্ত্রিক দলের কাজ, আবার কেউ কেউ পুরনো শত্রুতার জেরে পরিকল্পিত অপমানমূলক ঘটনা বলেও সন্দেহ করছেন।
কিন্তু এত সব গুঞ্জনের মাঝে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে, যদি সত্যি সত্যি কবর থেকে মাথা চুরি হয়, তাহলে পরবর্তীতে কি এমন আরো ঘটনা ঘটবে না? কোথায় নিরাপত্তা? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা তো দূরের কথা, মৃতদেরও কি আর সুরক্ষা নেই? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিকভাবেও একটা বড় ধাক্কা লেগেছে। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এবং সেই কারণেই এলাকার সমস্ত ধর্মীয় গোষ্ঠী ও নেতৃত্ব একসঙ্গে এসে প্রশাসনের কাছে কড়া পদক্ষেপ দাবি করেছেন। থুপসারা গ্রামের ইমাম সাহেব জানান, “মৃতদের সম্মান আমাদের বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটা শুধু চুরি নয়, এটা ধর্মীয় অনুভূতির অপমান। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক।” রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্থানীয় কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট নেতৃত্বের দাবি, এই ধরণের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার পরিচয়। নিরাপত্তার দিক থেকে যে গাফিলতি হয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
তাঁদের কথায়, “নানুরের মতো জায়গায় যেখানে আগে থেকেই অনেক রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে প্রশাসনের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।” তবে অন্যদিকে শাসক দলের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, “ঘটনাটি যেহেতু অপরাধমূলক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্পর্শকাতর, তাই সরকার এবং প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।” বর্তমানে কবরস্থানে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে এবং রাতে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে এই একটি ঘটনার প্রভাব পড়েছে এলাকার সামাজিক, ধর্মীয় ও মনস্তাত্ত্বিক দিকেও। সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্কিত, আর কিছু পরিবার তো সরাসরি দাবি তুলেছেন—তাঁদের প্রিয়জনদের কবর সরিয়ে অন্যত্র করা হোক, যেখানে নিরাপত্তা আরও বেশি। সবমিলিয়ে, এমন এক ঘটনা যা মানুষের মনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। কবরের মতো পবিত্র স্থান যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করবে যে আইন-শৃঙ্খলা আছে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের থেকে দ্রুত পদক্ষেপ ও কঠোর তদন্তই এলাকাবাসীর দাবি। ‘খবর বাংলা’ এই সংবেদনশীল বিষয়ে আপনাদের সর্বশেষ আপডেট দিয়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটনার উপর কড়া নজর রাখবে।