Sunday, May 25, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যগুমনামী বাবা আসলেই ছিলেন নেতাজি!

গুমনামী বাবা আসলেই ছিলেন নেতাজি!

Gumnami Baba was really Netaji!:ভারতের ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র থাকে, যাদের নাম উচ্চারণ করলেই মনে হয়, এক রহস্যময় ধোঁয়াশার ভেতর ঢুকে পড়েছি। ‘গুমনামী বাবা’ নামটি ঠিক তেমনই এক চরিত্র, যার জীবন, মৃত্যু, আর সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর পরিচয় আজও এক ধাঁধার মধ্যে আটকে আছে। উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের অযোধ্যা শহরের কাছে ১৯৫৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এক নিভৃত কুটিরে যিনি নীরবে বাস করতেন, যিনি কারও সামনে তেমন আসতেন না, নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখতেন, তাঁকে নিয়েই আজও চলছে তর্ক-বিতর্ক, গল্প, কাহিনি আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জাল। বহু মানুষ মনে করেন, এই গুমনামী বাবাই আসলে ছিলেন ভারতের মহান বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। হ্যাঁ, সেই নেতাজি যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে তোলেন, যিনি ‘তুমি আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাকে স্বাধীনতা দেব’ বলে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেন, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হন বলে সরকারি রিপোর্টে লেখা আছে। কিন্তু সত্যিই কি তিনি মারা গিয়েছিলেন, নাকি নতুন পরিচয়ে ফিরে এসেছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।ফৈজাবাদের গুমনামী বাবার ঘর থেকে ১৯৮৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে যা যা উদ্ধার হয়েছিল, তা নিয়েও কম চমক নেই।

ঘরের কোণে কোণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বহু বই, নথিপত্র, টাইপরাইটার, এমনকি সুভাষচন্দ্র বসুর নামাঙ্কিত কিছু সামগ্রীও। এমনকি তার ব্যবহৃত চশমা, কলম, চিঠিপত্র, আর কিছু ছবিও পাওয়া যায়, যা দেখে অনেকেরই সন্দেহ হয়েছিল—এ কি নিছক কাকতালীয়, নাকি সত্যিই তিনি নেতাজি? ২০১৭ সালে সরকারিভাবে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, ডায়েরি, ব্যক্তিগত নোট পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু তাতেও কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবুও প্রশ্নটা রয়েই গেল—গুমনামী বাবার আড়ালে কি লুকিয়ে ছিলেন সেই মহান বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন?নেতাজি অনুসারী এবং গবেষক ডঃ চন্দ্রচূড় ঘোষ বলেন, “গুমনামী বাবার সঙ্গে নেতাজির মিল এতটাই অবিশ্বাস্য, যা উপেক্ষা করা যায় না। তাঁর হাতের লেখা, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস, এমনকি চিন্তাভাবনার ধরণও অনেকটা নেতাজির মতো।

Z

” অন্যদিকে সরকারি তদন্ত কমিশনের প্রাক্তন সদস্য বিকাশ সেন বলেন, “প্রমাণ ছাড়া কারও পরিচয় প্রমাণ করা যায় না। আমরা যতই অনুমান করি, তাতে ইতিহাস লেখা যায় না। ডিএনএ পরীক্ষা করানো হলে হয়তো কিছুটা আলোকপাত হতো, কিন্তু তা এখনো হয়নি।”এই রহস্যময় ঘটনার প্রভাব কেবল ইতিহাসের পাতায় নয়, সাধারণ মানুষের মনেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। বহু মানুষ মনে করেন, স্বাধীনতার পরে নেতাজি যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্যরকম হতো। কলকাতার বাসিন্দা অরুণাভ দত্ত বলেন, “নেতাজি যদি সত্যিই বেঁচে থাকতেন, তাহলে দেশ আজ অন্য রকম জায়গায় থাকত। আর যদি গুমনামী বাবাই নেতাজি হয়ে থাকেন, তাহলে এটা শুধু একজন মানুষের নয়, গোটা দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।” ফৈজাবাদের স্থানীয় বাসিন্দা মহেশ সিং জানান, “আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, ওই বাবাজি খুব গোপনে থাকতেন, কারও সঙ্গে বেশি কথা বলতেন না। কিন্তু তাঁর ঘর থেকে যে বইপত্র, ছবি আর জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তা দেখে মনে হয়েছিল তিনি খুব বড় কেউ।”এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক মহলেও। নেতাজির পরিবারের একাংশ যেমন সরকারের কাছে নতুন করে ডিএনএ টেস্টের দাবি তুলেছেন, তেমনই অনেকে মনে করেন, এই বিষয়টি বারবার তোলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে সত্যিই যদি প্রমাণ মেলে, তাহলে তা হবে ভারতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments