Hand over terrorist Hafiz Saeed:-পাকিস্তানকে ফের একবার সোজাসাপটা বার্তা দিল ভারত। এবার আর নরম বার্তা নয়, সোজা ভাষায় জানানো হলো—জঙ্গি হাফিজ সৈয়দকে ভারতের হাতে তুলে দিন। কারণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ থেমে নেই, সেটা আপাতত স্থগিত হলেও চূড়ান্তভাবে শেষ হয়নি। এই বার্তা এল কোনও সাধারণ মহল থেকে নয়, এল একদম আন্তর্জাতিক স্তরে—ইজরায়েলে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জেপি সিং-এর মুখে। তাঁর এই বক্তব্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কূটনৈতিক মহলে, আবার জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।সম্প্রতি ইজরায়েলের একটি নামী সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত জেপি সিং জানান, “২৬/১১ মুম্বাই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তাহাউর হোসেন রানাকে সম্প্রতি আমেরিকা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। এবার সময় এসেছে পাকিস্তানের। তাদের উচিত জঙ্গি হাফিজ সৈয়দ, সাজিদ মীর ও জাকী উর রহমান লখভিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার এটাই প্রকৃত সময়।” তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত এই ইস্যুটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

হাফিজ সৈয়দ, জামাত-উদ-দাওয়া সংগঠনের প্রধান, এবং ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মূল চক্রান্তকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন। শুধু ভারত নয়, আমেরিকার এফবিআই পর্যন্ত তাঁকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি বলে ঘোষণা করেছে, এবং তাঁর মাথার দাম পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার। তবুও এত বছর ধরে পাকিস্তানে তাঁকে যথেষ্ট নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও মাঝে মাঝে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করে ‘সাজানো ব্যবস্থা’ দেখায়, তবে তা কখনোই ভারত কিংবা আন্তর্জাতিক মহলকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।রাষ্ট্রদূত জেপি সিং-এর এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে এক গভীর কূটনৈতিক স্ট্র্যাটেজি। আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ভাবমূর্তি আজ অনেক শক্তিশালী, এবং আমেরিকা যেভাবে তাহাউর হোসেন রানাকে হস্তান্তর করেছে, তা এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। রাষ্ট্রদূতের কথায় স্পষ্ট, এবার পালা পাকিস্তানের—যদি তারা সত্যিই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বাস করে। তাঁর মতে, “ভারত কখনও যুদ্ধ চায় না। তবে যখন দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে, তখন ভারত প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানাতে জানে। আর সেই কারণেই অপারেশন ‘সিঁদুর’ আপাতত স্থগিত হলেও তা শেষ নয়।”
এই অপারেশন ‘সিঁদুর’ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। গত কয়েকমাস ধরেই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও গোয়েন্দা গতিবিধি বাড়িয়েছে ভারত। যদিও সরকারিভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অপারেশন সিঁদুর হল একটি সীমান্তপারের কৌশলগত অভিযান যা পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতেই তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রদূতের মুখে এই অপারেশনের পুনরুল্লেখ এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, পাকিস্তান যদি বারংবার ভারতের ধৈর্য পরীক্ষা করে, তাহলে এবার প্রতিক্রিয়াও কঠিন হবে।এই মন্তব্যের পর দেশের রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া তীব্র। প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কর্নেল আর এস এন সিং (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, “যখন রাষ্ট্রদূত এই ধরনের কঠোর বার্তা দেন, তখন বোঝা যায়, সরকারের পক্ষ থেকেও শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান বারবার সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় নীতির মতো ব্যবহার করে চলেছে, এবার সময় এসেছে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাদের নতিস্বীকারের।”

এদিকে মুম্বাই হামলায় পরিবার হারানো অনেকেই এই বার্তায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। মৃত্যুবরণ করা পুলিশ অফিসার অশোক কামতের ছেলে রণজয় কামত বলেন, “আমার বাবা শহিদ হয়েছেন দেশের জন্য, কিন্তু এখনও যারা সেই ঘটনার মূল চক্রান্তকারী, তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। ভারত সরকার যদি এবার সত্যি হাফিজ সৈয়দকে ধরে ফেরত আনার চেষ্টা করে, তাহলে সেটা শহিদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা হবে।”এদিকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই বক্তব্যের সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পাকিস্তানের একাধিক মিডিয়া হাউস রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যকে “আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা” বলে উল্লেখ করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইজরায়েলের মতো দেশ আগেই জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা অত্যন্ত অস্পষ্ট এবং রাজনৈতিক স্বার্থে বারবার তারা জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে।বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই স্পষ্ট বার্তা পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াবে আন্তর্জাতিকভাবে। কারণ তাহাউর হোসেন রানা যেভাবে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেই উদাহরণ তুলে ধরেই ভারত এবার পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে চাইছে। আর যদি পাকিস্তান হাফিজ সৈয়দদের হস্তান্তর না করে, তাহলে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক চাপে আন্তর্জাতিক আর্থিক দাতাদের (যেমন FATF) কাছ থেকে আরও বড় নিষেধাজ্ঞা পেতে পারে ইসলামাবাদ।